এলিট একাডেমির খেলোয়াড়দের নিয়ে বাফুফে নিলাম আয়োজ করেছে আগস্ট মাসে
এলিট একাডেমির খেলোয়াড়দের নিয়ে বাফুফে নিলাম আয়োজ করেছে আগস্ট মাসে

কেন ব্রাদার্সের ঘরে যেতে পারেননি নিলামের ছয় ফুটবলার, দায় কার

ঘরোয়া ফুটবলে নতুন মৌসুমের প্রথম টুর্নামেন্ট স্বাধীনতা কাপ শেষ হয়েছে ১৮ ডিসেম্বর। ২২ ডিসেম্বর শুরু হয়ে গেছে প্রিমিয়ার লিগও। কিন্তু ব্রাদার্স ইউনিয়নে যোগ দেওয়া হয়নি নিলাম থেকে কেনা একাডেমির ছয় ফুটবলারের। নিলামে খেলোয়াড় কিনেও শেষ পর্যন্ত ব্রাদার্স তাদের বুঝে পায়নি।

কেন? সমস্যা কোথায়? ব্রাদার্সের ম্যানেজার আমের খান প্রথম আলোকে বলেন,‘আমরা তো খেলোয়াড়দের ফোন করে ক্যাম্পে আসতে বলেছি। কিন্তু তারা আসেনি। বাফুফে তাদের ছাড়েনি।’

এরপর আমের খান যোগ করেন, ‘স্বাধীনতা কাপের দুই ম্যাচের এক ম্যাচেও আমরা ওদের পাইনি। অথচ খেলোয়াড় তালিকায়ও ওদের নাম ছিল, এখন লিগেও আছে। একজনের চোট ছিল, একজন অসুস্থ ছিল। বাকি চারজনের ক্যাম্পে যোগ দেওয়ার কথা ছিল । কিন্তু ওরা আজ–কাল করে আর আসেনি। তাই ওদের নিয়ে আমরা আর মাথা ঘামাইনি।’

ব্রাদার্স ১০ লাখ টাকা হাঁকিয়ে নিজেদের করে নেয় ডিফেন্ডার আজিজুল হককে

বাফুফের ভাষ্য, ক্যাম্পে তোলার আগে খেলোয়াড়প্রতি নিলামের ৬০ শতাংশ টাকা বাফুফেকে দেবে ক্লাব। কিন্তু ব্রাদার্স তা দেয়নি। এ কারণে খেলোয়াড় ছাড়েনি বাফুফে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ব্রাদার্স বলছে, বাফুফের কাছ থেকে তারা বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ ফি বাবদ অনেক টাকা পায়। সেখানে থেকে ৬০ ভাগ টাকা সমন্বয় করতে বলেছিল তারা। বাফুফে সেটা করেনি। বাকি ৪০ ভাগ টাকা খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স দেখে দিতে চেয়েছে ব্রাদার্স। নিলামে কেনা খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স দেখে টাকা দেওয়ার ভাবনা ব্রাদার্সের মাথায় কীভাবে এল, সেটাও একটা বড় প্রশ্ন। কারণ, এই খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স দেখেই তারা নিলামে তাঁদের কিনে নিয়েছে। এখন উল্টো সুর কেন!

আমের খানের দাবি, এখানে দুই পক্ষে নাকি যোগাযোগ বিভ্রাট হয়েছে। ব্রাদার্স ম্যানেজার এমনও বলছেন, ৬০ ভাগ টাকা অগ্রিম দিতেই হবে, এমন কোনো কথা নাকি ছিল না। পুরো বিষয়টা অপেশাদারির চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। কিন্তু দুই পক্ষের কথিত যোগাযোগ বিভ্রাটের কারণে ছয়জন নবীন খেলোয়াড়ের স্বপ্ন ভেঙে যাবে, তা কীভাবে হয়? এখানে ব্রাদার্সের যেমন দায় আছে, দায় এড়াতে পারবে না বাফুফেও।

বাফুফের এলিট একাডেমির তরুণ ফুটবলার সুমন সরেন

ব্রাদার্সের ম্যানেজার যেমন বলছেন, ‘বাফুফের ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান মানিক ভাইকে (আতাউর রহমান ভূঁইয়া) জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কার নির্দেশে এই ছেলেরা আমাদের ক্যাম্পে আসছে না। তিনি বলেছেন, ব্রাদার্সের ক্যাম্পে না যেতে তিনি কাউকে কোনো নির্দেশ দেননি।’ এ ব্যাপারে যোগাযোগ করার জন্য ফোন করা হয়েছিল আতাউর রহমানকে, তিনি ফোন ধরেননি। নোয়াখালী থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তিনি।

ভিত্তিমূল্য ৪ লাখ টাকায় নিলাম থেকে রুবেল শেখকে কিনে নিয়েছে ব্রাদার্স

কিন্তু ছয় তরুণকে নিয়ে আর মাথা না ঘামালে ব্রাদার্স তাঁদের নিলাম থেকে কিনল কেন? ব্রাদার্স ম্যানেজার বলেন, ‘আমাদের অনুশীলনে গেলে দেখবেন, প্রায় ৩৮ জন খেলোয়াড় আছে। ফলে ওরা না হলেও চলে আমাদের।’ ব্রাদার্সের ক্যাম্পে খেলোয়াড় উপচে পড়লে কেন তারা নিলামে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ছিল, সেটাও একটা প্রশ্ন।
এ বছর ২৬ আগস্ট ঢাকার একটি পাঁচতারকা হোটেলে প্রথমবারের মতো বাফুফে তাঁদের এলিট একাডেমির ১০ ফুটবলারকে নিলামে তোলে। দেশের ফুটবলে যা ছিল ব্যতিক্রম এক ঘটনা। তরুণ ফুটবলারদের নিয়ে ক্লাবগুলোর চাহিদার ভিত্তিতেই বাফুফের ওই নিলাম উদ্যোগ।

সেই নিলাম থেকে ছয়জনকেই নিল ব্রাদার্স। চার লাখ ভিত্তিমূল্যেই ব্রাদার্স পেয়েছে ডিফেন্ডার ইমরান খান, রুবেল শেখ, সিরাজুল ইসলাম ও সেন্টার ফরোয়ার্ড সুমন সরেনকে। অন্য ক্লাবের সঙ্গে কাড়াকাড়িতে গিয়ে ব্রাদার্স ১০ লাখ টাকা হাঁকিয়ে নিজেদের করে নিয়েছে ডিফেন্ডার আজিজুল হককে। ফরোয়ার্ড মিরাজুল ইসলামকে নিয়েছে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। সব মিলিয়ে ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু সেটা কাগজে–কলমেই রয়ে গেছে।

বাফুফে থেকে ছাড়পত্র না পাওয়ায় ব্রাদার্সের ক্যাম্পে যাননি বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন ফুটবলাররা। এই তরুণেরা এখন কমলাপুর স্টেডিয়ামের ডরমেটরিতে অনুশীলন করে সময় কাটাচ্ছেন। সাফ অনূর্ধ্ব-২০ পর্যায়ে খেলা ফরোয়ার্ড মিরাজুল ইসলামের আক্ষেপ, ‘কী আর বলব, আমরা খুব হতাশ। আশা করে ছিলাম প্রিমিয়ার লিগে খেলে অনেক কিছু শিখব। কিন্তু এভাবে আমাদের সবার স্বপ্ন ভেঙে যাবে, তা কল্পনাও করতে পারিনি। আরেক খেলোয়াড় ইমরান খানের কথা, ‘খুবই খারাপ লাগছে। নিলামে একটা ক্লাব আমাদের নিল, অথচ খেলতে পারলাম না।’

ফরোয়ার্ড মিরাজুল ইসলামকে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকায় কিনেছে ব্রাদার্স

মিরাজুল–ইমরানদের হতাশা খেলতে না পারার। কিন্তু নিলামে নিজেদের বিক্রয় মূল্য থেকে যে ৪০ শতাংশ টাকা তাঁদের পাওয়ার কথা ছিল, ব্রাদার্সের ক্যাম্পে যোগ না দিলে সেটাও তো পাওয়ার কথা নয়! মিরাজুল–ইমরানদের আর্থিক এই ক্ষতিপূরণটা কে বা কারা দেবে?

একাডেমিতে থাকা চার ফুটবলারকে ‘গড়হাজিরের’ কারণে বহিষ্কার করেছে বিকেএসপি। তাদের মধ্যে ইমরানও আছেন। বিকেএসপি থেকে বহিষ্কার হওয়া নিয়ে তাঁর হতাশা, ‘বিকেএসপি আমাদের বহিষ্কার করেছে। কিন্তু বহিষ্কারের কারণটা পরিষ্কার নয়। আবার আমরা লিগেও খেলতে পারলাম না। এটা খুবই দুঃখের ঘটনা।’

বাফুফের এলিট একাডেমির তরুণ ফুটবলার ইমরান খান

নিলামে সর্বোচ্চ ১৩ লাখ ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি হওয়া গোলকিপার মোহাম্মদ আসিফ যোগ দিয়েছেন বসুন্ধরা কিংসে। ৯ লাখ টাকায় মিডফিল্ডার শেখ রাসেলে গেছেন চন্দন রায়। মিডফিল্ডার আসাদুল মোল্লাকে ৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় পেয়েছে ঢাকা আবাহনী। সাজেদ হাসানকে ফর্টিস পেয়েছে ৭ লাখ ২৫ হাজার টাকায়। তাঁরা চারজন যোগ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ক্লাবে।

স্বাধীনতা কাপের আবাহনীর জার্সিতে বদলি হিসেবে দুটি ম্যাচে মাঠে নামার সুযোগ হয়েছে রাইট উইঙ্গার আসাদুল শেখের। তাঁর খেলায় সন্তুষ্টই মনে হলো আবাহনীর ম্যানেজার নজরুল ইসলামকে। চন্দন রায়কে নিয়ে উচ্ছ্বসিত শেখ রাসেলের সহকারী কোচ আবদুল বাতেন কমল। তিনি বলছেন, ‘চন্দন শেখ রাসেলের হয়ে নিয়মিত খেলছে। খুবই ভালো করছে। আমাদের বিদেশি কোচ পছন্দ করেছে চন্দন। দ্রুতই সে জাতীয় দলে চলে আসতে পারে।’

চার লাখ ভিত্তিমূল্যেই ব্রাদার্স পেয়েছিল সিরাজুল ইসলামকে

কিংসের হয়ে অবশ্য নামার সুযোগ হয়নি গোলকিপার আসিফের। কিংসে তিনি আছেন পঞ্চম গোলকিপার হিসেবে। ফলে তাঁর সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তবে কিংসের মতো দলের সঙ্গে থেকে কিছু শিখতে পারাও তাঁর জন্য বড় পাওনা। ফর্টিসের হয়ে মিডফিল্ডার সাজেদ হাসানের এখনো মাঠে নামা হয়নি, তবে সামনে সুযোগ পেতে পারেন বলে জানিয়েছেন ক্লাবটির ম্যানেজার সাবেক ফুটবলার রাশেদুল ইসলাম।