কিংবদন্তি চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন কালই। এখনো শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি ফুটবল-বিশ্ব। এর মধ্যেই ছোটখাটো একটা বিতর্ক উঠেছিল। পেলের খোলা কফিনের সামনে সেলফি তুলেছিলেন ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো। এ নিয়ে সমালোচনা হয়। তবে ইনফান্তিনো এই সমালোচনায় হতাশা প্রকাশ করেছেন।
সান্তোসের মাঠ ভিল বেলমিরোয় পেলেকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে তাঁর কফিনবন্দী নিথর দেহ ২৪ ঘণ্টার জন্য রাখা হয়েছিল। ইনফান্তিনো সেখানে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে গিয়েছিলেন। পেলেকে যেন মানুষ শেষবারের মতো একবার দেখতে পায়, এ কারণে খুলে রাখা হয়েছিল কফিনের ঢাকনা। আর সেই খোলা কফিনের সামনে নিজের মুঠোফোনটি বের করে সেলফি তোলেন ফিফা সভাপতি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। ভাইরাল হওয়া একটি মন্তব্য এমন, ‘ইনফান্তিনো আবারও! হায় ঈশ্বর, এই লোকের সমস্যা কী!’ আবারও বলতে সেই মন্তব্যকারী সম্ভবত কাতার বিশ্বকাপে ইনফান্তিনোর একটি আচরণকে বুঝিয়েছেন। ফাইনাল শেষে পুরস্কারের মঞ্চে তিনি মেসিকে ধরে ট্রফির কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। এটা নিয়ে সমালোচনা করে কিংবদন্তি ইংলিশ ফুটবলার অ্যালান শিয়ারার বলেছিলে, ‘মেসিকে খেলার সময়ও এত আঁটসাঁট মার্ক কেউ করেনি!’
এবার একটি একটি সেলফি তোলার বিষয়টি যে তীব্র সমালোচনার উৎস হয়ে উঠবে ফিফা সভাপতি হয়তো তা ভাবেননি। ইএসপিএন জানিয়েছে ইনস্টাগ্রামে বেশ শক্ত ভাষায় নিজের ব্যাখ্যাসহ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইনফান্তিনো, ‘ব্রাজিল থেকে এইমাত্র ফিরলাম, যেখানে পেলেকে খুব চমৎকারভাবে শ্রদ্ধা জানানোয় অংশ নিতে পেরেছি। গতকাল (সোমবার) শ্রদ্ধা জানানোর অনুষ্ঠানে সেলফি ও ছবি তোলার কারণে সমালোচনা হচ্ছে আমাকে নিয়ে, এটা জানার পর মর্মাহত হয়েছি। ব্যাপারটা নিয়ে জানাচ্ছি যে, গ্রেট পেলের খেলোয়াড়ি জীবনের সতীর্থ এবং তার পরিবারবর্গ তাদের সঙ্গে কয়েকটি ছবি তোলার অনুরোধ করেছিল, আমি তাতে স্বাভাবিকভাবেই রাজি হয়েছি।’
ইনফান্তিনো এরপর সেই সেলফি তোলার ব্যাখ্যায় লিখেছেন, ‘পেলের সতীর্থরা অনুরোধ করেছিল সবাইকে সঙ্গে নিয়ে যেন একটি সেলফি তুলি। কিন্তু কীভাবে তুলতে হবে তারা সেটি জানত না। তাই আমি তাদের একজনকে সাহায্য করেছি এবং তার জন্য সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সেলফি তুলেছি। পেলের সাবেক সতীর্থদের সাহায্য করার জন্য যদি সমালোচনার শিকার হতে হয় তাহলে আমি সানন্দে তা মাথা পেতে নিচ্ছি। আর সব সময়ই তাদের সাহায্য করব, যারা ফুটবলে কিংবদন্তিতুল্য সব ইতিহাস লিখেছে। পেলের প্রতি আমার সম্মান ও ভালোবাসা বিশাল। তাই অসম্মান হয় এমন কিছু আমি কোনো অবস্থাতেই করব না।’
পূর্বঘোষিত পরিকল্পনা অনুযায়ী পেলের মরদেহ মেমোরিয়া নেকরোপোল একিউমেনিকা সমাধিস্থলে সমাহিত করা হয়। কোলন ক্যানসার ও বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগে গত ২৯ ডিসেম্বর ৮২ বছর বয়সে অন্যলোকে চলে যাওয়া পেলের দুই দিনব্যাপী শেষকৃত্যে বিভিন্নভাবে অংশগ্রহণ করেছেন প্রায় আড়াই লাখ মানুষ।
সোমবারই শেষকৃত্যে গিয়ে ফুটবলের রাজাকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো, দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবল ফেডারেশনের (কনমেবল) সভাপতি আলেহান্দ্রো দমিনগেজ, কনফেডারেশন অব ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের (সিবিএফ) সভাপতি এদনালদো রদ্রিগেজ। ছিলেন ব্রাজিলের সাবেক ও বর্তমান অনেক খেলোয়াড়ও।