বিশ্বকাপ না জিতেই বিদায় নিতে হচ্ছে মার্তাকে
বিশ্বকাপ না জিতেই বিদায় নিতে হচ্ছে মার্তাকে

শূন্য হাতেই বিশ্বকাপকে বিদায় কিংবদন্তি মার্তার

ইঙ্গিতটা কি আগেই পেয়েছিলেন মার্তা? আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে এসে কেঁদে ফেলেছিলেন। কে জানে, হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন বিশ্বকাপে নিজের স্বপ্নটা অধরা থেকে যাচ্ছে তাঁর। চেষ্টা তো অবশ্য কম করেননি। ৮১ মিনিটে বদলি হিসেবে উঠে যাওয়ার পর ডাগআউটে বসেই চিৎকার করে উজ্জ্বীবিত করতে চেয়েছেন সতীর্থদের। সতীর্থরাও চেয়েছিলেন মার্তার বিশ্বকাপ–যাত্রাটাকে দীর্ঘায়িত করতে। কিন্তু কোনো কিছুতেই যেন কিছু হওয়ার নয়। নয়তো ৭৩ শতাংশ বলের দখল রেখে একের পর এক আক্রমণে গিয়ে ১৮টি প্রচেষ্টার একটিও কেন জালের দেখা পাবে না!

শেষ পর্যন্ত সর্বকালের সেরা এই ফুটবলারের বিশ্বকাপ–যাত্রাটা শেষ হলো শূন্য হাতেই। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে জ্যামাইকার সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে গ্রুপ পর্ব থেকেই ছিটকে পড়েছে ব্রাজিল। ২০০৭ সালে রানার্সআপ হওয়াটাই বিশ্বকাপে তাই মার্তার সেরা অর্জন হয়ে থাকল।

আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে কাঁদলেও মার্তা আজ চেষ্টা করেছিলেন কান্না আটকানোর। দলের হারের পর কিছু সময় বসে রইলেন হতভম্ব হয়ে। এরপর ওঠে গিয়ে সতীর্থদের সান্ত্বনাও দিলেন। কিন্তু আর কতক্ষণ! শেষ পর্যন্ত চোখ ভিজেছে তাঁরও। ম্যাচ শেষে কথা বলার সময়ও চেষ্টা করলেন কান্না আটকানোর। মার্তাদের কান্নার বিপরীতে কেঁদেছে জ্যামাইকাও। তাদের কান্না অবশ্য আনন্দের। ব্রাজিলকে পেছনে ফেলে গ্রুপ থেকে ফ্রান্সের সঙ্গে দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করেছে ক্যারিবীয় দেশটি।

পরের পর্বে যেতে হলে জিততেই হবে—এমন সমীকরণে খেলতে নেমেই জ্যামাইকার সঙ্গে ড্র করেছে ব্রাজিল। বাঁচা–মরার ম্যাচে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবলের পসরা সাজিয়ে বসেন ব্রাজিলের মেয়েরা। একের পর এক আক্রমণে জ্যামাইকার রক্ষণকে প্রতি মুহূর্তে কাঁপিয়েছে ব্রাজিল। কিন্তু নিজেদের সেই আক্রমণগুলোকে পরিণতি দিতে পারেনি। অন্যদিকে এদিন জ্যামাইকার লক্ষ্যই ছিল যেকোনোভাবে ব্রাজিলকে ঠেকিয়ে দেওয়ার।

চেষ্টা করেও পারেননি মার্তা

তাই নিজেরা সুযোগ তৈরি বদলে ব্রাজিলের আক্রমণের সামনে ‘বাস পার্কিং’ কৌশল গ্রহণ করে তারা। এদিন প্রথমার্ধ শেষে ৭৬ শতাংশ বলের দখল রেখে ১১টি শট নিয়ে ৬টিই লক্ষ্যে রাখে ব্রাজিল। বিপরীতে ব্রাজিলের পোস্ট লক্ষ্য করে কোনো শটই নিতে পারেনি জ্যামাইকা। দ্বিতীয়ার্ধেও এ চিত্র বদলায়নি। আক্রমণের পর আক্রমণে নাভিশ্বাস উঠেছে জ্যামাইকার। কিন্তু এরপরও জালে বল ঢুকতে দেয়নি তারা। ম্যাচ শেষ হওয়ার ৯ মিনিট আগে ব্রাজিল তুলে নেয় সর্বকালের অন্যতম সেরা নারী ফুটবলারদের একজন মার্তাকে। এ সময় একই সঙ্গে তিনটি পরিবর্তন আনে, কিন্তু কোনো কিছুই কাজে আসেনি।

একই সময়ে আরেক ম্যাচে ফ্রান্সকে শুরুতেই চমকে দেয় পানামা। মার্তা কক্সের গোলের ২ মিনিটের মাথায় এগিয়ে যায় পানামা। তবে আগে গোল করে পানামা যেন নিজেদের বিপদই ডেকে আনে। ফ্রান্সের আক্রমণের তোপে ৩৭ মিনিটের মধ্যে তিন গোল এবং বিরতির আগে হজম করে চার গোল। ২১ মিনিটে মায়েলে লাকারের গোলের পর ২৮ ও ৩৭ মিনিটে জোড়া গোল করেন কাদিদিয়াতু দিয়ানি। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ব্যবধান ৪–১ করেন লা গারেস। বিরতির পর ৫২ মিনিটে দ্বিতীয় পেনাল্টি গোলে নিজের হ্যাটট্রিকও পূরণ করে নেন দিয়ানি। ৬৪ মিনিটে পেনাল্টি থেকে এক শোধ করে পানামা। শেষ পর্যন্ত ৬–৩ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ফ্রান্স।

আর্জেন্টিনার হতাশা

আর্জেন্টিনা ০: ২ সুইডেন
নাহ্, এবারও হলো না। বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম জয়ের অপেক্ষাটা আরও বাড়ল আর্জেন্টিনার। এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে এসে এবারও খালি হাতে ফিরতে হলো আর্জেন্টিনাকে। সব মিলিয়ে ৪ বিশ্বকাপে ১১ ম্যাচ খেলে আর্জেন্টিনা হেরেছে ৮টিতেই, ড্র করেছেন ৩ ম্যাচে। এবারের আসরে খেলা ৩ ম্যাচের দুটিতেই হেরেছে তারা। অবশ্য হারতে পারত তিন ম্যাচেই। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচটিতে ২–০ গোলে পিছিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত ড্র করেছে ২–২ গোলে।

আজ সুইডেনের বিপক্ষে ম্যাচ শেষ হতেই হতাশায় মুষড়ে পড়েন আর্জেন্টিনা খেলোয়াড়েরা। মাঠে শুয়ে কাঁদতে দেখা যায় ইয়ামিলা তামারা রদ্রিগেজকে। আর্জেন্টিনার হতাশার বিপরীতে সুইডেনশিবিরে ছিল উল্লাস। গ্রুপে শীর্ষে থেকেই দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করেছে তারা। শেষ ষোলোয় সুইডেনের প্রতিপক্ষ প্রতিযোগিতার সবচেয়ে সফল দল যুক্তরাষ্ট্র। গ্রুপ ‘ই’ থেকে দ্বিতীয় হয়ে পরের পর্বে গেছেন মার্কিন মেয়েরা।

হ্যামিল্টনের এফএমজি স্টেডিয়ামে এদিন সুইডেনের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার শুরুটা ভালোই ছিল। বলদখল ও আক্রমণে সুইডিশদের সঙ্গে পাল্লা দিয়েছে তারা। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে গিয়ে ছন্দ হারায় লাতিন দেশটি। ৬৬ মিনিটে রেবেকা ব্লুমকিউবিস্টের গোলে পিছিয়ে পড়ে তারা। এরপর ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে পেনাল্টি গোলে ব্যবধান বাড়ান এলিন রুবেনসন। এর ফলে তিন ম্যাচের তিনটিতেই জিতে দাপটের শেষ ষোলোয় গেল সুইডেন। এই গ্রুপ থেকে তাঁদের সঙ্গী হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। যারা দিনের অন্য ম্যাচে রুদ্বশ্বাস লড়াইয়ের পর ইতালিকে হারিয়েছে ৩–২ গোলে।

বিশ্বকাপে জয়হীন থাকল আর্জেন্টিনা

এখন পর্যন্ত শেষ ষোলোর লাইনআপ
৫ আগস্ট শুরু হবে নকআউট পর্বের লড়াই। দিনের প্রথম ম্যাচে ‘এ’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন সুইজারল্যান্ড খেলবে গ্রুপ ‘সি’ এর রানার্সআপ স্পেনের সঙ্গে। আর অন্য ম্যাচে জাপানের প্রতিপক্ষ নরওয়ে। পরদিন ৬ আগস্ট নেদারল্যান্ডসের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। আরেক ম্যাচে সুইডেন খেলবে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে। ৭ আগস্ট প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের প্রতিপক্ষ নাইজেরিয়া এবং স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার প্রতিপক্ষ ডেনমার্ক।

আগামীকাল নির্ধারিত হবে জার্মানির ভাগ্য
আগামীকাল ভাগ্য নির্ধারিত হবে গ্রুপ ‘এইচ’–এর। এই গ্রুপে দুই ম্যাচের দুটিতে জিতেই ভালো অবস্থানে আছে কলম্বিয়া। দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানি ৩ পয়েন্ট নিয়ে আছে দুইয়ে। সমান পয়েন্ট নিয়ে তিনে আছে মরক্কো। আজ মরক্কো খেলবে কলম্বিয়ার বিপক্ষে এবং জার্মানির প্রতিপক্ষ দক্ষিণ কোরিয়া। মরক্কো যদি জিতে যায় এবং জার্মানি যদি হার কিংবা ড্র দেখে, তাহলে বিদায় নিতে হবে তাদের। তবে দক্ষিণ কোরিয়াকে হারাতে পারলে জার্মানির পরের পর্বে যাওয়া অনেকটাই নিশ্চিত। গোল ব্যবধানে মরক্কোর চেয়ে বেশ এগিয়ে আছে তারা।