সেশেলস ফুটবল দল
সেশেলস ফুটবল দল

কেউ কাঠমিস্ত্রি, কেউ দোকানি, কেউ জাহাজ তত্ত্বাবধায়ক

হোয়াটসঅ্যাপে প্রথমবারেই পাওয়া গেল মাইকেল দেলপেচকে। সেশেলস জাতীয় ফুটবল দলের ম্যানেজার কথা বলতে ভালোবাসেন, কিন্তু দলের ভেতরের বেশি কিছু বলতে কিছুটা আপত্তি তাঁর।

তারপরও টুকটাক যা বললেন, তাতে পূর্ব আফ্রিকার মাত্র ৪৫৫ বর্গকিলোমিটারের দেশটি  সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া গেল।

অবশ্য সেশেলস অচেনা কোনো ফুটবল দল নয়। ২০২১ সালের নভেম্বরে শ্রীলঙ্কায় চার জাতি আমন্ত্রণমূলক টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের সঙ্গে পিছিয়ে পড়েও ৮৮ মিনিটে গোল করে ড্র করেছিল তারা। বৃথাই গিয়েছিল ইব্রাহিমের গোলটি। ফেবারিট হয়েও সেই ড্রটা ছিল বাংলাদেশের জন্য হতাশার। তখন বাংলাদেশের ফিফা র‍্যাঙ্কিং ১৮৭, সেশেলসের ১৯৯। সেশেলস এখনো ১৯৯–ই, তবে বাংলাদেশ ৫ ধাপ পিছিয়ে ১৯২।

বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ সামনে রেখে অনুশীলনে সেশেলস ফুটবল দল

সে যা–ই হোক, শ্রীলঙ্কার সেই টুর্নামেন্টে শেষ পর্যন্ত সবাইকে অবাক করে সেশেলস চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ১৯৯ র‍্যাঙ্কিংয়ের দেশ এমন সাফল্য নিয়ে দেশে ফিরবে, সম্ভবত তাদের খেলোয়াড়েরাও ভাবতে পারেননি। সেই সেশেলসকে নিয়ে আসছে বাফুফে তা জানা আগেই। কথা ছিল, বাংলাদেশ, ব্রুনেই ও সেশেলসকে নিয়ে তিন জাতি টুর্নামেন্ট হবে সিলেটে। দুর্বল দলের বিপক্ষে জিতে নিজেদের র‍্যাঙ্কিং কিছুটা বাড়াবে বাংলাদেশ। কিন্তু তিন জাতি আর খেলা হলো না। ব্রুনেই না আসায় বাংলাদেশ–সেশেলস দুই ম্যাচের সিরিজ হচ্ছে শেষ পর্যন্ত।

ম্যাচ দুটি হচ্ছে ২৫ ও ২৮ মার্চ সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে। আর এই ম্যাচ দুটিতে সেশেলসকে মাঠে নেতৃত্ব দেবেন যিনি, তাঁর পেশা সম্পর্কে জানলে কিছুটা চমকে উঠবেন। সেশেলসের অধিনায়ক বেনোয়া মারি পেশায় একজন ‘বোট স্কিপার’, সোজা বাংলায় বলা যায় জাহাজ তত্ত্বাবধায়ক। ম্যানেজার মাইকেল সেটাই বলছিলেন, ‘আমাদের অধিনায়ক বোট স্কিপার। প্রতিদিন সে সাগরে যায়।’ ঠিক কী ধরনের বোট স্কিপার জানতে চাইলে বলেন, ‘পর্যটন বোট।’

৩০ বছর বয়সী বেনো দেশটির অভিজ্ঞ খেলোয়াড়। ২০১৭ সালে দেশের সেরা ফুটবলার হয়েছিলেন এই ডিফেন্ডার। শুধু অধিনায়ক নন, সেশেলসের খেলোয়াড়েরা কেউই পেশাদার ফুটবলার নন। সবাই চাকরি করেন। চাকরি সামলেই ফুটবল মাঠে আসতে হয় তাঁদের, ‘আমাদের ফুটবলাররা নানা ধরনের চাকরি করে। সবকিছু অবশ্য গুনে গুনে আমি বলতে পারব না। তবে এটুকু বলতে পারি, কেউ কাঠমিস্ত্রি, কেউ দোকানি।’

কত জন দোকানি বা কাঠমিস্ত্রি আছে? প্রশ্ন করলে ম্যানেজার এবার একটু কৌশলী, ‘আমি ভাই, এর বেশি কিছু বলতে পারব না। শুধু এটা বলব কারও পেশাই ফুটবল নয়। সবাই অন্য কাজ করে জীবন চালায়।’

ফুটবল খেলে সেশেলসে কেউ সংসার চালাতে পারেন না। সকাল আটটায় তাঁরা কাজে যান। বিকেল চারটা পর্যন্ত কাজ করে তারপর নাকি ফুটবল মাঠে যাওয়ার সুযোগ হয়। ম্যানেজার মাইকেল যেমন ফোনের ওপ্রান্তে বলে যান...‘যেমন ধরুন আজ বিকেল চারটায় সবাই নিজ নিজ কর্মস্থলে কাজ শেষ করে একত্রিত হবে। তারপর আমরা ঢাকাগামী বিমানে উঠব। বুধবার রাতে আশা করি বাংলাদেশে পৌঁছাব।’

সেশেলসের অধিনায়ক বেনোয়া মারি পেশায় জাহাজের তত্ত্বাবধায়ক

সেশেলসের চেয়ে দুই ঘণ্টা এগিয়ে বাংলাদেশ। স্থানীয় সময় আজ রাত সাড়ে ১১টায় তারা বিমানে উঠবে। ঢাকায় নামবে আগামীকাল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়। সিলেট পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত ১০-১১টা বেজে যাবে।

২৩ জন খেলোয়াড় নিয়ে দলটি আসছে বাংলাদেশে। সেশেলসে ঘরোয়া ফুটবলে খেলেন ২১ জন, দুজন আসবেন ইংল্যান্ড থেকে, ‘আমাদের দুজন খেলোয়াড় ইংল্যান্ডে থাকে। ওখানকার নিচের দিকে তৃতীয় বিভাগে খেলে ওরা। দলের নাম ঠিক বলতে পারব না।’ বলছিলেন মাইকেল। জানালেন, এই দুজন প্রথমবারের মতো খেলবে সেশেলসের জার্সিতে। এবং তাঁদের উপস্থিতি দলের শক্তি বাড়াবে বলেও মনে করেন ম্যানেজার।

মাত্র এক লাখ জনসংখ্যার দেশটি ফুটবলে অনেকটা পিছিয়ে। সেটাই স্বাভাবিক। তারপরও শ্রীলঙ্কায় চার জাতি টুর্নামেন্ট জয় উজ্জীবিত করেছে দলটিকে, ‘সেই জয়টা ছিল আমাদের জন্য বিরাট অনুপ্রেরণা। সেই থেকে আমরা একটু একটু করে উন্নতি করছি ফুটবলে।’

এই ফাঁকে জানালেন সিলেটে দুটি ম্যাচে তাঁদের লক্ষ্যও, ‘সিলেটে আমরা দুটি ম্যাচ খেলব। অবশ্যই হারতে চাইব না। অভিজ্ঞতা অর্জনের পাশাপাশি আমরা ম্যাচ দুটি জিততেই যাচ্ছি।’ মাইকেলের মুখে আশার কথা।

সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের বিপক্ষে দুটি ম্যাচ খেলবে সেশেলস

সেশেলসে তিনটি ফুটবল স্টেডিয়াম আছে। মানুষ ফুটবল ভালোবাসে। সেই ভালোবাসা নিয়েই তাদের বাংলাদেশে আসা। দেশে ঘরোয়া একটা টুর্নামেন্ট চলছিল। সেটি দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ রেখে সেশেলস বাংলাদেশের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে আসছে। দেশটির প্রিমিয়ার ও প্রথম বিভাগ লিগে আটটি করে দল। দ্বিতীয় বিভাগে খেলছে ১০টি। সব মিলিয়ে আয়তন আর জনসংখ্যার অনুপাতে খারাপ নয়। সেশেলস থেকে কাগজে–কলমে অনেকটাই এগিয়ে বাংলাদেশ। এখন মাঠের লড়াইয়ে সেটির প্রমাণ রাখতে পারলেই হয়।