আলেহান্দ্রো গারনাচোর পাস থেকে মার্কাস রাশফোর্ড যখন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের দ্বিতীয় গোলটা করলেন, টেলিভিশন ক্যামেরা ঘুরে গেল ভিআইপি গ্যালারিতে বসে থাকা এক প্রবীণের দিকে। চুইংগাম চাবাচ্ছেন ভদ্রলোক, মুখে একচিলতে হাসি। স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন।
ম্যাচ শেষেও হয়তো সেই হাসিটা ধরে রেখেই মাঠ ছেড়েছেন ইউনাইটেডের সাবেক স্কটিশ কোচ। হয়তো ড্রেসিং রুমে গিয়েও উৎসাহ দিয়েছেন ইউনাইটেডের খেলোয়াড়দের। নগর প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে দ্বৈরথে জয় বলে কথা, সেটাও আবার পিছিয়ে পড়ে। ১-০ গোলে এগিয়ে যাওয়া ম্যানচেস্টার সিটির জালে ৭৮ থেকে ৮২—এই চার মিনিটের মধ্যে দুই গোল দিয়ে ইউনাইটেড ম্যাচ জিতেছে ২-১ ব্যবধানে। রাশফোর্ডের আগে ইউনাইটেডের হয়ে সমতা ফেরানো গোলটা করেছিলেন ব্রুনো ফার্নান্দেজ। এর আগে ৬০ মিনিটে সিটিকে এগিয়ে দিয়েছিলেন জ্যাক গ্রিলিশ।
ইউনাইটেডের এই জয়ে জমে উঠেছে প্রিমিয়ার লিগে পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষ চারের লড়াই। কে জানে, হয়তো কিছুটা প্রলেপ পড়েছে এই সিটির কাছেই গত বছরের অক্টোবরে দুঃসহ সেই হারের স্মৃতিতেও।
লিগে দুই দলের সর্বশেষ দেখা হয়েছিল গত বছরের ২ অক্টোবর। ইতিহাদের সেই ম্যাচটা বোধ হয় ভুলে যেতে পারলেই বাঁচে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ৬-৩ গোলের হার কোন দলই–বা মনে রাখতে চায়! কিন্তু সেই ইউনাইটেড আর এই ইউনাইটেডে যে অনেক তফাত।
এরিক টেন হাগ এত দিনে দলটাকে বেশ গুছিয়ে নিয়েছেন, তাঁর অধীনে রাশফোর্ড-এরিকসেন-কাসেমিরোরা ফিরেছেন চেনা ছন্দে। যার ফল, সিটির কাছে সেই হারের পর ১১ ম্যাচে ইউনাইটেডের ৮ জয়, ২ ড্রয়ের বিপরীতে হার মাত্র একটি! ১৮ ম্যাচে ৩৮ পয়েন্ট নিয়ে আপাতত প্রিমিয়ার লিগেও পয়েন্ট তালিকায় ৩ নম্বরে টেন হাগের দল। সমান ম্যাচে ৩৯ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে সিটি। শীর্ষে থাকা আর্সেনালের ১৭ ম্যাচে পয়েন্ট ৪৪।
৬ জানুয়ারি প্রিমিয়ার লিগে চেলসির বিপক্ষে ম্যাচটার পর সংবাদ সম্মেলনে হাসতে হাসতে সিটির কোচ পেপ গার্দিওলা নিজেকে জিনিয়াস দাবি করেছিলেন। কারণও ছিল। ড্র হবে হবে ভাব ছিল ম্যাচটার, ঠিক তখন গার্দিওলা বদলি নামিয়েছিলেন জ্যাক গ্রিলিশ ও রিয়াল মাহরেজকে। দুই মিনিট পরই গ্রিলিশের পাস থেকে মাহরেজের গোলে সিটি এগিয়ে যায় এবং শেষ পর্যন্ত ওই গোলেই জেতে ম্যাচটাও।
সেই একই ঘটনা আজ ওল্ড ট্রাফোর্ডেও ঘটল। ইউনাইটেডের রক্ষণ ভেঙে ঢুকতে পারছিলেন না তার কোনো খেলোয়াড়। প্রথমার্ধে প্রতিপক্ষের গোলমুখ বরাবর কোনো শটই নিতে পারেনি সিটি। সেটা দেখেই কি না, ৫৭ মিনিটে গার্দিওলা ফিল ফোডেনের বদলি নামালেন গ্রিলিশকে। এর দুই মিনিট পরই ডান পাশ দিয়ে দারুণভাবে ঢুকে কেভিন ডি ব্রুইনা বল বাড়ালেন ইউনাইটেডের বক্সে। গ্রিলিশ একেবারে তৈরিই হয়ে ছিলেন হেডের জন্য। বলটাও পড়ল তাঁর মাথায় এসেই। এই সুযোগ কি আর নষ্ট করা যায়!
ওই গোলটার আগে অবশ্য সিটি বল দখলে রাখা ছাড়া আর কোনো বলার মতো আক্রমণ করতে পারেনি। বরং প্রতি আক্রমণে মার্কাস রাশফোর্ডকে সামলাতে বেগ পেতে হয়েছে সিটির রক্ষণভাগকে। দুবার খুব ভালো সুযোগ পেয়েছেন ইংলিশ ফরোয়ার্ড, একবার বাঁচিয়েছেন সেন্টারব্যাক ম্যানুয়েল আকানজি, আরেকবার গোলরক্ষক এদেরসন। ওদিকে বিরতির ঠিক আগে আগে ৩৫ গজ দূর থেকে নেওয়া কাইল ওয়াকারের একটা শট বেরিয়ে যায় দাভিদ দে হায়ার ডান পাশ দিয়ে।
কিন্তু ৬০ মিনিটে গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়ার পর একেবারে মরিয়া হয়ে ওঠে ইউনাইটেড। ফল পেতে অবশ্য অপেক্ষা করতে হয় ৭৮ মিনিট পর্যন্ত। কাসেমিরোর বাড়ানো বলে ফার্নান্দেজের করা গোলটায় অবশ্য প্রথমে রাশফোর্ডকে অফসাইড ধরেছিলেন সহকারী রেফারি। তবে রাশফোর্ড যেহেতু বল ধরেননি, অফসাইডটা বাতিল করে দেন রেফারি, টিকে যায় গোল। এর চার মিনিট পর রাশফোর্ড নিজেই গোল পেয়ে যান এবং সেটাই গড়ে দেয় দুই দলের মধ্যে ব্যবধান।
কোচ হিসেবে ক্যারিয়ারের ৫০০তম লিগ ম্যাচটায় তাই হারের তিক্ত স্বাদই পেতে হলো পেপ গার্দিওলাকে।