ভিনিসিয়ুস বারবার কেন বর্ণবাদের শিকার হচ্ছেন!
রিয়াল মাদ্রিদের ব্রাজিলিয়ান তারকা এই মৌসুমে পাঁচবার দর্শকের কাছ থেকে বর্ণবাদী মন্তব্য শুনেছেন। ভিনিসিয়ুস নিজেও এটি নিয়ে ভয়াবহ ক্ষুব্ধ। তিনি কাঠগড়ায় তুলেছেন লা লিগা কর্তৃপক্ষকে। রিয়াল তারকার অভিযোগ, লা লিগা কর্তৃপক্ষ দর্শকের এমন বিদ্বেষপূর্ণ আচরণের কোনো প্রতিকার করেনি। তার মানে, লা লিগা কর্তৃপক্ষই বর্ণবাদ আর বর্ণবাদীদের প্রশয় দিচ্ছে।
গত রোববার ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে এক দর্শক ভিনিসিয়ুসকে ‘বানর’ বলে গালি দেন। ভিনিসিয়ুস এরপর তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান। সেটি দেখানোই স্বাভাবিক। ঘটনাটি নাড়িয়ে দিয়েছে স্প্যানিশ ফুটবলকে, এমনকি স্পেন দেশটাকেও। রিয়াল মাদ্রিদ ফুটবলার সরাসরি বলেছেন, ‘ব্রাজিলিয়ানদের কাছে স্পেন এখন বর্ণবাদী দেশ।’
তিনি এ ঘটনায় অভিযুক্ত করেছেন লা লিগা কর্তৃপক্ষকেও। ভিনির অভিযোগ, প্রথম থেকে বর্ণবাদের একটি ঘটনারও সুষ্ঠু তদন্ত কিংবা দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারেনি ইউরোপের অন্যতম সেরা এই ফুটবল লিগ।
প্রথমে ভিনিসিয়ুসের মন্তব্যের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখালেও লা লিগা সভাপতি হাভিয়ের তেবাস এখন নমনীয়। গতকাল একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তেবাস ভিনিসিয়ুসের অভিযোগের বিরুদ্ধে পাল্টা তির ছোড়ার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। তিনি বর্ণবাদকে লা লিগা থেকে উচ্ছেদের জন্য স্পেন সরকারের সহযোগিতাও চেয়েছেন।
বৃহস্পতিবারই এক সংবাদ সম্মেলনে তেবাস ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, কেন ভিনিসিয়ুস বারবার বর্ণবাদের শিকার হচ্ছেন। একই সঙ্গে তিনি রিয়াল মাদ্রিদের ব্রাজিলীয় ফুটবলারের সঙ্গে দেখা করারও অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। ভিনিসিয়ুস কেন বারবার বর্ণবাদের শিকার হচ্ছেন, এ নিয়ে তেবাসের পর্যবেক্ষণ বেশ অদ্ভুত। তিনি বলেছেন, ‘ভিনিসিয়ুস দুর্দান্ত এক খেলোয়াড়, সে কারণেই সে বারবার বর্ণবাদী আক্রমণের শিকার হচ্ছে।’
এই পর্যবেক্ষণের ব্যাখ্যায় টেনে এনেছেন লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকেও, ‘দেখুন মেসি ও রোনালদোও দর্শকের কাছ থেকে বারবার অপমানের শিকার হয়েছে। সবচেয়ে বেশি অপমানও তাদেরই সইতে হয়েছে। কারণ, তারা কিংবদন্তি। এ কারণেই একধরনের বিকৃতি থেকেই তাদের অপমান করা হয়। ভিনিসিয়ুসকেও ঠিক সে কারণেই অপমানের মধ্য দিয়ে যেতে হয়।’
তেবাস ভিনিসিয়ুসকে সাহায্যই করতে চান। প্রয়োজনে তাঁর সঙ্গে দেখাও করতে চান। লা লিগা সভাপতি ভিনিসিয়ুসকে দেখাতে চান, বর্ণবাদ দমনে তাঁরা কতটা আন্তরিক, ‘আমি ভিনিসিয়ুস অথবা তার প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলতে চাই। আমি তাকে দেখাতে চাই যে বর্ণবাদ দমনে আমরা কী কী করছি। আমরা ভিনির সামনে প্রমাণ করতে চাই, লা লিগা এমনই একটা প্রতিষ্ঠান, যারা বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সব সময়ই লড়াই করে যাচ্ছে।’
লা লিগার ইতিহাস যেকোনো ধরনের বিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াই করার। এটা সবাইকে মনে করিয়ে দিয়েছেন তেবাস, ‘আমাদের এর আগে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ইতিহাস আছে। একসময় লা লিগার ম্যাচগুলোতে সমকামী বিদ্বেষ কিংবা বিদেশিদের প্রতি বিদ্বেষমূলক স্লোগান দিতে দেখা যেত। আমরা সেগুলো বন্ধ করেছি। এখন সেগুলো নেই। এখন বর্ণবাদী স্লোগান যারা দিচ্ছে, তাদের সংখ্যাও খুব কম। আমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়ব। বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াইটা প্রতিদিনের।’