বার্সার ইতিহাসে সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় ফিলিপ কুতিনহো
বার্সার ইতিহাসে সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় ফিলিপ কুতিনহো

নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে দামি ৩ খেলোয়াড়ের কাছ থেকে যা পেল বার্সেলোনা

৩৮ কোটি ইউরোয় কিনে ৯ কোটি ইউরোতে বিক্রি। ক্ষতি ২৯ কোটি ইউরো। যার মধ্যে ২২ কোটি ইউরো এসেছিল নেইমারকে বিক্রি করে। বলা হচ্ছে বার্সেলোনার সবচেয়ে দামি তিন খেলোয়াড়ের কথা। ফিলিপে কুতিনিও, উসমান দেম্বেলে ও আঁতোয়ান গ্রিজমানকে কেনার কারণে যে অর্থনৈতিক ক্ষতি, তার বোঝা এখনো টানছে বার্সা। শুধু অর্থনৈতিক দিক থেকেই নয়, মাঠের খেলা ও দলের ভারসাম্য নষ্ট করার ক্ষেত্রেও এই তিনটি দলবদলের প্রভাব ছিল ব্যাপক।

বার্সার ইতিহাসের সবচেয়ে দামি তিন খেলোয়াড়ের দুজন ফিলিপে কুতিনিও আর আঁতোয়ান গ্রিজমান আগেই বার্সা ছেড়ে গেছেন। এবার একই পথে হাঁটছেন উসমান দেম্বেলেও। এ তিনজনের দলবদল শুধু বার্সার ইতিহাসেই নয়, সামগ্রিক দলবদলের ইতিহাসেই ব্যর্থতার অন্যতম দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।

হতাশ করেছেন কুতিনহো

ফিলিপে কুতিনিও
কেনা: ১৩ কোটি ৫০ লাখ ইউরো, বিক্রি: ২ কোটি ইউরো

কী এক যুদ্ধ! হ্যাঁ, ফিলিপ্পে কুতিনিওকে লিভারপুল থেকে বার্সেলোনায় আনতে রীতিমতো এক ‘যুদ্ধ’ই লেগে গিয়েছিল দুই পক্ষের। নিজেদের সেরা খেলোয়াড়কে ছাড়তে অনড় অবস্থান নিয়েছিল লিভারপুল। দলকে সাফল্যের চূড়ায় নিতে লিভারপুল বস ইয়ুর্গেন ক্লপের তুরুপের তাসও ছিলেন কুতিনিও। কিন্তু বার্সা যেকোনো মূল্যে কুতিনিওকে দলে টানতে মরিয়া হয়ে মাঠে নামে। ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার নিজেও উন্মুখ হয়ে ছিলেন বার্সায় যেতে। উদ্দেশ্য, চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর শেষ পর্যন্ত বার্সা ও কুতিনিওর ইচ্ছারই জয় হলো। লিভারপুল থেকে ক্লাব রেকর্ড ১৩ কোটি ৫০ লাখ ইউরোয় বার্সেলোনায় আসেন কুতিনিও। আর এরপর কী হয়েছে, তা তো সবারই জানা

লিভারপুলের দুর্দান্ত কুতিনিও বার্সায় গিয়ে হারিয়ে ফেললেন নিজেকে। অনেক চেষ্টার পরও মানিয়ে নিতে না পেরে ধারে চলে যান বায়ার্ন মিউনিখে। এরপর আবার বার্সায় ফিরে চেষ্টা করেছিলেন থিতু হতে। কিন্তু কিছুতেই যেন কিছু হওয়ার নয়। বার্সা ২০২২ সালে ধারে অ্যাস্টন ভিলায় পাঠায় কুতিনিওকে। শেষ পর্যন্ত পাকপাকিভাবে ভিলা পার্কের ক্লাবটি কিনে নেয় তাঁকে।

বার্সায় তাঁর সময়টা দুই পক্ষের জন্যই মন খারাপের অধ্যায় হয়েই আছে। ক্লাবটির হয়ে ১০৬ ম্যাচে মাত্র ২৫ গোল ও ১৪টি গোলে সহায়তা করেছেন এই ব্রাজিলিয়ান। আর যে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার জন্য কুতিনিও লিভারপুল ছেড়েছিলেন, সেই ট্রফিটির দেখাও পাননি। অন্যদিকে অ্যানফিল্ডের ক্লাবটি কুতিনিও ছাড়াই জিতেছে চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা।

এখানেও অবশ্য পরোক্ষভাবে অবদান আছেন তাঁর। কুতিনিওকে বিক্রির পরই মূলত ভার্জিল ফন ডাইক ও আলিসন বেকারকে কেনে লিভারপুল। পরের মৌসুমে লিভারপুলের চ্যাম্পিয়নস লিগ জয় এবং ২০১৯–২০ মৌসুমে ক্লাবটির লিগ শিরোপা জেতার পথে দারুণ অবদান রাখেন তাঁরা, যা প্রমাণ করে কুতিনিওকে বিক্রি করাটা লিভারপুলের জন্য শাপেবরই ছিল। অন্যদিকে লিভারপুল ছাড়াটা কুতিনিওর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে সিদ্ধান্ত হয়েই থেকে গেল। বার্সার ইতিহাসের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়টিই হলেন দলের সবচেয়ে বাজে সাইনিং।

বার্সেলোনা তারকা উসমান দেম্বেলে

উসমান দেম্বেলে
কেনা: ১২ কোটি ৫০ লাখ ইউরো, বিক্রি: ৫ কোটি ইউরো

বার্সেলোনার দ্বিতীয় দামি খেলোয়াড়ের অবস্থাও কিন্তু প্রথমটির চেয়ে ভিন্ন নয়। উসমান দেম্বেলেকে ২০১৭ সালে ১২ কোটি ৫০ লাখ ইউরোতে কিনে নেয় বার্সা। এখন বার্সা ছেড়ে পিএসজিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে কাতালান ক্লাবটির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলেছেন এই ফরাসি তারকা। ২০১৭ সালে নেইমার রেকর্ড দামে পিএসজিতে যাওয়ার পর তাঁর বিকল্প হিসেবে বার্সায় এসেছিলেন দেম্বেলে। কিন্তু দারুণ সম্ভাবনা নিয়েও দেম্বেলে কখনোই নিজেকে নেইমারের বিকল্প হিসেবে প্রমাণ করতে পারেননি।

মাঝেমধ্যে জ্বলে উঠলেও তাঁর পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতার অভাব ছিল স্পষ্ট। এর সঙ্গে আচরণগত সমস্যা ও চোটও ছিল নৈমিত্তিক ঘটনা। একাধিকবার তাঁর বার্সা ছাড়ার গুঞ্জনও সামনে এসেছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ছয় বছর ধরে বার্সার খেলোয়াড় হয়েই থেকে গেছেন দেম্বেলে। এমনকি ২০২৪ সাল পর্যন্ত বার্সার সঙ্গে চুক্তিও নবায়ন করেন এই ফরাসি তারকা। জাভির অধীনে নতুন করে জ্বলে ওঠার ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন দেম্বেলে। এর মধ্যে প্রাক্‌–মৌসুম প্রস্তুতিতে আলো ছড়িয়ে আগামী মৌসুমের জন্যও আশা জাগিয়েছিলেন। কিন্তু বার্সা যখন দেম্বেলের কাছ থেকে অর্থের মূল্য পাওয়ার অপেক্ষায়, তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন পিএসজিতে যাওয়ার, যা একই সঙ্গে বার্সায় তাঁর অধ্যায়কে ব্যর্থ হিসেবেই চিহ্নিত করে গেল।

বার্সা ব্যর্থ গ্রিজমানও

আঁতোয়ান গ্রিজমান
কেনা: ১২ কোটি, বিক্রি: ২ কোটি ইউরো

আক্রমণভাগের ঘাটতি পূরণেই আতলেতিকো মাদ্রিদ থেকে গ্রিজমানকে দলে ভেড়ায় বার্সেলোনা। ২০১৯ সালে রিলিজ ক্লজের ১২০ মিলিয়ন শোধ করেই এই ফরাসি তারকাকে নিয়ে আসে বার্সা। কিন্তু বার্সায় শুরু থেকেই নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন বিশ্বকাপজয়ী এই ফুটবলার। এমনকি মাঝে তাঁর সঙ্গে লিওনেল মেসির বিরোধের খবরও সামনে আসে

সব মিলিয়ে বার্সায় কখনোই সেভাবে থিতু হতে পারেননি গ্রিজমান। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বার্সায় থেকে গ্রিজমানের একমাত্র অর্জন কোপা দেল রে ট্রফি। এ সময়ে ১০২ ম্যাচে তাঁর গোল সংখ্যা ছিল ৩৫ এবং সহায়তা করেছেন আরও ১৭ গোলে। এর মধ্যে ২০২১ সালের গ্রীষ্মে আতলেতিকোতেই ধারে ফেরত যান বিশ্বকাপজয়ী এই ফুটবলার। পরে তাঁকে পাকাপাকিভাবে কিনেও নেয় আতলেতিকো। বার্সার তৃতীয় সর্বোচ্চ দামি খেলোয়াড়টিরও শেষ পর্যন্ত ঠাঁই হয়েছে ব্যর্থদের তালিকাতেই।