ম্যাচটিকে ‘ফাইনাল অব দ্য ইয়ার’ বলেছিলেন জামাল ভূঁইয়া। ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের মূল গ্রুপপর্বে জায়গা করে নিতে মালদ্বীপের বিপক্ষে এ ম্যাচ জেতার বিকল্প ছিল না। মালেতে প্রথম লেগ ১-১ গোলে ড্র হওয়ায় বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনার এ ম্যাচ আসলেই পরিণত হয়েছিল ‘ফাইনালে’। সেই ফাইনাল ২-১ গোলে জিতেই বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের মূলপর্বে জায়গা করে নিয়েছে হাভিয়ের কাবরেরার দল।
প্রথমার্ধের খেলা ছিল ১-১ গোলে অমীমাংসিত। ১১ মিনিটে রাকিব হোসেনের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। প্রথমার্ধে আরও অন্তত দুটি গোল পেতে পারত দল। কিন্তু সহজ সুযোগ নষ্ট করার খেসারত জামাল ভূঁইয়ার দল দিয়েছিল ৩৬ মিনিটে। আইসাম ইব্রাহিমের গোলে সমতায় ফিরেছিল মালদ্বীপ।
কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের গোলে ২-১ গোলে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ ম্যাচের বাকি সময়টা লড়েছে ১০ জন নিয়ে। ৫৯ মিনিটে লাল কার্ড দেখেন সোহেল রানা জুনিয়র। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে ১০ জন নিয়েও অসাধারণ খেলেছে বাংলাদেশ। একের পর এক আক্রমণে বাংলাদেশের ফুটবলাররা বুঝতেই দেননি যে দল ১০ জন নিয়ে খেলছে।
শুরুতেই আতঙ্ক ছড়িয়েছিল মালদ্বীপ। খেলা শুরুর প্রথম দুই মিনিট বাংলাদেশের রক্ষণ ছিল এলোমেলো। এই সময় গোলও পেতে পারত মালদ্বীপ। তবে ম্যাচের ১১ মিনিটে দারুণ এক গোল করে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। সাদউদ্দিনের বাড়ানো বল ধরে ফয়সাল আহমেদ ফাহিম খুব ছোট অ্যাঙ্গেল থেকে চমৎকার এক কাটব্যাক করেন মালদ্বীপ বক্সে। তা থেকে গোল করে কিংস অ্যারেনাকে উল্লাসে মাতান রাকিব হোসেন। প্রথমার্ধে আরও দুটি সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেছেন বাংলাদেশের ফরোয়ার্ডরা। এর একটি ফাহিম, অন্যটি রাকিব নিজে।
ম্যাচের ১৫ মিনিটে ডানপ্রান্ত থেকে জামাল ভূঁইয়ার ক্রস থেকে ফাঁকায় বল পেয়ে গোলপোস্টে শট নিয়েছিলেন ফাহিম। কিন্তু তাঁর শটটি মালদ্বীপের গোলকিপার হুসেইন শরীফ কোনোমতে ফিস্ট করে রক্ষা করেন। তবে সবচেয়ে সহজ সুযোগটি বোধহয় পেয়েছিলেন প্রথম গোলটি করা রাকিবই। ১৯ মিনিটে মোহাম্মদ হৃদয়ের বাড়ানো বল থেকে মালদ্বীপ গোলকিপার শরীফকে একা পেয়ে গিয়েছিলেন রাকিব। তিনি সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি।
গোটা প্রথমার্ধ জুড়েই বাংলাদেশের রক্ষণভাগ কেঁপেছে। রাইট-ব্যাক তারিক কাজী ছিলেন নড়বড়ে। মালদ্বীপ গোল করার সুযোগও পেয়ে গিয়েছিল এর মধ্যে। হামজা মোহাম্মদ, আলী ফাসির, আইসাম ইব্রাহিমরা আতঙ্ক ছড়িয়েছেন বারবারই। ম্যাচের ৩৬ মিনিটে মালদ্বীপ গোলটি শোধও করে দেয়। হামজা মোহাম্মদের কর্নার থেকে মোটামুটি ফাঁকায় দাঁড়িয়ে থেকে হেড করে গোল করেন আইসাম ইব্রাহিম।
দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য অন্য বাংলাদেশকে দেখা গেছে। ডানপ্রান্ত থেকে বল নিয়ে ঢুকে সাদ গোলে শট করেন। গোলকিপার সেই শট কোনোমতে ফিরিয়ে দেন। তবে বল এসে পড়ে মালদ্বীপের বক্সের মধ্যেই। সেখান থেকে সোহেল রানা জুনিয়র বল দেন ফাহিমকে। ঠাণ্ডা মাথায় বল জালে পাঠান তিনি। ২-১ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশ অবশ্য মালদ্বীপের ওপর চাপ আরও বাড়িয়েছে। গোলের সুযোগও তৈরি করেছে।
দ্বিতীয়ার্ধে জামাল ভূঁইয়ার জায়গায় মজিবর রহমান জনি নামার পর আক্রমণের ধার আরও বেড়েছে। ৫৯ মিনিটে সোহেল রানা জুনিয়র অযথা এক ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখেন। ১০ জনের দল নিয়ে বাকি সময়টা বাংলাদেশ কেমন খেলবে, সেই শঙ্কা ছিল। কিন্তু সেই শঙ্কা উড়িয়ে বাংলাদেশ বাকি সময়টা অসাধারণই খেলেছে। মালদ্বীপও অবশ্য এ সময় গোলের সুযোগ তৈরি করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশের রক্ষণভাগ দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করেছে। একবারের জন্যও মনে হয়নি বাংলাদেশ একজন কম নিয়ে খেলছে।
শেষ পর্যন্ত বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় হাজার ছয়েক দর্শককে আনন্দে ভাসিয়ে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের মূলপর্বে জায়গা করে নেওয়াটা একটা অর্জনই। গত জুনের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে ফুটবল দলকে যে উন্নতির দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন কোচ কাবরেরা, বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে পারাটা সেই যাত্রাকে অন্য মাত্রাই দেবে।
কোচ কাবরেরা ম্যাচ শেষেও বলেছেন, মালদ্বীপকে হারিয়ে লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। এখন আরও বড় অর্জনের দিকে ঝাঁপাতে প্রস্তুত বাংলাদেশ দল। সেই অর্জনের পথটা কঠিন। গ্রুপপর্বে বাংলাদেশকে লড়তে হবে অস্ট্রেলিয়া, লেবানন, ফিলিস্তিনের বিপক্ষে।