ইউরো শুরুর আগে ফেবারিটের তালিকায় সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হচ্ছিল ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের নাম। দুই দলের মিডফিল্ড ও ফরোয়ার্ড লাইনও সেই ফেবারিট–তত্ত্বকে বেশ সমর্থন করছিল। একদিকে ফ্রান্সের আক্রমণভাগে কিলিয়ান এমবাপ্পে, উসমান দেম্বেলে, আতোয়াঁন গ্রিজমান, মার্কাস থুরাম এবং রান্দাল কোলো মুয়ানিদের মতোর তারকাদের উপস্থিতি। অন্যদিকে কম যায় না ইংল্যান্ড দলও।
জুড বেলিংহাম, ফিল ফোডেন, বুকায়ো সাকা ও হ্যারি কেইনদের মতো তারকাদের নামই যেকোনো রক্ষণে ত্রাস সৃষ্টি করতে যথেষ্ট। অথচ এই দুই দলই এখন ইউরোতে গোল পেতে রীতিমতো সংগ্রাম করছে। তিন ম্যাচ খেলে দুই দলই মাত্র দুটি করে গোল করেছে। বিপরীতে স্বাগতিক জার্মানি গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচে করেছে ৮ গোল এবং অন্য ফেবারিট স্পেন করেছে ৫ গোল। এমনকি প্রথম দুই ম্যাচেই পর্তুগালের গোলসংখ্যা ৫।
শুরুতে ফ্রান্সের পারফরম্যান্সে নজর দেওয়া যাক। ইউরোতে গ্রুপ ‘ডি’তে ফ্রান্স প্রথম ম্যাচ খেলেছিল অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে। রালফ রাংনিকের ‘গেগেনপ্রেসিং’ ফুটবলীয় কৌশলের সামনে সেদিন রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠেছিল ফ্রান্সের। ৩৮ মিনিটে ম্যাক্সিমিলিয়ান ওবের আত্মঘাতী গোল উপহার না দিলে সেই ম্যাচে জয়বঞ্চিতই থেকে যেত ফ্রান্স।
এমনকি বল দখলেও অস্ট্রিয়ার চেয়ে সেই ম্যাচে পিছিয়ে ছিল ফরাসিরা। ম্যাচটিতে ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় তারকা এমবাপ্পে গোলের জন্য চারটি শট নিলেও বড় কোনো সুযোগ তৈরি করতে ব্যর্থ হন। উল্টো নাক ভেঙে মাঠও ছাড়তে হয় তাঁকে। তবে ভাগ্য ভালো যে সে ম্যাচে আত্মঘাতী গোলে জয়টা পেয়েছিল তারা। নয়তো শেষ ষোলোয় যাওয়াও হুমকির মুখে পড়তে পারত। দ্বিতীয় ম্যাচে ফ্রান্সের প্রতিপক্ষ ছিল নেদারল্যান্ডস। এমবাপ্পেহীন ফ্রান্স সেদিনও গোলমুখে সংগ্রাম করেছে এবং ৬৩ শতাংশ বলের দখল রেখেও শেষ পর্যন্ত পায়নি গোলের দেখা।
গ্রুপের শেষ ম্যাচে ফ্রান্সের প্রতিপক্ষ ছিল পোল্যান্ড। রবার্ট লেভানডফস্কির দলের বিপক্ষে এই ম্যাচ দিয়ে ফের মাঠে ফেরেন মাস্ক পরা এমবাপ্পে। এই ম্যাচে এমবাপ্পে ও ফ্রান্স দারুণ কিছু সুযোগ তৈরি করলেও পোলিশ গোলরক্ষকের বাধা পেরোতে পারেননি। এগিয়ে যেতে শেষ পর্যন্ত পেনাল্টির সহায়তা লাগে তাদের। স্পট কিকে এমবাপ্পের প্রথম ইউরো গোলে লিড নিলেও সেটি ধরে রাখতে ব্যর্থ হয় ফ্রান্স।
লেভানডফস্কির আরেকটি পেনাল্টি গোলে ম্যাচে সমতা ফেরায় পোলিশরা। এরপর চেষ্টা করেও ম্যাচটি জিততে পারেনি শেষ দুই বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলা ফ্রান্স।
এই তিন ম্যাচে ফ্রান্স সব মিলিয়ে লক্ষ্যে শট নিয়েছে ১৪টি। যদিও সেগুলো থেকে কোনো গোল আদায় করতে পারেনি তারা। যে দুটি গোলে ফ্রান্সের তরি পার হয়েছে একটি আত্মঘাতী এবং অন্যটি পেনাল্টি থেকে। কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্স যদি গোল সমস্যার সমাধান করতে না পারে, তবে বড় বিপদই অপেক্ষা করছে দিদিয়ের দেশমের দলের জন্য।
একদল প্রতিভাবান মিডফিল্ডার ও ফরোয়ার্ড নিয়ে এবারের ইউরো খেলতে গেছে ইংল্যান্ড। এমনকি ইংল্যান্ডের বেঞ্চে থাকা কোল পালমারের মতো তারকারাও যেকোনো দলের একাদশে অনায়াসে সুযোগ পাওয়ার মতো। ক্লাব ফুটবলেও মৌসুমজুড়ে ইংল্যান্ড ছিল অনবদ্য। কেইন, ফোডেন, বেলিংহামরা ম্যাচের পর ম্যাচে গোল করে গেছেন। কিন্তু সেই দলটিই কিনা গোলের জন্য রীতিমতো হাহাকার করছে। তিন ম্যাচে ফ্রান্সের মতো তারাও গোল করেছে ২টি। প্রথম ম্যাচে সার্বিয়ার বিপক্ষে বেলিংহামের করা একমাত্র গোলে জয় পায় ইংল্যান্ড। পরের ম্যাচে ডেনমার্কের বিপক্ষে কেইনের গোলে এগিয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জিততে পারেনি ‘থ্রি লায়ন্স’রা, ড্র করে ১–১ গোলে।
আর স্লোভেনিয়ার বিপক্ষে শেষ ম্যাচে গোলশূন্য ড্রয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। এই তিন ম্যাচে ইংল্যান্ড লক্ষ্যে শট নিয়েছে মাত্র ১১টি। অর্থাৎ দুর্দান্ত মিডফিল্ড ও ফরোয়ার্ড লাইন নিয়েও সেভাবে গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারছে না গতবারের রানার্সআপরা। এর মধ্যে ইংল্যান্ডের খেলার ধরন নিয়েও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। কেউ কেউ তো শেষ ষোলোর আগেই গ্যারেথ সাউথগেটকে ছাঁটাই করতে বলেছেন। ফলে চাপটা ক্রমেই বাড়ছে। এখন শেষ ষোলোয় ইংলিশদের এমন দৃষ্টিকটু গোল–খরা কাটে কি না, সেটাই দেখার অপেক্ষা।