ফুটবলের দলবদলে খরচের পরিমাণ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। প্রতি মৌসুমেই দলবদলের সময় ভাঙছে কোনো না কোনো রেকর্ড। ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের মধ্যে বিশেষ কিছু ক্লাব দলবদলে খরচের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। ম্যানচেস্টার সিটি, পিএসজি, রিয়াল মাদ্রিদ, চেলসি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কিংবা বার্সেলোনার নাম এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ক্লাবের পাশাপাশি অনেক কোচও দলবদলে উদার হস্তে খরচের জন্য পরিচিত। এ তালিকায় পেপ গার্দিওলা, জোসে মরিনিও কিংবা কার্লো আনচেলত্তির নাম আসে সবার আগে।
ফুটবলীয় অর্থনীতির এমন বিস্তার কমিয়ে দিয়েছে একাডেমি থেকে খেলোয়াড় তৈরি করে এনে খেলানোর প্রক্রিয়াও। কোনো নতুন বা তরুণ প্রতিভাকে বড় অর্থ খরচ করে কিনে নিচ্ছে ক্লাবগুলো। আর এসব খেলোয়াড় কেনার পেছনে বিশেষ ভূমিকা থাকে কোচদের।
ট্রান্সফার মার্কেটের এক হিসাবে দেখা গেছে, কোচিং ক্যারিয়ারে এ মাসের ২৭ তারিখ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি খরচ করেছেন পেপ গার্দিওলা। পরের চারটি নামও অবশ্য অনুমেয়—মরিনিও, আনচেলত্তি, ম্যাসিমিলিয়ানো আলেগ্রি ও দিয়েগো সিমিওনে। এ ছাড়া তালিকার ৬ থেকে ১০ নম্বরে আছেন টমাস টুখেল, ম্যানুয়েল পেলেগ্রিনি, আন্তোনিও কন্তে, মরিসিও পচেত্তিনো ও ইয়ুর্গেন ক্লপ।
পেপ গার্দিওলা
১৭০.৯ কোটি পাউন্ড
দলবদলের বাজারে খেলোয়াড় কেনায় বড় অঙ্কের অর্থ খরচ করার জন্য বিশেষ পরিচিত গার্দিওলা। ম্যানচেস্টার সিটিতে আসার আগে বার্সেলোনা ও বায়ার্ন মিউনিখে বেশ হাই প্রোফাইল খেলোয়াড়দের কোচিং করিয়েছেন গার্দিওলা। একসময় বার্সেলোনাতেই তিনি ৫ কোটি ৯৪ লাখ পাউন্ড খরচ করে কিনেছিলেন জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচের মতো খেলোয়াড়কে। তবে সিটিতে খরচের সব সীমা যেন মাত্রা ছাড়িয়েছে।
তাঁর কেনা সবচেয়ে দামি পাঁচ খেলোয়াড়ের চারজনই সিটির। যেখানে ১০ কোটি পাউন্ডে গার্দিওলা কেনেন জ্যাক গ্রিলিশকে। এরপর গত বছর ৭ কোটি ৭০ লাখ কেনেন ক্রোয়াট ডিফেন্ডার ইওস্কো গাভারদিওলকে। গার্দিওলার কেনা পরের দুই দামি খেলোয়াড় হলেন রুবেন দিয়াজ ও রদ্রি। এই দুজনকে কিনতে তাঁর খরচ হয়েছে ৬ কোটি ১২ লাখ পাউন্ড এবং ৫ কোটি ৯৮ লাখ পাউন্ড।
জোসে মরিনিও
১৫৮ কোটি পাউন্ড
ক্যারিয়ারে চেলসি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদ ও টটেনহামের মতো ক্লাবের কোচিং করিয়েছেন পর্তুগিজ কোচ মরিনিও। ক্যারিয়ার সাফল্য ও ব্যর্থতা দুটোই দেখেছেন। তবে বিভিন্ন ক্লাবে গিয়ে উচ্চ মূল্যে খেলোয়াড় কিনেও চমক দেখিয়েছেন তিনি। তবে তাঁর সর্বোচ্চ দামে কেনা পাঁচ খেলোয়াড়ের চারজনই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের।
যেখানে সবচেয়ে বেশি দাম দিয়ে ইউনাইটেডে তিনি কিনেছিলেন পল পগবাকে। ৮ কোটি ৯০ লাখ পাউন্ড খরচ করে জুভেন্টাস থেকে নিয়ে এসেছিলেন মরিনিও। মরিনিওর তালিকায় থাকা বাকি চার খেলোয়াড় হলেন রোমেলু লুকাকু, ফ্রেড, নেমানিয়া মাতিচ ও আন্দ্রেই শেভচেঙ্কো। শেষজনকে অবশ্য তিনি কিনেছিলেন চেলসিতে গিয়ে।
কার্লো আনচেলত্তি
১৪৭ কোটি পাউন্ড
দাম দিয়ে তারকা খেলোয়াড় কিনতে অভ্যস্ত রিয়াল মাদ্রিদের বর্তমান কোচ কার্লো আনচেলত্তি। পছন্দের খেলোয়াড়দের দিয়ে দারুণ সাফল্যও পেয়েছেন তিনি। তবে আনচেলত্তি শীর্ষ পাঁচ খেলোয়াড়ের চারজনই তিনি কিনেছেন রিয়ালের দায়িত্ব পালনের সময়। আর তালিকার শেষজনকে তিনি কিনেছেন চেলসির দায়িত্ব নিয়ে। আনচেলত্তির কেনা সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় জুড বেলিংহাম।
গত বছর গ্রীষ্মের দলবদলে বরুসিয়া ডর্টমুন্ড থেকে ৮ কোটি ৮৫ লাখ পাউন্ড খরচ করে তিনি কেনেন বেলিংহামকে। তালিকার দ্বিতীয় নম্বরে আছেন গ্যারেথ বেল। যাঁকে কিনতে রিয়ালের খরচ হয়েছিল ৮ কোটি ৫১ লাখ ইউরো। রিয়ালে আনচেলত্তির কেনা অন্য দুই খেলোয়াড় হলেন চুয়ামেনি ও হামেস রদ্রিগেজ। আর চেলসিতে তিনি কিনেছিলেন ফার্নান্দো তোরেসকে।
ম্যাসিমিলিয়ানো অ্যালেগ্রি
১২১ কোটি পাউন্ড
গার্দিওলা-মরিনিওদের চেয়ে তুলনামূলক কমই খরচ করেছেন ইতালিয়ান কোচ আলেগ্রি। তবে তাঁর কেনা তালিকায় আছে ১০ কোটি পাউন্ডের তারকাও। তিনি আর কেউ নন, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। তাঁর কেনা দ্বিতীয় দামি খেলোয়াড় হলেন গঞ্জালো হিগুয়েইন। আলেগ্রির সময়ে তাঁকে কিনতে জুভেন্টাস খরচ করেছিল ৭ কোটি ৬০ লাখ পাউন্ড। আলেগ্রির কেনা অন্য তিন দামি খেলোয়াড়ও জুভেন্টাসের। তারা হলেন দুসান ভ্লাহোভিচ, ব্রেমের ও ফেদেরিকো কিয়েসা।
দিয়েগো সিমিওনে
৮৪ কোটি পাউন্ড
২০১১ সাল থেকে আতলেতিকো মাদ্রিদের কোচের দায়িত্ব পালন করছেন দিয়েগো সিমিওনে। তাঁর অধীন দারুণ সব সাফল্য পেয়েছে মাদ্রিদের ক্লাবটি। ক্যারিয়ারে আতলেতিকোর হয়ে দুটি লিগ শিরোপা ও দুটি ইউরোপা লিগ জিতেছেন সিমিওনে। দুবার ফাইনাল খেলে রানার্সআপ হয়েছেন চ্যাম্পিয়নস লিগে।
ক্লাবটির হয়ে বেশ খরচ করে খেলোয়াড়ও কিনেছেন আর্জেন্টাইন এই কোচ। যেখানে সবচেয়ে দাম দিয়ে তিনি কিনেছেন জোয়াও ফেলিক্সকে। পর্তুগিজ এই ফরোয়ার্ডকে কিনতে তাঁর দলের খরচ হয়েছিল ১০ কোটি ৮০ লাখ পাউন্ড। এ ছাড়া অন্য দামি চার খেলোয়াড় হলেন তমাস লেমার, দিয়েগো কস্তা, ভিতোলো ও জ্যাকসন মার্তিনেজ।
সবচেয়ে বেশি খরচ করা ৫ কোচ