কয়েক দিন পরপরই একটা করে নাটক শুরু হয় বাংলাদেশের ফুটবলে। কখনো বিদেশি কোচের টাকা না দিয়ে ফিফার জরিমানার মুখে পড়া, কখনো আর্থিক অসংগতির অভিযোগে ফিফার কারণ দর্শাও নোটিশ পাওয়া।
সর্বশেষ আজ দেশের ফুটবলে খবর ছড়িয়ে পড়ল, ফিফা বাংলাদেশকে যে আর্থিক অনুদান দেয়, সেটা তারা বন্ধ করে দিয়েছে। খবরটা বাংলাদেশের গণমাধ্যমে আসে বাংলাদেশের সাবেক ব্রিটিশ কোচ জেমি ডের সূত্র ধরে। বাফুফের উন্নয়ন বরাদ্দ বন্ধের সঙ্গে তাঁর যে সম্পর্ক রয়েছে।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে সাফ ফুটবলের মাসখানেক আগে জেমিকে হঠাৎ কোচের পদ থেকে সরিয়ে দেয় বাফুফে। ফলে চুক্তির পুরো টাকা দাবি করে ফিফায় নালিশ ঠুকে দেন জেমি। ফিফা বাফুফেকে নির্দেশ দেয়, জেমিকে ৮৬ হাজার ডলার জরিমানা দিতে। এ জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয় ২০২২ সালের ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু বাফুফে সময়মতো সেই টাকা শোধ করেনি। এমনকি বিষয়টা নিয়ে আপিলও করেনি। ফলে ধরেই নেওয়া যায় জেমির ব্যাপারে ফিফার নির্দেশ বাফুফে মেনে নিয়েছে।
কিন্তু হলে কী হবে, সময়মতো বিদেশি কোচদের টাকা পরিশোধ না করার অভ্যাস বজায় রেখেছে বাফুফে। আর এর নেতিবাচক দিক হিসেবে ফিফার আর্থিক নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশ পড়তে যাচ্ছে বলে দাবি করেছেন জেমি। আর সেটিই খবর হয়েছে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে। একটি গণমাধ্যমে খবর হয়, বাংলাদেশের আর্থিক উন্নয়ন বরাদ্দ বন্ধ করে দিয়েছে ফিফা।
আসলে বিষয়টা তা নয় বলে জানিয়েছেন বাফুফের কর্মকর্তারা। আসলে বাফুফে ওই টাকা না দিলে ফিফার নিষেধাজ্ঞায় পড়বে এমনটাই বুঝিয়েছেন বলে জেমির দাবি। ইংল্যান্ড থেকে জেমি বলেন, ‘আমার টাকা বাফুফে এখনো না দেওয়ায় এবং আপিল না করায়, বিষয়টা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত বাফুফের অনুদান বন্ধ রাখবে ফিফা।’
বিষয়টা নিয়ে বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। ফিফা আমাদের কিছু বলেনি।’ তিনি বাফুফে অফিসের খোঁজ নিতে পরামর্শ দেন এই প্রতিবেদককে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাফুফেতে ফিফার কোনো চিঠি আসেনি এ বিষয়ে। বাফুফেকে মৌখিকভাবেও বিষয়টা নিয়ে কিছু বলেনি বলে বাফুফের শীর্ষ কর্মকর্তাদের দাবি।
বাফুফের সিনিয়র সহসভাপতি সালাম মুর্শেদী প্রথম আলোকে বললেন, ‘ফিফা বাংলাদেশের আর্থিক অনুদান বন্ধ করেছে এমন খবর মিথ্যা। এমন কিছু হলে ফিফা বাফুফেকে চিঠি দেবে। সেই চিঠি তারা দেয়নি। তা ছাড়া জেমির টাকা আমাদেরই দিতে হবে। ফিফা কেটে রাখবে না এখনই। আমরা টাকা পাঠানোর প্রক্রিয়ায় আছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি চাওয়া হয়েছে।’
রাতে এ বিষয়ে বাফুফে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ‘ যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি সাপেক্ষে দ্রুত ওই টাকা পরিশোধ করা হবে।’
আর এই অর্থ ব্যাংক থেকে নিয়ে শোধ করা হবে বলে সংবাদমাধ্যমকে জানান বাফুফের শীর্ষ এক কর্মকর্তা। বাফুফের টাকার এতই সংকট যে এক কোটি টাকার জন্য ব্যাংকের দ্বারস্থ হতে যাচ্ছে। অথচ এই বাফুফেই প্রায় ১০০ কোটি টাকায় মেসিদের আর্জেন্টিনাকে ঢাকায় আনতে চায়!
সবচেয়ে বড় কথা, অতীত থেকে শিক্ষা নেয়নি বাফুফে। সাবেক ডাচ কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফকে বেতন সময়মতো না পাওয়া নিয়ে কত নাটক হয়েছে। আরেক ডাচ কোচ রেনে কোস্টারকে তো প্রায় কোটি টাকা জরিমানাই দিতে হয়েছে। সে ধারা আজও অব্যাহত আছে। আর দেশের ফুটবলে কদিন পরপরই বাফুফে খবর হয় এসব নেতিবাচক কারণে!