গত এক সপ্তাহে লিওনেল মেসির খেলা এবং না খেলা নিয়ে ব্যাপক আলোড়ন ছিল
গত এক সপ্তাহে লিওনেল মেসির খেলা এবং না খেলা নিয়ে ব্যাপক আলোড়ন ছিল

মেসি কীভাবে জাপানে খেললেন—ব্যাখ্যা দাবি হংকং সরকারের

লিওনেল মেসি হংকংয়ে প্রীতি ম্যাচে খেলতে পারলেন না। কিন্তু জাপানে গিয়ে ভিসেল কোবের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচটা খেললেন। কেন? ইন্টার মায়ামি এবং মেসির কাছে গতকাল এই প্রশ্ন তুলে ব্যাখ্যা দাবি করেছে হংকং সরকার। হংকংয়ের সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও পর্যটন ব্যুরো বিবৃতিতে বলেছে, চোটের কারণে মেসি হংকংয়ে খেলতে না পারায় ভক্তদের মতো তারাও ভীষণ হতাশ।

প্রাক্‌–মৌসুম প্রস্তুতিতে গত রোববার হংকংয়ে হংকং একাদশের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ খেলে যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) দল মায়ামি। ৪-১ গোলে মায়ামির জয়ের ম্যাচটা বেঞ্চে বসেই দেখেছেন মেসি। এই ম্যাচের আগেই গুঞ্জন উঠেছিল চোট পাওয়া মেসি খেলবেন কি না? মায়ামি কোচ জেরার্দো মার্তিনো ম্যাচের আগে মেসির মাঠে নামা নিয়ে আশা প্রকাশ করলেও পরে সেটি আর হয়নি। বেঞ্চে বসে ম্যাচটি দেখেন মেসি এবং তাতে হংকংয়ের দর্শকদের দুয়োও শুনতে হয় আর্জেন্টাইন তারকাকে।

আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ককে কাছ থেকে দেখার জন্য টিকিটপ্রতি ন্যূনতম ১২৫ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৪ হাজার টাকা) করে খরচ করেন হংকংয়ের ফুটবলপ্রেমীরা। স্টেডিয়ামে দর্শকসংখ্যা ছিল ৩৮ হাজারের বেশি। মেসিকে খেলাতে না পারায় সেই ম্যাচ শেষে ক্ষমাও চেয়েছিলেন মায়ামি কোচ জেরার্দো মার্তিনো।

হংকং একাদশের বিপক্ষে ম্যাচে বেঞ্চে বসেছিলেন মেসি

কিন্তু এরপর পরিস্থিতি ধীরে ধীরে জটিল হতে শুরু করে। এই ম্যাচের জন্য আয়োজকদের অনুদান দিয়েছিল হংকং সরকার। সেখান থেকে অর্থ কেটে রাখার ইঙ্গিত দেওয়া হয়। হংকংয়ের ক্রীড়ামন্ত্রী কেভিন ইয়েউং দাবি করেন, মেসির অন্তত ৪৫ মিনিট খেলার ব্যাপারে আয়োজকদের (ট্যাটলার এশিয়া) সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল। মেসি নিজেও এ নিয়ে মুখ খুলেছিলেন। মাঠে না নামার ব্যাখ্যায় বলেছিলেন, ‘সত্যি হচ্ছে, আমার (অ্যাডাক্টরে) অস্বস্তি ছিল এবং খেলাটা আমার জন্য কষ্টকরই ছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ফুটবলে এমন ঘটনা যেকোনো ম্যাচেই হতে পারে। আমাদের চোট থাকতে পারে। আমার ক্ষেত্রে এটাই হয়েছে।’

হংকং থেকে জাপানে প্রীতি ম্যাচ খেলতে গিয়েছিল মায়ামি। ভিসেল কোবের বিপক্ষে টাইব্রেকারে মায়ামির ৪-৩ গোলে হারের সেই ম্যাচে ৬০ মিনিটে মাঠে নামেন মেসি। এ নিয়েই খেপেছে হংকং সরকার। চোটের কারণে হংকংয়ে প্রীতি ম্যাচ খেলতে না পারার তিন দিন পর মেসি কীভাবে আরেকটি প্রীতি ম্যাচ খেললেন—এটাই মূল প্রশ্ন তাদের। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘(হংকংয়ে ম্যাচের) তিন দিন পর মেসিকে জাপানে কোনো সমস্যা ছাড়াই খেলতে দেখা গেল। সরকার আশা করছে, আয়োজক পক্ষ এবং দল এর যৌক্তিক ব্যাখ্যা দেবে।’

জাপানে ভিসেল কোবের বিপক্ষে ৬০ মিনিটে মাঠে নামেন মেসি

হংকংয়ে মেসি না খেলায় ফুঁসে উঠেছে চীনের রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণাধীন সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস। মেসি হংকংয়ে খেলতে পারলেন না কিন্তু তিন দিন পরই জাপানে খেললেন—এতে হংকংয়ের সঙ্গে আচরণটা সঠিক হলো কি না, সে প্রশ্ন তুলেছে গ্লোবাল টাইমস। বিবৃতিতে সংবাদমাধ্যমটি বলেছে, ‘মেসি প্রাক্‌–মৌসুমে যে ৬টি ম্যাচ খেলেছেন, তার মধ্যে শুধু হংকংয়েই মাঠে ছিলেন না। এই পরিস্থিতি...ইন্টার মায়ামি ও মেসির বিশ্বাসযোগ্যতাকে সন্দেহের মুখে ফেলে দেয়।’

মেসির খেলা দেখতে চীনের জিনজিয়াং থেকে ১২ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে হংকংয়ে গিয়েছিলেন অনেক সমর্থক। গ্লোবাল টাইমস এই তথ্য জানিয়ে বলেছে, সরকার ও সমর্থকদের হতাশার কারণটা যৌক্তিক। এ ঘটনার প্রভাব খেলাধুলার গণ্ডি ছাড়িয়ে গেছে।’

ইন্টার মায়ামির হয়ে প্রাক–মৌসুম সফরে ৬ ম্যাচের পাঁচটিতেই মাঠে নেমেছেন মেসি

হংকং সরকারের সিনিয়র উপদেষ্টা রেগিনা আইপি খুদে ব্লগ লেখার সাইট ‘এক্স’-এ লিখেছেন, ‘হংকংয়ের মানুষ মেসিকে ঘৃণা করে। ইচ্ছাকৃতভাবে এবং হিসাব করে হংকংয়ে তার না খেলার পেছনে ইন্টার মায়ামি এবং কালো হাতের ভূমিকা আছে।’

প্রাক্‌–মৌসুমে এ সফরে মোট ৭ ম্যাচ খেলবে মায়ামি। ১৫ ফেব্রুয়ারি শেষ প্রীতি ম্যাচে মেসির শৈশবের ক্লাব নিউয়েলস ওল্ড বয়েজের মুখোমুখি হবে এমএলএসের ক্লাবটি। এরপর ২১ ফেব্রুয়ারি রিয়াল সল্ট লেকের মুখোমুখি হয়ে এমএলএস মৌসুম শুরু করবে মায়ামি।