আঞ্চলিক বাছাইয়ের চূড়ান্ত পর্বে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ড্রও আদায় করতে পারেননি গিলের্মো বিরোরা
আঞ্চলিক বাছাইয়ের চূড়ান্ত পর্বে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ড্রও আদায় করতে পারেননি গিলের্মো বিরোরা

২০ বছর পর ব্যর্থ ব্রাজিল, এনদ্রিক–বিরোদের পরিণতি কি রবিনিও–মাইকনদের মতো হবে

২১ কোটি মানুষের দেশ ব্রাজিলে প্যারিস অলিম্পিক কি আলোড়ন তুলতে পারবে?

ব্রাজিলিয়ানরা খেলা বলতে বোঝে ফুটবল। আর খেলার দুনিয়ার সবচেয়ে বড় আয়োজন অলিম্পিক। অথচ ব্রাজিলের ফুটবল দলই থাকছে না প্যারিস অলিম্পিকে। ২০১৬ ও ২০২০ আসরে অলিম্পিকে সোনা জেতা ব্রাজিল এবার বাছাইপর্বই টপকাতে পারেনি। আঞ্চলিক বাছাইয়ে চূড়ান্ত পর্বের শেষ ম্যাচে হেরেছে আর্জেন্টিনার কাছে। ‘ফুটবলের দেশ’ অলিম্পিক ফুটবলে নেই দুই দশক পর। জন কেনেডির চোখে এই ব্যর্থতা ‘লজ্জা’র। একটু নয়, অনেক লজ্জার।

জন কেনেডিকে চেনেন? যে দলটি এবার অলিম্পিকের টিকিট কাটতে পারেনি, কেনেডি সেই ব্রাজিল দলের খেলোয়াড়। ২১ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড খেলেন ফ্লুমিনেন্সের হয়ে। আর্জেন্টিনার কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গের পর তিনি সেই বেদনায় পুড়েছেন, যে বেদনায় পোড়া সর্বশেষ দলের কেউ পরবর্তী সময়ে আলো ছড়াতে পারেননি। না ক্লাবে, না আন্তর্জাতিক ফুটবলে।

এখন থেকে ঠিক আট বছর আগেও অলিম্পিক ছিল ব্রাজিলের জন্য দুঃখগাথা আর আক্ষেপের নাম। ১৯৫৮ থেকে শুরু করে ৪৪ বছরের মধ্যে পাঁচটি বিশ্বকাপ জিতে ফেলেছে ব্রাজিল। বিশ্ব ফুটবলে জন্ম দিয়েছে অবিস্মরণীয় সব মুহূর্ত আর নায়কের। কিন্তু ‘গ্রেটেস্ট শো অন দ্য আর্থ’ নামের অলিম্পিকেই কোনো সোনা ছিল না রিও ২০১৬-এর আগপর্যন্ত। পেলে থেকে শুরু করে রোনালদো পর্যন্ত কারও গলায়ই ওঠেনি অলিম্পিকের সোনার পদক। অথচ ১৯৬৮ থেকে ২০০০ পর্যন্ত নয়টি অলিম্পিকের সাতটিতেই আঞ্চলিক বাছাইয়ে হয়েছিল চ্যাম্পিয়ন। ঠিক এ সময়টায় জাতীয় দল জেতে তিনটি ফিফা বিশ্বকাপ। গড়বড়টা শুরু হয় এরপরই।

২০০৪ এথেন্স অলিম্পিকের বাছাইয়ে চূড়ান্ত পর্বে আটকে যায় ব্রাজিল। চিলিকে হারালেও প্যারাগুয়ে ও আর্জেন্টিনার কাছে হেরে থমকে যেতে হয়। কাকতাল হচ্ছে, এবারও চূড়ান্ত পর্বে সেই প্যারাগুয়ে আর আর্জেন্টিনার কাছেই হেরেছে ব্রাজিল। আর ব্যবধানও বিশ বছর আগের মতো—দুটি ম্যাচেই ১-০।

২০১৬ অলিম্পিকে প্রথমবার সোনা জেতে ব্রাজিল। যে দলে ছিলেন নেইমার

ব্রাজিলের ২০০৪ অলিম্পিক বাছাইয়ের সেই দলের বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই পরের দশ বছরের মধ্যে ফুটবল-আঙ্গিনার আলোচনা থেকে হারিয়ে গেছেন। নিজেদের যা একটু চেনাতে পেরেছেন, শুধু রবিনিও আর মাইকন। ব্রাজিলের ফুটবলে অনন্ত আক্ষেপ হয়ে ওঠা এক নাম রবিনিও। শুরুর দিকে যাঁকে ‘নতুন পেলে’ও বলা হতো। রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যানচেস্টার সিটি ও এসি মিলানে খেলা এই ফরোয়ার্ড পরে নিজের সম্ভাবনার অল্পই মাঠে অনূদিত করতে পেরেছেন।

ব্রাজিলের এবারের দলটিতেও আছে পেলেকে মনে করিয়ে দেওয়া একজন—এনদ্রিক। পালমেইরাসে খেলা ১৭ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড এরই মধ্যে রিয়াল মাদ্রিদে নাম লিখিয়েছেন। মাদ্রিদে যাওয়ার আগে দেশকে অলিম্পিক জেতানোর স্বপ্নও দেখিয়েছেন। কিন্তু এখন তাঁর প্যারিসেই যাওয়া হচ্ছে না। এনদ্রিকের ভবিষ্যৎ রবিনিওর মতো, নাকি ভিন্ন কিছু হবে, এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে ২০০৪ ব্যাচের ফল ফিরিয়ে লক্ষণ আপাতত ভালো হলো না এনদ্রিক-ব্রাজিল কারও জন্যই।

এর মধ্যেই যে ব্রাজিলে শুরু হয়ে গেছে তুমুল সমালোচনা। দেশটির অন্যতম বড় সংবাদমাধ্যম গ্লোবো স্পোর্টস তো লিখেই দিয়েছে, ‘২০ বছরের পুরোনো ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তি’। আর সেই পুনরাবৃত্তি যে কতটা পীড়াদায়ক, সেটা ফুটে উঠেছে আর্জেন্টিনার কাছে হেরে যাওয়া দলের কেনেডির কণ্ঠে, ‘খুবই দুঃখজনক। বিশেষ করে লজ্জাই। ব্রাজিলের মতো দলের অলিম্পিক মিস করা উচিত নয়। এটা সামান্য লজ্জার নয়, অনেক লজ্জার।’