শেষ বাঁশি বাজতেই আনন্দে আত্মহারা বাংলাদেশের মেয়েরা। কয়েকজন চক্কর দিলেন পুরো মাঠ। ভারতকে হারানোর আনন্দই যে আলাদা। ঘরের মাঠে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী ফুটবলে ফাইনালে ওঠার তৃপ্তিও থাকল সঙ্গে।
তবে ভারতকে আজ গ্রুপ ম্যাচে হারিয়ে এত আনন্দ করার কিছু দেখছেন না সাইফুল বারী। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ কোচ নিজেই বলেছেন, ‘উদ্যাপনটা আমি থামানোর চেষ্টা করেছি। এত উদ্যাপনের কী আছে। এটা তো গ্রুপ ম্যাচ। ফাইনাল বাকি আছে। ফাইনাল জিতলেই আসলে বেশি খুশি হব।’
ভুটানকে ১০-০ গোলে উড়িয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করেছিল ভারত। অনূর্ধ্ব-১৭ নারী বিশ্বকাপে খেলা ভারতীয় দলের চারজন আজ খেলেছেন এই দলে। এই ভারতকেই আজ বাংলাদেশ হারিয়েছে ১-০ গোলে। গোলটাও এসেছে ৯০ মিনিট পেরিয়ে যোগ করা সময়ে। ড্র হতে হতেই জিতে গেল স্বাগতিকেরা। সাগরিকার গোল বাংলাদেশকে ফাইনালে নিয়েছে। এর পেছনে ভাগ্যের সহায়তাও ছিল বলছেন কোচ, ‘জেতার জন্য ভাগ্য লাগে। তবে জয় তো জয়ই। এখন ৮ তারিখের জয়টাই আমাদের কাছে কাম্য হবে বেশি।’
এত উদ্যাপনের কী আছে। এটা তো গ্রুপ ম্যাচ। ফাইনাল বাকি আছে। ফাইনাল জিতলেই আসলে বেশি খুশি হব।সাইফুল বারী, কোচ, বাংলাদেশ নারী দল
বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের দম ও ফিটনেস ভালো ছিল। শারীরিক সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে কোচ চেয়েছেন বলটাও যেন পায়ে রাখতে পারেন মেয়েরা। বেশির ভাগ সময় খেলোয়াড়েরা তা পেরেছেনও। সঙ্গে কোচের কিছু কৌশলও কাজে এসেছে। একসময় লম্বা বল খেলার কৌশল নেয় বাংলাদেশ।
ভারতের ফরোয়ার্ড নেহা ভালো ক্রস করছিলেন। সেটা বন্ধ করতে পেরেছে বাংলাদেশ। তবে ব্যক্তিগতভাবে ভারতীয় খেলোয়াড়েরা বাংলাদেশের মেয়েদের চেয়ে ভালো ছিল বলে মনে করেন সাইফুল বারী। ম্যাচের শুরুটা কঠিন ছিল বাংলাদেশের জন্য। সাইফুল তা নিয়ে বলছিলেন, ‘ওদের আক্রমণভাগের চারজন খুবই দ্রুতগতির। বিশেষ করে নাম্বার নাইন। আমাদের সমস্যা হচ্ছিল মাঝমাঠে, হোল্ডিং পজিশনের খেলোয়াড় ঠিকভাবে বলের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারছিল না। ফলে ওরা বারবার এসেছে। প্রথম চাপটা আমাদের মেয়েদের একটু হতভম্ব করেছে।
তারপর কীভাবে ম্যাচটা ধরেছে বাংলাদেশ সেটাও বলেছেন সাইফুল, ‘দ্বিতীয়ার্ধে হোল্ডিং পজিশনটা আমাদের ঠিক করতে হয়েছে। রুপা স্টপারের খেলোয়াড় ওকে আমি হোল্ডিংয়ে নামাই। এরপর কিছুটা ভারসাম্য আসে। ভারত একসময় ক্লান্ত হয়। আমরা সেই সুযোগ নিই।’
ওদিকে ভাগ্যকে কিছুটা দোষারোপ করলেন ভারতের কোচ শুক্লা দত্ত। পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা তিনি। বাংলাতেই দিলেন অনেক প্রশ্নের উত্তর, ‘আজ শেষ মিনিটে গোল খেয়ে গেছি। আমাদের দুর্ভাগ্য, ম্যাচটা হেরে গেছি।’ তবে নিজের মেয়েদের পারফরম্যান্সে তিনি খুশিই, ‘আমার দল ভালো খেলেছে।’
ফাইনাল নিশ্চিত করতে চান শেষ ম্যাচে নেপালকে হারিয়ে। ফাইনালে তাঁর দল উঠবে, এমনই বিশ্বাস তাঁর। তিনি বলেছেন, ‘আমি বলেছি তিনটি দলই আমার কাছে সেরা। আগেও বলেছি এখনো বলছি একই কথা। একটা একটা করে বাধা পেরোতে হবে। তবে পরের ম্যাচ আমাকে জিততে হবে। জিতব আশা করি।। বাংলাদেশ কেমন খেলল, জানতে চাইলে তাঁর কথা, ‘খুব ভালো। আমি আগেও বলেছি, এখনো বলছি বাংলাদেশ ভালো দল।’
শেষ মিনিটে গোল খেলেও ভারতের কোচ মুখে অন্তত হতাশা ব্যক্ত করেননি। বরং নিজের মেয়েদের প্রশংসা করে বলেন, ‘ওরা অনেক পরিশ্রম করেছে। আমরা গোল খেয়েছি, কারণ বলটা অনেক পেছনে চলে আসে। এ সময় আমি মেয়েদের নির্দেশনা দিচ্ছিলাম। কিন্তু আমার কথা ওরা হয়তো শুনতে পায়নি। কারণ, পেছনে এত ব্যান্ড বাজছিল। আমি বলেই যাচ্ছিলাম যে বল আমাদের আমাদের রক্ষণের অনেক ভেতরে চলে আসবে। একটা সময় আমাকে হিন্দি বলতে হয়েছে। বলেছি, “নে ধর, নে ধর”। ইন্ডিয়ার নানা জায়গার মেয়ে তো।’
বাংলাদেশের মেয়েদের নিয়ে তাঁর নাকি কোনো পরিকল্পনা ছিল না। ‘আমি বাংলাদেশের সঙ্গে খেলতে এসেছি। তাদের সঙ্গে খেলছি। কোনো খেলোয়াড়কে আলাদাভাবে ধরব, আটকাব, এটা ভাবিনি। আমি অলআউট খেলেছি।’ বলেছেন ভারতের বাঙালি কোচ।