ফুটবল ম্যাচ তো নয়, যেন ‘যুদ্ধ’। সেই যুদ্ধ জিতে সেমিফাইনালে উঠেছে আর্জেন্টিনা। ‘ব্যাটল অব লুসাইল’ নিয়ে আলোচনা অবশ্য এখনো চলছে। বিশেষ করে ওই ম্যাচে আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের আচরণ নিয়ে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে ইউরোপিয়ান সংবাদমাধ্যমে। আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনির যা ভালো লাগার কোনোই কারণ নেই। তাঁর এই চাওয়াও খুবই স্বাভাবিক যে এ আলোচনা যেন এখানেই শেষ হয়।
ম্যাচে দুই দলের মধ্যে মারামারি হয়েছে। শেষ দিকে আর্জেন্টিনার অতিরিক্ত খেলোয়াড়েরা ও কোচিং স্টাফও ঢুকে গেছেন মাঠে। রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেকবারই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়েরা। ম্যাচ শেষ হওয়ার পর টাইব্রেকারে হেরে যাওয়ার যন্ত্রণায় কাতর ডাচ খেলোয়াড়দের দিকে ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিও করেছেন আর্জেন্টিনার কয়েকজন।
সবচেয়ে অবাক করার মতো ছিল লিওনেল মেসির আচরণ। ম্যাচের আগে নেদারল্যান্ডসের কোচ লুই ফন গাল মেসিকে নিয়ে তাঁর পর্যবেক্ষণ জানিয়েছিলেন। এমন আপত্তিকর কিছু নয়। প্রতিপক্ষ যখন আক্রমণে ওঠে, মেসি তখন কিছুই করেন না—এটুকুই। এতেই মেসি এমন ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন যে ম্যাচ শেষে তিনি লুই ফন গালের ওপর রীতিমতো চড়াও হন।
স্প্যানিশ রেফারি আন্তোনিও মাতেও লাহোজের ওপর ক্ষোভও গোপন রাখেননি আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়েরা। মেসি এক রকম নালিশই দিয়েছিলন ফিফার কাছে। রেফারিং নিয়ে সত্যি কথা বলা কঠিন; কারণ, তা বললে ফিফা শাস্তি দিয়ে দেবে বলার পর ফিফার করণীয়টাও বলে দিয়েছিলেন, ‘ফিফার উচিত বিষয়গুলো খেয়াল করা। এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি ম্যাচে এ ধরনের একজন রেফারিকে ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া উচিত নয়।’
আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেজ আরও চাঁছাছোলা ভাষায় সমালোচনা করেছিলেন রেফারির। রেফারি নেদারল্যান্ডসের হয়ে স্কোর করতে চেয়েছিলেন, এমন ভয়ংকর কথাও। কোনো ম্যাচে কোনো দল পাঁচটির বেশি হলুদ কার্ড পেলেই ফিফা থেকে ওই দলকে নিয়ে তদন্ত হয়। আর এই ম্যাচে তো লাহোজ হলুদ কার্ড দেখানোর রেকর্ডই করে ফেলেছেন। ফিফা তাই দুই দলের আচরণই তদন্ত করে দেখার ঘোষণা দিয়েছে। সেটির ফল এখনো জানা না গেলেও মেসির চাওয়া এরই মধ্যে পূরণ হয়ে গেছে। রেফারি আন্তোনিও মাতেও লাহোজকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে ফিফা।
আর্জেন্টিনা-ক্রোয়েশিয়া সেমিফাইনালের আগে দুই দলের সংবাদ সম্মেলনেই ‘ব্যাটল অব লুসাইল’-এর প্রসঙ্গ উঠল। ক্রোয়েশিয়ার কোচ জ্লাতকো দালিচ স্বাভাবিকভাবেই তা নিয়ে বেশি কথা বললেন না। যা বললেন, তার মর্মার্থ—ফুটবলে কখনো কখনো বেশি আবেগে এমন কিছু হয়ে যায়। এই বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার কাছে প্রত্যাশা অনেক বেশি। এ কারণেই হয়তো এমন হয়েছে।
আর্জেন্টিনার সংবাদ সম্মেলনে কোচ লিওনেল স্কালোনির সঙ্গে এসেছিলেন ডিফেন্ডার নিকোলাস তালিয়াফিকো। তিনিও ওই আবেগকেই ‘দোষ’ দিলেন, ‘ফুটবলে এমন হয়ই। ফুটবলাররাও তো মানুষ, যন্ত্র নয়। দুটি দেশ সেমিফাইনালের একটা জায়গার জন্য কোয়ার্টার ফাইনালে লড়ছে। চাপটাও তো দেখবেন, নাকি?’
ওই ম্যাচে ও ম্যাচের পরের মেসিকে অনেকেই এত দিনের চেনা মেসির সঙ্গে মেলাতে পারছেন না। তবে তালিয়াফিকো এতে নতুন কিছু দেখছেন না। মেসি নাকি সব সময়ই এ রকম! স্কালোনির কথার সুরও অনেকটা একই রকম। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচে স্কালোনি নিজেও হলুদ কার্ড দেখেছেন। ওই ম্যাচটা যে কখনো কখনো ফুটবলের সীমা ছাড়িয়ে গেছে, এটা তাঁর না বোঝার কোনোই কারণ নেই। প্রতিপক্ষ বা রেফারি সম্পর্কে কোনো অভিযোগ না করে স্কালোনি আত্মপক্ষ সমর্থন করলেন অতীত টেনে এনে।
তা কী বললেন তিনি? ‘এটাই ফুটবল। ফুটবলে কখনো কখনো এমন হয়। রেফারি আছেন তো এ জন্যই। আনস্পোর্টিং বলে আমাদের যে সমালোচনা হচ্ছে, তা ঠিক নয়। আমরা জানি, কীভাবে হারতে হয়, কীভাবে জিততে হয়। আমরা সৌদি আরবের কাছে হেরেছি, হারার পর তো একটা কথাও বলিনি। মারাকানায় কোপা আমেরিকা ফাইনালে জেতার পর মাঠে নেইমার, মেসি আর পারেদেস মিলে কী অপূর্ব একটা দৃশ্যের জন্ম হয়েছিল! আর্জেন্টিনাকে নিয়ে এ আলোচনা এখানেই বন্ধ হওয়া উচিত।’