ফেডারেশন কাপ ফাইনালে আজ মোহামেডানের মুখোমুখি হবে বসুন্ধরা কিংস
ফেডারেশন কাপ ফাইনালে আজ মোহামেডানের মুখোমুখি হবে বসুন্ধরা কিংস

কিংসের ট্রেবল, না মোহামেডানের টানা দ্বিতীয়

ফেডারেশন কাপটাই গত মৌসুমে বসুন্ধরা কিংসের একমাত্র না পাওয়ার বেদনা হয়ে ছিল। সেমিফাইনালে মোহামেডানের কাছে হেরেই বিদায় নিয়েছিল লিগ ও স্বাধীনতা কাপজয়ী কিংস। পরে সেই মোহামেডানই অবিস্মরণীয় এক ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীকে টাইব্রেকারে হারিয়ে ১৪ বছর পর ঘরে তুলেছিল ফেডারেশন কাপ। নির্ধারিত সময়ে ৪–৪ গোলে অমীমাংসিত সেই ম্যাচ অনেক দিন পর রোমাঞ্চ ফিরিয়ে এনেছিল ঘরোয়া ফুটবলে।

ফেডারেশন কাপে সবচেয়ে বেশি ১১ বারের চ্যাম্পিয়ন সেই মোহামেডানই এবারের ফাইনালে কিংসের প্রতিপক্ষ। খেলায় ‘প্রতিশোধ’ কথাটা ভালো শোনায় না, কিন্তু আজ ময়মনসিংহের রফিকউদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে বেলা তিনটায় ফেডারেশন কাপের ফাইনালে খেলতে নামার আগে দুবার শিরোপাজয়ী কিংসের গত বছরের সেই পরাজয়ের শোধ নেওয়ার বাড়তি একটা প্রতিজ্ঞা না থেকেই পারে না।

ফাইনালে বসুন্ধরাকে ঠেকাতে পারবে তো মোহামেডান

কিংস কোচ অস্কার ব্রুজোনের মনে যা–ই থাক, মুখে অবশ্য এই লাইনে কথাই বলছেন না। তাঁর কাছে ফেডারেশন কাপ ফাইনাল জয় মানে হচ্ছে সফল মৌসুমটিকে পরিপূর্ণতা দেওয়ার সুযোগ। স্বাধীনতা কাপের পর লিগে টানা পঞ্চমবারের মতো শিরোপা জেতা হয়ে গেছে। এবার ফেডারেশন কাপ যোগ হলে ঘরোয়া ফুটবলে ’ট্রেবল’ জেতা হয়ে যায়। তা জিতে মৌসুমটাকে পরিপূর্ণ করে তোলার অনুমিত লক্ষ্যের কথাই বলছেন ব্রুজোন, ‘ফেডারেশন কাপ ফাইনাল নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের আরও একটি সুযোগ। পুরো মৌসুমে আমার খেলোয়াড়েরা যে কঠোর পরিশ্রম করেছে, সেটিরই একটা পূর্ণতা দেওয়া। আমি খেলোয়াড়দের বলেছি, এই ম্যাচটায় নিজেদের সেরাটা দিয়ে লড়াই করতে। আমি নিশ্চিত, তারা সেটিই করবে।’

প্রতিপক্ষ মোহামেডান এবার ঝাঁপাবে টানা দ্বিতীয় শিরোপার জন্য। প্রিমিয়ার লিগের প্রথম পর্বে এই মোহামেডানই কিংস অ্যারেনায় হারিয়েছে ব্রুজোনের দলকে। তাই সাদা–কালো শিবিরকে সমীহই করছেন কিংসের স্প্যানিশ কোচ, ‘মোহামেডান পুরো মৌসুমে যথেষ্ট ভালো খেলেছে। তাদের খেলায় একধরনের ধারাবাহিকতা আছে। দুই উইং ব্যবহার করে খেলে। শারীরিকভাবে শক্তিশালী খেলোয়াড়ও আছে ফরোয়ার্ড লাইনে। সেট পিসে তাদের শক্তি নিয়ে আমরা কাজ করছি।’

ফাইনালটা জিততে চান মোহামেডান তারকা দিয়াবাতে

মোহামেডান ফাইনালটা জিততে চায় যেকোনো মূল্যেই। গত পরশু ক্লাবে গিয়েই সেই দৃঢ়প্রতিজ্ঞার আবহটা দেখা গেল। প্রখর রোদের মধ্যে ক্লাবের পাশে একচিলতে এবড়োখেবড়ো জমিতেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন খেলোয়াড়েরা। গত বছর ফাইনালে জয়ের নায়ক সোলেমান দিয়াবাতে তখন পাশে দাঁড়িয়ে। ফাইনাল নিয়ে জিজ্ঞাসা করাতে বললেন, ‘আমরা ম্যাচটা জিততে চাই। শক্তিতে হয়তো কিংস এগিয়ে আছে, কিন্তু এটা ফুটবল, ঘটে যেতে পারে যেকোনো কিছুই।’

মোহামেডানের ম্যানেজার ও সাবেক তারকা ইমতিয়াজ আহমেদ নকীবও আশাবাদী এই ম্যাচ নিয়ে ,‘খেলোয়াড়েরা যদি পরিকল্পনা মতো খেলে, মাঠে ভুল কম করে, তাহলে আমাদের সুযোগ আছে। কিংসের বিদেশি খেলোয়াড়েরা খুবই উঁচুমানের। তাদের কোনো মতেই চেপে বসতে দেওয়া যাবে না।’

ফাইনাল ম্যাচটা দুই দলের দুই গোল স্কোরার মোহামেডানের মালিয়ান স্ট্রাইকার দিয়াবাতে ও কিংসের ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার দরিয়েলতন গোমেজেরও লড়াই। গত ডিসেম্বরে স্বাধীনতা কাপ ফাইনালে দরিয়েলতনের গোলেই মোহামেডানকে হারিয়েছিল কিংস। কয়েক দিন আগে লিগে ময়মনসিংহেই দরিয়েলতন জোড়া গোল করেছেন মোহামেডানের বিপক্ষে। ফাইনালের আগে দিয়াবাতে দরিয়েলতনকে যেন একটু উত্ত্যক্ত করতে চাইলেন, ‘দরিয়েলতন অবশ্যই দুর্দান্ত স্ট্রাইকার। তবে সে আমার জায়গায় খেলুক, আমি ওর জায়গায় খেলি, তাহলেই বোঝা যাবে।’ দিয়াবাতে কী বোঝাতে চেয়েছেন, তা মোটামুটি পরিষ্কার। দরিয়েলতনের দলে তারকার ছড়াছড়ি। যেখানে মোহামেডান দল হিসেবে অনেক অনুজ্জ্বল।

বসুন্ধরার দরিয়েলতন গোমেজও ফাইনাল জিততে মরিয়া

দিবায়াতের এই কথা অবশ্য গায়েই মাখছেন না দরিয়েলতন। তিনি শুধু ভাবছেন নিজের খেলা নিয়েই, ‘আমি এসব নিয়ে ভাবি না। আমার কাজ গোল করা। আমি কাজটাই করে যেতে চাই। গোল করতে চাই ফেডারেশন কাপ ফাইনালেও।’

আজকের ফাইনালের আগে উত্তাপ থাকছে রেফারিং নিয়ে। মোহামেডান সম্প্রতি ফেডারেশনকে চিঠি দিয়ে পাঁচ রেফারির ব্যাপারে তাদের আপত্তির কথা জানিয়ে দিয়েছে। মোহামেডানের দাবি, সেই পাঁচ রেফারির কাউকেই যেন ফাইনালের দায়িত্বে না রাখা হয়। ফেডারেশন অবশ্য মোহামেডানের কাছে প্রমাণ চেয়েছে অভিযোগের বিপরীতে। তবে অভিযোগ–বিতর্কের মধ্যেও ফুটবলপ্রেমীদের চাওয়া একটি জমজমাট ম্যাচ। ঠিক এক বছর আগে কুমিল্লার ফাইনালটি যেমন হয়েছিল।