গত ২৮ জানুয়ারি ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে ৫-৩ গোলের হারের পর মৌসুম শেষে বার্সেলোনাকে বিদায়ের সিদ্ধান্ত জানান জাভি হার্নান্দেজ। জাভির বিদায় ঘোষণার সময় লা লিগায় রিয়ালের চেয়ে ১০ পয়েন্টে পিছিয়ে ছিল বার্সা। ২১ ম্যাচ শেষে তিনে থাকা বার্সার পয়েন্ট ছিল ৪৪। শীর্ষে থাকা রিয়ালের পয়েন্ট ছিল তখন ৫৪। এমনকি দুইয়ে থাকা জিরোনার পয়েন্টও ছিল ৫২। তা ছাড়া এক সপ্তাহ আগেই কোপা দেল রে থেকেও বিদায় নিয়েছিল বার্সা। এমন পরিস্থিতিতে চাপের মুখে মৌসুম শেষে বার্সায় আর না থাকার কথা জানিয়ে দেন জাভি।
কিন্তু জাভির এমন বিদায়ই যেন ভোজবাজির মতো বদলে যায় দৃশ্যপট। তাঁর বিদায় ঘোষণার পর ১২ ম্যাচ খেলে কোনোটিতেই হারেনি বার্সা। ৯ জয়ের বিপরীতে আছে ৩ ড্র। এর মধ্যে লা লিগার পয়েন্ট তালিকায় তিন থেকে দুইয়ে উঠে এসেছে তারা। রিয়ালের সঙ্গে পয়েন্টের ব্যবধানও নামিয়ে এনেছে আটে। তবে বার্সা সবচেয়ে বড় চমক দেখিয়েছে চ্যাম্পিয়নস লিগে। কোয়ার্টার ফাইনালে যারা পিএসজিকে ৩-২ গোলে হারিয়ে এখন সেমিফাইনালে এক পা দিয়ে রেখেছে।
দায়িত্ব ছাড়ার ঘোষণা দেওয়ার পর মাত্র আড়াই মাসে জাভির এভাবে দলকে বদলে দেওয়ার বিষয়টি এখন আলোচনার কেন্দ্রে। কদিন আগেও যে দলটি ধুঁকছিল, কোন জাদুমন্ত্রে দলটিকে এভাবে বদলে দিলেন জাভি? স্প্যানিশ সংবাদ স্পোর্ত বার্সার বদলে যাওয়ার পেছনে পাঁচটি কারণ সামনে এনেছে। যেখানে কিশোর পাউ কুবারসির ভূমিকা যেমন আছে, তেমনি ছন্দহীন খেলোয়াড়দের ছন্দে ফেরার বিষয়টিও আছে।
দুর্দান্ত কুবারসি
সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক উদীয়মান তরুণ ফুটবলার উপহার দিয়েছেন জাভি। যাঁদের বেশির ভাগকেই তিনি নিয়ে এসেছেন বার্সার একাডেমি ‘লা মাসিয়া’ থেকে। এ তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন পাউ কুবারসি। মাত্র ১৭ বছর বয়সী এই কিশোর দলে সুযোগ পেয়ে বার্সার রক্ষণকে আমূল বদলে দিয়েছেন। যখনই সুযোগ পেয়েছেন, নিজেকে প্রমাণ করেছেন। চ্যাম্পিয়নস লিগে নাপোলির বিপক্ষে শেষ ষোলোর দ্বিতীয় লেগ এবং পিএসজির বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে বার্সার জয়ে দারুণ ভূমিকা রেখেছেন কুবারসি। সামনের ম্যাচগুলোতেও বার্সা তাকিয়ে থাকবে এ কিশোরের পারফরম্যান্সের দিকে।
আক্রমণে নতুন দুই অস্ত্র
চলতি মৌসুমের শুরু থেকেই ছন্দহীন ছিলেন বার্সার মূল স্কোরার রবার্ট লেভানডফস্কি। এ জন্য বেশ সমালোচনার মুখেও ছিলেন এ পোলিশ স্ট্রাইকার। তাঁর গোলহীনতা ভোগাচ্ছিল বার্সাকেও। তবে এখন নিজের সেরা ছন্দে ফিরেছেন লেভা। গোল না পেলেও পারফরম্যান্স দিয়ে দারুণ আলো ছড়াচ্ছেন। আক্রমণের ভিত গড়ার পাশাপাশি করছেন গোলে সহায়তাও। লেভার পাশাপাশি লামিনে ইয়মালের প্রতিনিয়ত ক্ষুরধার হয়ে ওঠার সুফলও পাচ্ছে বার্সা। উইং ধরে আক্রমণে ওঠার সময় প্রতিপক্ষের নাভিশ্বাস তুলে ছাড়ছেন এ স্প্যানিয়ার্ড। প্রতি-আক্রমণে ইয়ামাল দারুণ কার্যকর। ইয়ামালের ক্রমে পরিণত হয়ে ওঠাও সুসংবাদ নিয়ে আসছে বার্সার জন্য।
রাফিনিয়ার ফেরা
অনেকেই আস্থা হারিয়ে ফেলেছিলেন রাফিনিয়ার ওপর। বার্সার অনেক সমর্থকও তাঁকে বিদায় করে দেওয়ার পক্ষে ছিলেন। জাভি অবশ্য সব সময় আস্থা রেখেছিলেন এ ব্রাজিলিয়ানের ওপর। যার প্রতিদান এখন দিচ্ছেন রাফিনিয়া। চ্যাম্পিয়নস লিগে কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে বার্সার জয়ে জোড়া গোল করেছেন এ ফরোয়ার্ড। পজিশন বদলে লেফট উইঙ্গার হিসেবেও সমান কার্যকর। এই মুহূর্তে বার্সার হয়ে আগ্রাসন ও গতিতেও চমক দেখাচ্ছেন রাফিনিয়া। সামনের ম্যাচগুলোতেও তাঁর কাছ থেকে সেরাটা পেতে চাইবেন জাভি।
গুন্দোয়ানের বোঝা কমানো
বিশ্বের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডারদের একজন ইলকাই গুন্দোয়ান। ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে দারুণ সব সাফল্যের অভিজ্ঞতা নিয়েই বার্সায় এসেছিলেন এ জার্মান। তবে বার্সায় শুরুতে তাঁর ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয় অনেক দায়িত্ব। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবেও রাখতে হয়েছে ভূমিকা। যে কারণে নিজের সহজাত কাজটুকু ঠিকঠাক করতে পারছিলেন না গুন্দোয়ান। তবে এখন সেই চাপ নেই গুন্দোয়ানের ওপর। ফলে আক্রমণে অনেক বেশি বৈচিত্র্য আনার সুযোগ পাচ্ছেন এ মিডফিল্ডার।
বেঞ্চের শক্তি
সাম্প্রতিক সময়ে চোটের কারণে বার্সার বেঞ্চ বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছিল। তবে পেদ্রির মতো কার্যকর খেলোয়াড়ের প্রত্যাবর্তন বদলে দিয়েছে হিসাব-নিকাশ। এখন একাদশের মতো বার্সার বেঞ্চও সমান কার্যকর। সর্বশেষ পিএসজির বিপক্ষে বেঞ্চ থেকে নেমেই নিজেদের জাদু দেখিয়েছেন আন্দ্রেস ক্রিস্টিয়েনসেন ও পেদ্রি। সামনের ম্যাচগুলোতেও পার্থক্য গড়ে দিতে পারে বার্সার বেঞ্চের শক্তি।
বার্সেলোনা ছন্দে ফেরার পর ক্যাম্প ন্যুয়ে শোনা যাচ্ছিল, জাভি তাঁর সিদ্ধান্ত বদলে থেকে যেতে পারেন কোচের পদে। কিন্তু আজও তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, সিদ্ধান্ত বদল হচ্ছে না।