আর্সেনালের জয়ের পথে বড় বাধা কোচ উনাই এমেরি ও গোলরক্ষক মার্তিনেজ
আর্সেনালের জয়ের পথে বড় বাধা কোচ উনাই এমেরি ও গোলরক্ষক মার্তিনেজ

সাবেক দুই গানার এমেরি–মার্তিনেজই আজ আর্সেনালের বড় বাধা

‘ইনভিন্সিবল’ বা অপরাজেয়-২০০৩-০৪ মৌসুমে সর্বশেষ লিগ শিরোপা জয়ের পর এই বিশেষণের ভারেই যেন নুইয়ে পড়েছিল আর্সেনাল। কোনো ম্যাচ না হারার জাদুকরি সেই মৌসুমের পর ১৯ বছরে আর কোনো লিগ শিরোপা জেতা হয়নি দলটির।

আর্সেনালের লিগ শিরোপা যেন ওয়াশিংটন আরভিংয়ের সেই অমর চরিত্র ‘রিপ ভ্যান উইঙ্কল’-এর মতো ঘুমিয়ে পড়েছিল। সর্বশেষ লিগ জেতানো কোচ আর্সেন ওয়েঙ্গারের শত চেষ্টাতেও ভাঙেনি সে ‘ঘুম’।

‘ওয়েঙ্গার ভাগো’—স্লোগানের চাপে একসময় হতাশা নিয়ে বিদায় নেন ২২ বছর ধরে আর্সেনালের ডাগআউট সামলানো ফরাসি সেই কোচও। এরপর উনাই এমেরি এসেও কিছু বদলাতে পারেননি। সেই না পারাকে এবার জাদুমন্ত্রে বদলে দেওয়ার দায়িত্বটা নিজের কাঁধে তুলে নেন মিকেল আরতেতা। মৌসুমের শুরু থেকেই দারুণ ছন্দে ছিল তাঁর দল।

একসময় আর্সেনালের লিগ শিরোপা পুনরুদ্ধারকে মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার। কিন্তু গত দুই সপ্তাহে হিসাব–নিকাশ ওলট-পালট হয়ে গেছে। এ দুই সপ্তাহে টানা তিন লিগ ম্যাচে জয়বঞ্চিত থেকে শীর্ষস্থান হারিয়েছে গানাররা। সর্বশেষ ম্যানচেস্টার সিটির কাছে হেরেছে ৩-১ গোলে। সমান ৫১ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে ওঠার পথে সিটি মূলত গোল ব্যবধানে এগিয়ে আছে। পেপ গার্দিওলার দল অবশ্য একটি ম্যাচ বেশিও খেলেছে।

দারুণ শুরুর পর লিগে পথ হারিয়েছে মিকেল আরতেতার আর্সেনাল

এ পরিস্থিতিতে আজ সন্ধ্যায় অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে ম্যাচটি আর্সেনালের জন্য মহাগুরুত্বপূর্ণ। ম্যাচটি জিতলে আবার সিটিকে টপকে শীর্ষে ওঠার সুযোগ আছে এমিরেটসের দলটির। কিন্তু হোঁচট খেলে আর্সেনালের শিরোপা-স্বপ্ন যে বড় ধাক্কা খাবে, তা বলাই বাহুল্য। এ পথে তাদের সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে উঠতে পারেন আর্সেনালেরই সাবেক দুই সদস্য।

যেখানে অ্যাস্টন ভিলার ডাগআউটে দাঁড়াবেন সাবেক আর্সেনাল কোচ উনাই এমেরি এবং গোলপোস্টের নিচে দেখা যাবে আর্সেনালের সাবেক গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেজকে। শীর্ষে উঠতে হলে আর্সেনালকে আজ হারাতে হবে এই দুজনকে।

ওয়েঙ্গারের বিদায়ের পর এমেরিই প্রথম দাঁড়িয়েছিলেন আর্সেনালের ডাগআউটে। তবে লন্ডনের এই ক্লাবের সঙ্গে তাঁর যাত্রাটা একেবারেই সুখকর হয়নি। ২০১৮ সালের মে মাসে দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০১৯ সালের নভেম্বরেই দায়িত্ব ছাড়তে হয় তাঁকে। টানা ৭ ম্যাচ জয়বঞ্চিত থাকার দায়েই মূলত ছাঁটাই হয়েছিলেন এই কোচ। তাঁর বিদায়ের পর আর্সেনালে আসার পথটা তৈরি হয় মিকেল আরতেতার। এ মৌসুমেও গত সেপ্টেম্বরে লিগের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল দুই দল।

এমেরির সঙ্গে আর্সেনালের পথচলাটা সুখকর ছিল না

সেই ম্যাচে দারুণ ছন্দে থাকা আর্সেনালের কাছে ২-১ গোলে হেরেছিল ভিলা পার্কের ক্লাবটি। তখন অ্যাস্টন ভিলার ডাগআউটে এমেরি ছিলেন না। তিনি দায়িত্ব নেন নভেম্বরে। আর এখন পরিস্থিতিও একেবারেই ভিন্ন। লিগ শিরোপা জিততে হলে এ মুহূর্তে প্রতিটি ম্যাচ বাঁচা-মরার। আর আর্সেনালের ভেতরের অনেককিছুই এমেরির জানা আছে। তাই আজ বড় চ্যালেঞ্জেই পড়তে হতে পারে আরতেতার দলকে।

ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে অবশ্য আর্সেনালে নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে বেশ ইতিবাচক কথাই বলেছেন এমেরি, ‘আর্সেনালে আমার অভিজ্ঞতাটা ভালো ছিল। আমি সেখানকার সময়টা উপভোগ করেছি। সেই মুহূর্ত থেকে পাওয়া শিক্ষাগুলো কাজে লাগাতে হবে। সেখান থেকে শক্তি নিতে হবে। আমার মনে হয়, আর্সেনালের অভিজ্ঞতার পর আমি কোচ হিসেবে আরও ভালো হয়েছি। আমি আর্সেনালের কাছে কৃতজ্ঞ।’

এমেরি অবশ্য যতই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন, আজ তাঁর লক্ষ্যটা যে আর্সেনালকে হারানো, সেই আকাঙ্ক্ষাও গোপন করেননি, ‘আমাদের চ্যালেঞ্জটা পরিষ্কার। আমি যখন এসেছি, তখন দল তলানিতে ছিল। এখন আমরা সেরা দশে শেষ করার সম্ভাবনা দেখছি। আর আমি ভাবছি প্রতিটি ম্যাচ নিয়ে। এবার আমরা আর্সেনালের মুখোমুখি হব। তারা ভালো দল এবং ভালো সময় পার করছে। তারা যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে শেষ ম্যাচে তাদের পারফরম্যান্সের (সিটির কাছে হার) কারণে কিছুই বদলাবে না।’

মার্তিনেজের গল্পটা অবশ্য একটু ভিন্ন। কাগজে–কলমে ২০১২-২০ সাল পর্যন্ত ৮ বছর আর্সেনালে ছিলেন। তবে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের নায়কের ওপর কখনোই বিশ্বাস রাখতে পারেনি গানাররা। অ্যাস্টন ভিলায় আসার আগপর্যন্ত এই ৮ বছরে ৬টি ক্লাবে তাঁকে ধারে পাঠিয়েছিল আর্সেনাল। আর আর্সেনালে তাঁর জীবনটাই যেন হয়ে উঠেছিল বেঞ্চময়। বিশ্বকাপ জেতার পর আর্সেনালে নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে আক্ষেপ করে মার্তিনেজ বলেছিলেন, ‘আর্সেনালে আমি প্রায় এক দশক ধরে বেঞ্চে ছিলাম। আর আমি যখন প্রস্তুত ছিলাম, তখন তারা আমাকে বলেছিল, তুমি আর এক নম্বর গোলরক্ষক নও। আর আজ আমি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন।’

আর্সেনাল নিয়ে মার্তিনেজের অসন্তুষ্টি এই কথাগুলোতেই স্পষ্ট। সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত-সমালোচিত মার্তিনেজ যদি ‘প্রতিশোধের’ প্রতিজ্ঞা নিয়ে আজ আর্সেনালের সামনে আবির্ভূত হন, তবে কপালটা পুড়তেই পারে শিরোপা–স্বপ্নে বিভোর ক্লাবটির।