বিশ্বকাপ ফাইনালের মতোই লিওনেল মেসি আর কিলিয়ান এমবাপ্পে মুখোমুখি হচ্ছেন আরেক শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে। পিএসজির দুই সতীর্থ বিশ্বকাপ ফাইনালে যেমন নিজ নিজ দেশের হয়ে পরস্পরের বিপক্ষে বিশ্বজয়ের লড়াইয়ে লড়েছিলেন, ঠিক তেমনি এবারের লড়াইটা ‘বিশ্বসেরা’ হওয়ারই।
আজ রাত বাংলাদেশ সময় ২টায় শুরু হবে ২০২২ সালের ফিফা দ্য বেস্ট পুরস্কার অনুষ্ঠান। সেখানে বর্ষসেরা পুরুষ খেলোয়াড়ের লড়াইয়ে মেসি-এমবাপ্পের সঙ্গে আছেন ব্যালন ডি’অর জয়ী ফরাসি স্ট্রাইকার করিম বেনজেমাও।
সেরা ফুটবলার হওয়ার লড়াইয়ে মেসিকে ফেবারিট ভাবছেন অনেকেই। ৩৬ বছর মেসি আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন কাতারে, ৭ গোল করেছেন, বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে জিতেছেন গোল্ডেন বল। তবে এমবাপ্পেও পিছিয়ে নেই।
বিশ্বকাপে খেলেছেন দুর্দান্ত। ৮ গোল করে জিতেছেন গোল্ডেন বুট। ফাইনালে ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ার পর তাঁর জোড়া গোলেই ম্যাচে ফিরে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েছিল ফ্রান্স। ৫৬ বছর পর বিশ্বকাপ ফাইনালে হ্যাটট্রিকও করেছেন এমবাপ্পে। কিন্তু ফ্রান্সকে জেতাতে পারেননি। টাইব্রেকারে হেরে যায় তাঁর দেশ।
বিশ্বকাপের বাইরেও এমবাপ্পে গত বছর ছিলেন পিএসজির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়, তিনি ফ্রেঞ্চ লিগের শীর্ষ গোলদাতাই শুধু নন, ফ্রান্সের বছরের সেরা খেলোয়াড়। ‘দ্য বেস্ট’ পুরস্কারে এমবাপ্পে মেসির ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছেন—এটা বলাই যায়। বেনজেমা চোটের কারণে বিশ্বকাপ খেলতে না পারলেও ২০২২ সালটা তাঁর রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে দুর্দান্ত কেটেছে। করেছেন গোলের পর গোল। চোট থেকে ফিরেও তিনি গোল পাচ্ছেন।
কিংবদন্তি ডাচ ফুটবলার রুদ খুলিত অবশ্য তিনজনের মধ্যে মেসিকেই এগিয়ে রাখছেন। কারণ, অবশ্যই বিশ্বকাপ। খুলিতের কথা, ‘বিশ্বকাপ জেতার কারণেই মেসির “দ্য বেস্ট” পুরস্কার জেতার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এটাই বাস্তবতা।’
নেদারল্যান্ডসকে অধিনায়ক হিসেবে ১৯৮৮ সালে ইউরো জিতিয়েছিলেন। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপক্ষে ফাইনালে মার্কো ফন বাস্তেনের সঙ্গে ছিল তাঁর গোলও। ডাচ ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা তারকা খুলিত পেশাদারি ক্যারিয়ারে খেলেছেন পিএসভি আইন্দোভেন, এসি মিলান ও চেলসিতে।
ব্যালন ডি’অর জয়ী এই ডাচ তারকা ‘দ্য বেস্ট’ জয়ী হিসেবে মেসিকে এগিয়ে রাখলেও জানিয়েছেন এমবাপ্পেকে নিয়ে মুগ্ধতার কথাও, ‘এমবাপ্পের প্রতি আমার অনেক শ্রদ্ধা। আমি তো মনে করে মেসি ও এমবাপ্পে—দুজনই সমপর্যায়ের ফুটবলার। বিশ্বকাপ ফাইনালে এমবাপ্পে যা করেছে, যেভাবে সে দায়িত্ব নিয়েছে গোটা দলের, সেটি অবিশ্বাস্য।’
২০১৬ সালে ফিফা ‘দ্য বেস্ট’ পুরস্কার চালু করে। সেরা পুরুষ ও নারী খেলোয়াড়, পুরুষ ও নারী দলের সেরা কোচ ও সেরা গোলরক্ষক, সেরা গোল ও সেরা ফ্যান—এই আটটি ক্যাটাগরিতে দেওয়া হয় দ্য বেস্ট পুরস্কার। ফিফা এককভাবে এবং পরে ব্যালন ডি’অরের সঙ্গে যৌথভাবে বর্ষসেরার পুরস্কার দিয়েছে আগে। তবে নতুনরূপে এই ফিফা দ্য বেস্ট পুরস্কার চালু হয় ২০১৬ সাল থেকে, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে প্রথমবার তুলে দেওয়া হয় পুরস্কার।
ফিফার বিশেষজ্ঞ প্যানেল বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মনোনীতদের একটা তালিকা করার পর সেটা ভোটাভুটির জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এ ক্ষেত্রে চার ধরনের ভোটার থাকেন—১. ফিফার সদস্য প্রতিটি দেশের জাতীয় দলের (পুরুষ অথবা নারী) অধিনায়ক, ২. জাতীয় দলের (পুরুষ অথবা নারী) কোচ, ৩. বিভিন্ন দেশের ফিফার নির্বাচিত সংবাদমাধ্যমকর্মী, ৪. ফিফার ওয়েবসাইটে নিবন্ধিত ভক্তরা।
ভোটে প্রতিটি ক্যাটাগরিতে সবাই তাদের এক, দুই ও তিন নম্বর পছন্দ ঠিক করেন। সব ভোট হিসাব করে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া তিনজনের সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ করে ফিফা। সেখান থেকে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের দিন ঘোষণা করা হয় জয়ীদের নাম। এবার ফিফা দ্য বেস্টের জন্য বিবেচিত সময় ছিল ৮ আগস্ট ২০২১ থেকে ১৮ ডিসেম্বর ২০২২ (কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালের দিন) পর্যন্ত।
মেসি এখন পর্যন্ত এই পুরস্কার জিতেছেন একবার—২০১৯ সালে। ২০১৬ সালে প্রথম ‘দ্য বেস্ট’ জিতেছিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ২০১৭ সালেও ‘দ্য বেস্ট’ পুরস্কার গেছে রোনালদোর হাতে। ক্রোয়েশিয়ান তারকা লুকা মদরিচ জিতেছিলেন ২০১৮ সালে। ২০২০ ও ২০২১—শেষ দুইবার ‘দ্য বেস্ট’ হয়েছেন পোলিশ স্ট্রাইকার রবার্ট লেভানডফস্কি।