ইংলিশ ক্লাব ফুটবলের চতুর্থ স্তরের দল নিউপোর্ট কাউন্টির কোচ গ্রাহাম কখলান
ইংলিশ ক্লাব ফুটবলের চতুর্থ স্তরের দল নিউপোর্ট কাউন্টির কোচ গ্রাহাম কখলান

কখলান কি নিজের গায়ে চিমটি কাটছেন, কে এই কখলান

গ্রাহাম কখলান লোকটা আইরিশ এবং ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সমর্থক। তো দুনিয়াজুড়ে ইউনাইটেডের এমন কত কোটি কোটি ভক্ত-সমর্থকই তো আছেন। হিসাব করা আসলেই কঠিন।

কখলান লোকটা ইউনাইটেডের গোঁড়া সমর্থক। তিনি একা নন, তাঁর পুরো পরিবার। মা–বাবা, ভাই-বোন সবাই। ইউনাইটেড হেরে গেলে এই ৫০ ছুঁই ছুঁই বয়সে এসেও কখলানের খুব মন খারাপ হয়, কখনো কখনো কান্না আসে। তাঁর ভাষায়, ‘সেই ছোটবেলা থেকে আমি ইউনাইটেডকে ভালোবেসে বড় হয়েছি। এই ক্লাবের খারাপ ও ভালো—সব সময় পাশে ছিলাম, আছি। ইউনাইটেডের খেলা দেখতে কতবার যে ওল্ড ট্রাফোর্ডে গিয়েছি, অন্য কত মাঠেও।’

২৮ জানুয়ারি এফএ কাপের চতুর্থ রাউন্ডে খেলবে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ওই ম্যাচ দেখতে অবশ্য কখলানকে অন্য কোনো মাঠে যেতে হবে না। ইউনাইটেডই অতিথি হয়ে আসবে তাঁর মাঠে!

এফএ কাপের সেই ম্যাচ ইউনাইটেড খেলবে ইংলিশ ফুটবলের চতুর্থ স্তরের ক্লাব নিউপোর্ট কাউন্টির বিপক্ষে, নিউপোর্টের মাঠ রডনি প্যারেডে। নিউপোর্টের কোচের নাম—গ্রাহাম কখলান! ছোটবেলা থেকে আজ পর্যন্ত যে ক্লাবকে ভালোবেসে বড় হয়েছেন, যে ক্লাবের জয়ে আনন্দে ভেসেছেন, হারে কেঁদেছেন, সেই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এবার কখলানের প্রতিপক্ষ! গতকাল তৃতীয় রাউন্ডে পঞ্চম স্তরের দল ইস্টলেইকে ৩-১ গোলে হারিয়ে স্বপ্নের মতো ম্যাচের সামনে দাঁড়িয়ে কখলান ও তাঁর দল।

৪৯ বছর বয়সী কোচের মনে এখন তাই রীতিমতো বাচ্চাদের রোমাঞ্চ, ‘আমার মাথা থেকে এটি সরাতেই পারছি না, শুধু ওই ম্যাচের কথাই ভাবছি। খুব আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ছি। জানি না, এই অনুভূতি কখনো যাবে কি না। আমি নিশ্চিত, আমার বাসায় সবাই এখন আইরিশ জিগস নাচছে। কী যে এক বিশাল উপলক্ষ হতে যাচ্ছে এটা! আমার আর দেরি সইছে না।’

ডাবলিনে জন্ম নেওয়া কখলান ইউনাইটেডে খেলার স্বপ্নই দেখেছিলেন একসময়। সেটা সত্যি হয়নি। আইরিশ ক্লাব ব্যারি ওয়ান্ডারার্সকে দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করা এই সেন্টার ব্যাক ইংল্যান্ডে থিতু হওয়ার পর ব্ল্যাকবার্ন রোভার্স, শেফিল্ড ওয়েনসডে, বার্নলি, শ্রুসবেরি টাউনের মতো ক্লাবে খেলেছেন। শেফিল্ডে থাকতে একবার ক্লাবের বর্ষসেরা ফুটবলারও হয়েছিলেন। কিন্তু খেলোয়াড়ি জীবনে আসলে খুব বড় কিছু করতে পারেননি।

কোচিং করাচ্ছেন বছর ছয়েক ধরে। ব্রিস্টল সিটি, ম্যানসফিল্ড টাউনের পর এখন নিউপোর্ট কাউন্টিতে। কোথাও বলার মতো খুব বড় অর্জন নেই। বলা যায়, এই এফএ কাপের চতুর্থ রাউন্ডে উঠে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে খেলতে পারাটা হবে তাঁর ও তাঁর ক্লাবের জন্য বিশাল এক অর্জন। ম্যাচটা টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হবে বলে নিউপোর্ট পাবে ৪ লাখ পাউন্ডও। খরচ চালাতে না পেরে গত বছর অক্টোবরে নিউপোর্টের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা ৫২ শতাংশ মালিকানা আরেক ক্লাব সোয়ানসি সিটির মালিক হু জেনকিনসের কাছে বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ইংলিশ লিগ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেলে এ মাসেই এই মালিকানা বদল হয়ে যেতে পারে। এমন সময়ে ৪ লাখ পাউন্ড নিউপোর্টের কাছে অনেক কিছু।

আর কখলানের কাছে তো ইউনাইটেডের বিপক্ষে ওই ম্যাচটা কী, তা অনেক কিছু বলেও বোঝানো যাচ্ছে না। ‘মনে আছে, ১৯৭৯ সালের এফএ কাপের ফাইনালে যখন আর্সেনাল আমাদের (ইউনাইটেডকে) হারিয়ে দিল, আমি অঝোরে কেঁদেছিলাম’—ইউনাইটেডকে নিয়ে নিজের আবেগ জানাতে গিয়ে স্মৃতিচারণা করলেন কখলান।
আচ্ছা, ২৮ জানুয়ারি যদি নিউপোর্ট কোনোভাবে হারিয়ে দেয় ইউনাইটেডকে, কখলানের কি ছোটবেলার মতো কান্না আসবে?

হয়তো। তবে সেটা হবে খুশির কান্না।