রবার্ট লেভানডফস্কি ও আর্লিং হলান্ড
রবার্ট লেভানডফস্কি ও আর্লিং হলান্ড

ইউরোপে লিগ মাতাচ্ছেন যাঁরা

গোল লাগলে তাঁদের বলুন

গোল লাগবে গোল! লেভা-হলান্ড-নেইমারদের কাছে চাইলেই পাবেন! মৌসুম শুরু না হতেই যে গোলের ফেরিওয়ালা হয়ে উঠেছেন তাঁরা। মাঠে নামছেন, গোল করছেন এবং দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়ছেন—আর কী চাই!

অবশ্য তাঁদের এত এত গোল করতে দেখাটা সমর্থকদের জন্য যেমন আনন্দদায়ক, কারও কারও জন্য কিছুটা আক্ষেপেরও। সামনেই বিশ্বকাপ। তার আগে যাঁর যাঁর দেশের ফরোয়ার্ডদের এমন ছন্দেই তো দেখতে চাইবেন সমর্থকেরা।

রবার্ট লেভানডফস্কি, লিওনেল মেসি, নেইমার, কিলিয়ান এমবাপ্পেদের এমন ফর্ম তাই আশা জাগাচ্ছে সমর্থকদের। আক্ষেপটা হয়তো নরওয়ের সমর্থকদের। একের পর এক রেকর্ড ভেঙেচুরে ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে প্রিমিয়ার লিগে শুরুটা করেছেন আর্লিং হলান্ড। কিন্তু তাঁর জাতীয় দল নরওয়ে যে আসছে বিশ্বকাপেই নেই!

তারকাদের ভিড়ে আলাদা করে নজর কেড়েছেন সুরিনামের শেরাল্ডো বেকার ও অস্ট্রিয়ার মার্কো আর্নাতোভিচরা। ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগে মৌসুমের শুরু থেকে দারুণ ছন্দে থাকা খেলোয়াড়দের গল্প—

রবার্ট লেভানডফস্কি

ক্লাব বদলালেও বদলাননি লেভা

রবার্ট লেভানডফস্কি
বার্সেলোনা, লা লিগা
ম্যাচ: ৬, গোল: ৮
বায়ার্ন মিউনিখে ম্যাচের পর ম্যাচে গোল করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন রবার্ট লেভানডফস্কি। গত মৌসুম শেষ হওয়ার পর তাই হাওয়া বদলানোর রব তুলেছিলেন। সোনার ডিম পাড়া হাঁস লেভাকে ছাড়তে চায়নি জার্মান পরাশক্তিরা। তবে নাছোড় লেভাকে শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারেনি বুন্দেসলিগার সফলতম ক্লাবটি। দলবদলে লেভা চলে যান বার্সেলোনায়।

ব্যক্তিগত অর্জনের হাতছানিও লেভাকে অনুপ্রাণিত করেছিল বার্সায় যোগ দিতে। সম্প্রতি লেভা নিজেই বলেছেন, ‘ব্যালন ডি’অরের সঙ্গে বায়ার্নের চেয়ে বার্সার দূরত্বটা কম।’ আর সেই অল্প দূরত্বটা আরও কমিয়ে আনার কাজটা বেশ ভালোভাবেই করে যাচ্ছেন এই পোলিশ স্ট্রাইকার।

দল বদলালেও পারফরম্যান্সের ধার একটুও কমেনি। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এ মৌসুমে বার্সার হয়ে ৮ ম্যাচে করেছেন ১১ গোল। সঙ্গে করিয়েছেন আরও ২ গোল। লা লিগায় ৬ ম্যাচে ৮ গোল করে পিচিচি ট্রফির দিকে হাতও বাড়িয়ে রেখেছেন। টানা ৫ ম্যাচে গোল করা লেভা মৌসুম শেষে কোথায় গিয়ে থামেন, সেটাই দেখার অপেক্ষা।

আর্লিং হলান্ড

অপ্রতিরোধ্য হলান্ড

আর্লিং হলান্ড
ম্যানচেস্টার সিটি, প্রিমিয়ার লিগ
ম্যাচ: ৭, গোল: ১১
লেভার মতো হলান্ডও ক্লাব বদলেছেন গ্রীষ্মের দলবদলে। বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের এই গোলমেশিন প্রিমিয়ার লিগের কঠিন লড়াইয়ে বিকল হয়ে পড়বেন কি না, সেই প্রশ্নও তুলেছিলেন অনেকে। কোথায় কী! উল্টো প্রিমিয়ার লিগে যেন রেকর্ড ভাঙার কোনো রহস্যযন্ত্র নিয়ে হাজির হয়েছেন নরওয়েজীয় এই তরুণ।

ডি-বক্সের ভেতর হলান্ডের পায়ে বল মানেই আরেকটি নিশ্চিত গোলের সম্ভাবনা। সঙ্গে অবশ্য দুরূহ অনেক সম্ভাবনাকেও গোলে পরিণত করে চমকেও দিচ্ছেন। চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজের সাবেক ক্লাব বরুসিয়ার বিপক্ষে যেমনটা করেছেন। প্রিমিয়ার লিগে এ পর্যন্ত হলান্ডের গোল ৭ ম্যাচে ১১।

সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১০ ম্যাচে ১৪ গোল। প্রথম মাসেই প্রিমিয়ার লিগের সেরা খেলোয়াড়ও হয়েছেন। প্রিমিয়ার লিগ ইতিহাসে শুরুর মাসে কোনো খেলোয়াড় তাঁর চেয়ে বেশি লক্ষ্যভেদ করতে পারেনি (৫ ম্যাচ ৯ গোল)। করেছেন টানা দুই ম্যাচে হ্যাটট্রিকও। মৌসুমের শুরুতে হলান্ডের এই পারফরম্যান্স যদি দিনের পূর্বাভাস হয়, দিনটা কেমন যেতে পারে ভেবে দেখুন না!

নেইমার

বিশ্বকাপের আগে নেইমারের বার্তা

নেইমার

পিএসজি, লিগ ওয়ান

ম্যাচ: ৮, গোল: ৮

দলবদলের রেকর্ড গড়ে পিএসজিতে গিয়েছিলেন নেইমার। স্বপ্ন ছিল প্যারিসে নিজের আলাদা রাজত্ব প্রতিষ্ঠার। নেইমারের সেই স্বপ্ন এখনো পূরণ হয়নি। যে লক্ষ্যে নেইমারকে কাতারি মালিকানাধীন ক্লাবটি কিনে এনেছিল, তা-ও অপূর্ণ থেকে গেছে। কাঙ্ক্ষিত সেই চ্যাম্পিয়ন লিগ শিরোপাটি এখনো দূরের বাতিঘরই রয়ে গেছে।

এর মধ্যে একাধিকবার নেইমারের ক্লাব ছাড়ার গুঞ্জনও শোনা গিয়েছিল। সঙ্গে নিয়মিত বিরতিতে চোটের হানা তো ছিলই। শেষ পর্যন্ত ক্লাব ছাড়তে না হলেও পিএসজির ড্রেসিংরুমে নেইমারের দাপটও কমে এসেছিল। এর মধ্যে লিওনেল মেসি যোগ দিয়ে আবার কেড়ে নিলেন অনেকটা আলো।

এমবাপ্পের সঙ্গে নাকি আবার নেইমারের চোখ-দেখাদেখিও বন্ধ। সবকিছুর জবাব দিতে এ মৌসুমে সবুজ গালিচাকেই বেছে নিলেন নেইমার। সব মিলিয়ে ১১ ম্যাচে ১১ গোল করেছেন। লিগ আ-তে ৮ ম্যাচে ৮ গোল। সতীর্থদের দিয়ে সব প্রতিযোগিতায় করিয়েছেন আরও ৮ বার। বিশ্বকাপে নেইমার এই পারফরম্যান্স ধরে রাখতে পারলে ব্রাজিল সমর্থকদের জন্য তা আনন্দের উপলক্ষই হবে।

শেরাল্ডো বেকার

শেরাল্ডো বেকার—নামটি মনে রাখুন

শেরাল্ডো বেকার
ইউনিয়ন বার্লিন, বুন্দেসলিগা
ম্যাচ: ৭, গোল:৬
শেরাল্ডো বেকারকে চেনার আগে এবারের বুন্দেসলিগার পয়েন্ট টেবিলটা একটু দেখে আসতে পারেন। ৭ ম্যাচ শেষে শীর্ষ চারেই নেই বায়ার্ন মিউনিখ। জার্মানির সফলতম ক্লাবটি ৫ নম্বরে। জার্মানির আরেক পরাশক্তি বরুসিয়া ২ নম্বরে। আর শীর্ষে থাকা দলটির নাম ইউনিয়ন বার্লিন।

২০১৯-২০ মৌসুমে প্রথমবার বুন্দেসলিগায় উঠে আসা ক্লাবটির গল্পও কম রোমাঞ্চকর নয়। সবাইকে চমকে এখন পর্যন্ত লিগের শীর্ষে থাকার কৃতিত্বটা দলের উইংগার শেরাল্ডো বেকারকেই দিতে হবে। লিগে ৭ ম্যাচে ৬ গোল করেছেন, করিয়েছেন আরও ৪টি।

ইউনিয়ন বার্লিনকে শীর্ষে ওঠার পথটা আসলে তিনিই দেখিয়েছেন। বুন্দেসলিগায় ইউনিয়ন বার্লিনের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে জিতেছেন মাসসেরার পুরস্কারও। মৌসুমের বাকি সময়েও বেকারের ছন্দে থাকার ওপর দলটির সাফল্য-ব্যর্থতার অনেকটাই নির্ভর করছে।

মার্কো আর্নাতোভিচ

অপ্রত্যাশিত নায়ক আর্নাতোভিচ

মার্কো আর্নাতোভিচ
বোলোনিয়া, সিরি আ’
ম্যাচ: ৭, গোল: ৬
সিরি আ’তে শীর্ষ চারের লড়াইটা দারুণভাবে জমছে। নাপোলি, আতালান্তা, উদিনেসের দাপটে দুই মিলান ও জুভেন্টাসও কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। সেখানে বোলোনিয়ার অবস্থা আরও শোচনীয়। ১৬ নম্বরে থাকা দলটিকে চোখ রাঙাচ্ছে অবনমনের শঙ্কাও। তবে এ দলেরই ফরোয়ার্ড মার্কো আর্নাতোভিচ অন্যভাবে আলো ছড়াচ্ছেন।

সিরি আ’তে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ গোলদাতা এই অস্ট্রিয়ান তারকা। লিগে এখন পর্যন্ত তাঁর দল গোল করছে ৭টি, যার ৬টিই তাঁর! এমনকি অন্য গোলটিও হয়েছে আর্নাতোভিচের সহায়তায়।

বয়স ৩৩ পেরিয়ে গেলেও নতুন করে আলোচনায় এসেছেন এ মৌসুমের পারফরম্যান্সে। ক্লাবের শীর্ষ লিগে টিকে থাকার ভাগ্যও এখন অনেকটা তাঁর ওপরই ভর করেছে।