ট্রফি—ফুটবলে যাবতীয় যুদ্ধের শেষ কথা। সুন্দর ফুটবল কিংবা তারকাবহুল দল শেষ পর্যন্ত কোনো কাজে আসে না, যদি ট্রফি জিততে না পারে। একটি দলের সাফল্য এবং ব্যর্থতাকে মাপাও হয় শিরোপা দিয়ে। ট্রফি জয়ের সেই যুদ্ধে ইংল্যান্ডের ক্লাবগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাপট লিভারপুলের। এখন পর্যন্ত ৪৬টি শিরোপা জিতেছে মার্সিসাইড অঞ্চলের ক্লাবটি। এ তালিকায় সেরা পাঁচে অন্য দলগুলোর মধ্যে আছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, আর্সেনাল, ম্যানচেস্টার সিটি ও চেলসি।
২০০৩ সালে রোমান আব্রামোভিচ মালিকানা নিয়ে বদলে দেন চেলসিকে। এরপর থেকে সম্ভাব্য সব প্রধান শিরোপা জিতেছে ক্লাবটি। যেখানে ৫টি লিগ শিরোপার সঙ্গে আছে ২টি চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপাও। তবে চেলসিতে ২০২২ সালে আব্রামোভিচ–যুগের ইতি ঘটেছে। নতুন মালিক টড বোয়েলি দায়িত্ব নেওয়ার পর বেশ ধুঁকছে ক্লাবটি। ঘরোয়া প্রতিযোগিতা কিংবা ইউরোপিয়ান মঞ্চ কোথাও সুবিধা করতে পারছে না এখন পর্যন্ত ২৫টি শিরোপা জেতা ক্লাবটি। কদিন আগে অবশ্য লিগ কাপের ফাইনালে উঠে ২৬তম শিরোপা জেতার কাছাকাছি গিয়েছিল ‘ব্লুজ’রা। ফাইনালে অবশ্য লিভারপুলের কাছে হেরে যায় তারা।
২০০৮ সালের আগপর্যন্ত ইংলিশ ফুটবলে ম্যানচেস্টার সিটি বড় কোনো ক্লাব ছিল না। তবে আরব আমিরাতের শেখ মনসুর বিন জায়েদ আল নাহিয়ান দায়িত্ব নিয়ে বদলে দেন ক্লাবটিকে। এরপর দ্রুতই ইংলিশ ফুটবলের পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয় সিটি। তবে সিটিকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার কাজটি হয়েছে পেপ গার্দিওলার অধীনে।
সাবেক বার্সেলোনা ও বায়ার্ন কোচের অধীনে ইতিহাদের ক্লাবটি অপ্রতিরোধ্য এক শক্তিতে পরিণত হয়। গার্দিওলার হাত ধরে টানা তিনটিসহ মোট ৫টি লিগ শিরোপা জেতে সিটি। জিতেছে কখনো না জেতা চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপাও। তবে গার্দিওলার সিটির শিরোপা জয়ের ধারা এখনো থামেনি। এই সংখ্যা শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে থামে, সেটিই এখন দেখার অপেক্ষা।
আর্সেনালের শিরোপা জয়ের ধারা এগিয়েছে বেশ শ্লথভাবে। ১৯২৯–৩০ মৌসুমে প্রথম শিরোপা জেতা দলটি এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে শিরোপা জিতেছে ৩০টি। ১৩টি লিগের পাশাপাশি ১৪টি এফএ কাপের শিরোপাও জিতেছে তারা। ২০০৩–০৪ মৌসুমে শিরোপা জয়ের পথে কোনো ম্যাচে না হারার কৃতিত্বও দেখিয়েছে ক্লাবটি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে শিরোপা–খরায় ভুগছে আর্সেনাল।
২০০৩–০৪ সালের পর আর লিগ জেতা হয়নি তাদের। নেই কোনো ইউরোপিয়ান শ্রেষ্ঠত্বের ট্রফিও। গত মৌসুমে লম্বা সময় লিগ ট্রফির দৌড়ে টিকে থেকেও শেষ দিকে পথ হারানোয় অধরা থেকে গেছে তা। এবারও আছে শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা। শেষ পর্যন্ত লিভারপুল–ম্যানচেস্টার সিটিকে পেছনে ফেলে আর্সেনাল শিরোপা জিততে পারে কি না, সেটাই দেখার বিষয়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড সব সময় ইংলিশ ফুটবলের অন্যতম পরাশক্তি। ক্লাবটি নিজেদের স্বর্ণসময় পার করেছে কিংবদন্তি কোচ স্যার আলেক্স ফার্গুসনের অধীনে। স্কটিশ এ কোচের অধীনে রেকর্ড ১৩টি লিগ শিরোপা জেতে ইউনাইটেড। পাশাপাশি ‘রেড ডেভিল’দের দুটি চ্যাম্পিয়নস লিগও জেতান ফার্গুসন। ইউনাইটেডের জেতা ৪৩ শিরোপার ৩৮টিই এসেছে ফার্গির সময়ে। ১৯৯৮–৯৯ মৌসুমে তাঁর হাত ধরে ঐতিহাসিক ট্রেবলও জেতে ইউনাইটেড। লম্বা সময় ট্রফি জেতায় শীর্ষে থাকলেও লিভারপুলে ইয়ুর্গেন ক্লপের আগমন ইউনাইটেডকে পেছনে ফেলে দিয়েছে।
১৯৯০–২০২০—৩০ বছর অধরা ছিল লিগ শিরোপা। চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ দুটি শিরোপার মধ্যে ব্যবধান ছিল ১৪ বছর। এমনকি ১৬ বছর পায়নি এফএ কাপের দেখাও। এরপরও শিরোপা জয়ে সবচেয়ে সফল ইংলিশ ক্লাবের নাম লিভারপুল। এখন পর্যন্ত ৪৬টি শিরোপা জিতেছে তারা। যা কিনা দুইয়ে থাকা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইউনাইটেডের জয়ে ৩টি বেশি।
১৯৬০ থেকে ৮০–এর দশকে ছিল লিভারপুলর একচ্ছত্র রাজত্ব। এ সময়ে চারটি ইউরোপিয়ান শিরোপা ও ১৩টি লিগ শিরোপা জেতে ‘অল রেড’রা। ১৯৯০ সালের পর শুরু হয় লিভারপুলের শিরোপা–খরার যুগ। ২০১৫ সালে ক্লপ দায়িত্ব নেওয়ার পর আবার শিরোপা জেতার ধারায় ফেরে লিভারপুল। ক্লপের অধীনে লিভারপুল জিতেছেন সব মিলিয়ে ৮টি শিরোপা। এ মৌসুম শেষে বিদায় নেওয়ার আগে সে সংখ্যা আরও বাড়ানোর সুযোগ আছে এই জার্মান কোচের।