মেয়েদের সাফ অনূর্ধ্ব–১৯ চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের সঙ্গে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন হয়ে পুরোপুরি খুশি নয় বাংলাদেশও। বাংলাদেশ নারী ফুটবল উইংয়ের প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরণ প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘প্রতিপক্ষ ভারত দেখেই আমরা যুগ্ম শিরোপাটা মেনে নিয়েছি। সঠিক আইন অনুসরণ করা হলে তো বাংলাদেশকেই এককভাবে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করার কথা।’
মাহফুজা আক্তার তাঁর দাবির পক্ষে যুক্তিও তুলে ধরেছেন, ‘ম্যাচ রেফারি ভুল করলেন, তিনি সাডেন ডেথ চালিয়ে না গিয়ে টস করলেন। আমাদের দল প্রতিবাদ করেছিল। কিন্তু তিনি তাড়াহুড়া করে টস করলেন। ভারত সেই টসে জেতার পর তিনি ভুল সংশোধন করে আবারও সাডেন ডেথ শুরু করতে চাইলেন। ভারত মাঠ ত্যাগ করল। বাংলাদেশ দল তো মাঠে ছিল। ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ছিল। ভারত মাঠেই আসেনি। নিয়ম অনুযায়ী তো বাংলাদেশকেই বিজয়ী ঘোষণা করার কথা।’
বাংলাদেশ–ভারত ম্যাচ ছিল বলেই বৃহত্তর স্বার্থে বাংলাদেশ সাফের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছে জানিয়ে মাহফুজা বলেন, ‘সাফ বৃহত্তর স্বার্থে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশও বেঁকে বসতে পারত, কিন্তু সেটি করলে খারাপ হতো। এমনিতেই ভারত–বাংলাদেশ যেকোনো খেলাতেই যখন মুখোমুখি হয়, তখন স্পর্শকাতরতা থাকে।
রাজনৈতিক ব্যাপার–স্যাপার থাকে। বৃহস্পতিবার সাফের ফাইনালে ম্যাচ কমিশনারের ভুলের কারণে অচলাবস্থা তৈরি হলে অনেকেই সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছিলেন। ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কল্যাণ চৌবেসহ ভারতীয় হাইকমিশনও জড়িয়ে পড়েছিল এই অচলাবস্থা নিরসনে। যুগ্ম শিরোপাই সবচেয়ে সেরা সমাধান ছিল। পুরো বিষয়টি রাজনৈতিক স্পর্শকাতর হওয়ায় আমরা সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি।’
সাফ অনূর্ধ্ব–১৯ নারী ফুটবলে মহানাটকীয় এক ফাইনাল দেখেছেন ফুটবলপ্রেমীরা। নির্ধারিত সময়ের খেলা ১–১ গোলে অমীমাংসিত থাকার পর টাইব্রেকারেও ছিল ১১–১১ গোলে সমতা। ফুটবলের আইন অনুযায়ী সাডেন ডেথ চালিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও শ্রীলঙ্কার ম্যাচ কমিশনার ডি সিলভা জয়াসুরিয়া দিলান হঠাৎ করেই টসে শিরোপা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেন। ব্যাপারটি পরিস্থিতি ঘোলাটে করে ফেলে।
বাংলাদেশ দলের প্রতিবাদের মধ্যেই টস হয়ে গেলে তাতে ভারতের জয় হয়। শিরোপা জয়ের উৎসব চলার মধ্যেই ম্যাচ কমিশনার নিজের ভুল শুধরে আবারও সাডেন ডেথ করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর ভারত বেঁকে বসে। তাঁরা মাঠই ত্যাগ করে। তিন ঘণ্টা ধরে অনেক দেনদরবার ও তৎপরতার পর বাংলাদেশ ও ভারত দুই দলকেই যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করে দক্ষিণ এশীয় ফুটবল ফেডারেশন (সাফ)।
ভারত অবশ্য এই সিদ্ধান্তে খুশি নয়। দলটির কোচ শুক্লা দত্ত কলকাতার একটি পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সরাসরিই অভিযোগ করেছেন, সাফ অনূর্ধ্ব–১৯ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে তাদের শিরোপা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। শিরোপা ভাগাভাগির পর ট্রফিটা অবশ্য ভারতই দেশে নিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে ‘অতিথি দল’কে বাংলাদেশ ছাড় দিয়েছে বলেই জানিয়েছেন বাফুফের নারী উইংয়ের সভাপতি।
এ ছাড়া আজ বাফুফে ভবনে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে মাহফুজা আক্তার জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারির ফিফা উইন্ডোতে ফিলিস্তিন নারী ফুটবল দলের সঙ্গে সাবিনা–সানজিদাদের আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচটি হচ্ছে না। ফিলিস্তিন শুরুতে খেলার জন্য সম্মতি দিলেও তারা বাফুফেকে জানিয়েছে, সৌদি আরবে পশ্চিম এশীয় নারী ফুটবল টুর্নামেন্টে খেলার জন্য ফিলিস্তিন বাংলাদেশের সঙ্গে খেলতে পারছে না।
তবে ফেব্রুয়ারির উইন্ডোতে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচের চেষ্টা এখনো চালিয়ে যাচ্ছে বাফুফে। মাহফুজা আক্তার বলেছেন, ‘আমরা বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে কথা চালিয়ে যাচ্ছি। এর মধ্যে আছে হংকং, চীনা তাইপেসহ মধ্য এশিয়ার দেশগুলো। তবে এখনো তাদের সম্মতি পাইনি। দেখা যাক।’
আগামী মার্চেই মেয়েদের ফুটবল লিগ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন মাহফুজা। এ জন্য দলবদল শুরু করার চিঠিও প্রতিটি ক্লাবকে দেওয়া হয়েছে। বসুন্ধরা কিংস এখনো পর্যন্ত মেয়েদের লিগে না খেলার ব্যাপারে অনড় রয়েছে বলেই জানিয়েছেন তিনি।