গতকাল বুধবার দুপুর পর্যন্ত জার্মানিজুড়ে আকাশ ছিল মেঘলা। কোনো কোনো অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের সঙ্গে বজ্রপাতের কথা আবহাওয়া দপ্তর থেকে বলা হয়েছিল। দুপুর পেরিয়ে যেতেই সর্বত্র মেঘমুক্ত আকাশ আর চকচকে সূর্যের দেখা মিলল। বলাই যায়, সূর্যদেবতা জার্মানির দিকে মুখ তুলে হেসেছিল।
স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ছয়টায় স্টুটগার্ট শহরে জার্মানির সঙ্গে হাঙ্গেরির খেলা শুরুর আগেই জার্মানিজুড়ে ফুটবল–ভক্তরা টেলিভিশনের সামনে হাজির হয়েছিলেন। আবহাওয়া ভালো হয়ে যাওয়ার কারণে হাজার হাজার মানুষ পাবলিক অ্যারেনাতে গিয়ে খেলা দেখেছেন।
হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে জার্মানির কোন খেলোয়াড় খেলবেন, সেই বিষয়ে জার্মানি জাতীয় দলের কোচ ইউলিয়ান নাগলসমান জানিয়েছিলেন, খেলা শুরুর আগে তা জানানো হবে। আবার জার্মানির স্বনামধন্য স্পিগেল পত্রিকাটি খেলা শুরুর তিন ঘণ্টা আগে লিখল, ‘জার্মান ফুটবল দলের গোপন অস্ত্র ভুসিয়ালা’, অর্থাৎ দলের ২১ বছর বয়সী দুই খেলোয়াড় জামাল মুসিয়ালা ও ফ্লোরিয়ান ভির্টজ। তাঁরাই স্টুটগার্টে হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে মাঠ কাঁপাবেন। এই দুই খেলোয়াড়ের নামের আদ্যক্ষর নিয়ে লেখা হয়েছে, ‘ভুসিয়ালা’, হয়েছেও তা–ই, হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে খেলাতে এদের নৈপূণ্য ছিল দেখার মতো। প্রথমার্ধে জামাল মুসিয়ালার গোলে এগিয়ে যায় জার্মানি। দ্বিতীয়ার্ধে দ্বিতীয় গোলটি করেন জার্মান ফুটবল দলের অধিনায়ক ইলকায় গুন্দোয়ান।
এই চমৎকার ফুটবলময় আবহাওয়ায় খেলা দেখছিলাম হ্যানোভার শহরের ফাউস্ট সাংস্কৃতিককেন্দ্রে। খেলা শুরুর এক ঘণ্টা আগেই হাজার খানেক মানুষ জড়ো হন। অনেকে জায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়ে খেলা দেখেছেন। খেলা শুরুর আগে থেকেই অনেকে চিৎকার করছিলেন ডয়েচল্যান্ড, ডয়েচল্যান্ড; অর্থাৎ জার্মানি, জার্মানি।
খেলা শুরুর পর উল্লাস আর হুল্লোড় আরও বেড়ে গেল। জার্মানির প্রথম গোল হওয়ার পর অনেকেই শঙ্কিত ছিলেন, এই বুঝি হাঙ্গেরি গোল শোধ দিয়ে দেয়। দ্বিতীয়ার্ধে জার্মান ফুটবল দলের অধিনায়ক ইলকায় গুন্দোয়ানের দ্বিতীয় গোলে আনন্দের বাঁধ ভেঙে যায়। অনেকে বেঞ্চের ওপরে উঠে নাচতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত জার্মানি হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে ২-০ গোলে জিতে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠে যায়।
যে কথা না বললেই নয়, গতকাল হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে জার্মানিকে জিতিয়েছেন দুই বিদেশি বংশোদ্ভূত খেলোয়াড় জামাল মুসিয়ালা ও ইলকায় গুন্দোয়ান। প্রথমজন নাইজেরিয়ান বংশোদ্ভূত, দ্বিতীয়জন তুর্কি বংশোদ্ভূত—উভয়ের জন্মই জার্মানিতে।
জার্মানি ফুটবল দলের বিজয়ের পেছনে এই দুই বিদেশি বংশোদ্ভূত খেলোয়াড়ের অবদান যেন জাতপাত বা বর্ণ নিয়ে যাঁরা জার্মানিতে নোংরা রাজনীতি করেন, তাঁদের গালে বড় ধরনের চপেটাঘাত।