শেষ পর্যন্ত কোন দল শিরোপা জিতবে, এটা অনুমান করতে বললে ভিন্ন ভিন্ন নাম শোনা যাবে। তবে এবারের ইউরোতে এখন পর্যন্ত টিকে থাকা চারটা দলের মধ্যে সেরা ফুটবল কারা খেলেছে, এই প্রশ্নের উত্তরে মনে হয় না খুব বেশি দ্বিমত আসবে। উত্তরটা সহজ—স্পেন।
সমস্যা হচ্ছে, সেমিফাইনাল কিংবা ফাইনাল, এ ধরনের নকআউট ম্যাচে সব সময় ভালো দলটা জেতে না। এসব ম্যাচে কখনো কখনো ভাগ্যের সহায়তা লাগে। ফলে মিউনিখের ফুটবল অ্যারেনায় আজ ইউরোর সেমিফাইনালে স্পেনই ফেবারিট, এটা বলার উপায় নেই। আর প্রতিপক্ষ দলটার নাম যেহেতু ফ্রান্স, এই ম্যাচে তাই কোনো দলকেই খুব বেশি এগিয়ে রাখার সুযোগ নেই।
এটা সত্যি, এই ইউরোতে এখনো ফ্রান্সকে সেরা রূপে দেখা যায়নি। বিশ্বাস করা কঠিন যে মাত্র তিনটা গোল করে এই ফ্রান্স সেমিফাইনাল পর্যন্ত চলে এসেছে। আরও অবিশ্বাস্য যে এই তিন গোলের দুটি আত্মঘাতী এবং একটি পেনাল্টি থেকে। উন্মুক্ত খেলায় ফ্রান্স এখন পর্যন্ত এই ইউরোতে কোনো গোলই করেনি।
সেই ফ্রান্সই আজ মুখোমুখি হচ্ছে টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি ১১ গোল করা স্পেনের, যারা এই টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত সব ম্যাচ জেতা একমাত্র দলও। এ রকম প্রতিপক্ষের সামনে পড়ার আগে ফ্রান্সের আক্রমণভাগের নিষ্ক্রিয়তা কিছুটা হলেও দুশ্চিন্তায় ফেলার কথা কোচ দিদিয়ের দেশমকে। বিশেষ করে অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই চোট পেয়ে নাক ভেঙে ফেলার পর থেকে ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পে যেন নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন। তবে ইউরোতে যে এখন পর্যন্ত চেনা এমবাপ্পেকে দেখা যায়নি, এটা নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নন দেশম। তিনি তো এরই মধ্যে বলে দিয়েছেন, ‘এমনকি সে যদি শতভাগ ফিট না–ও থাকে, তারপরও আমি খুব ভালো করেই জানি, সে খেলবে এটা জেনেই প্রতিপক্ষকে তাকে নিয়ে ভাবতে হবে।’
এটা অবশ্য খুবই সত্যি কথা। অনেকের চোখেই এ সময়ের সেরা খেলোয়াড় এমবাপ্পের উপস্থিতিই প্রতিপক্ষ রক্ষণভাগের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ। স্পেনের এই দুশ্চিন্তা আজ আরও বেড়ে যাচ্ছে, কারণ তাদের রক্ষণভাগের দুই আস্থা, দানি কারভাহাল ও রবিন লে নরমাঁ, হলুদ কার্ডের খড়্গে পড়ে এই ম্যাচে খেলতে পারবেন না। ওদিকে হাঁটুর চোটে পেদ্রিকেও স্পেন পাবে না এই ম্যাচে। একাদশেই নিয়মিত এই তিন খেলোয়াড়কে ছাড়া স্পেন আজ কেমন করে সেটা দেখার অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।
তবে সবচেয়ে বেশি যাকে দেখার অপেক্ষায় থাকবেন স্প্যানিশ সমর্থকেরা, তাঁর নাম লামিয়ে ইয়ামাল। এরই মধ্যে ইউরোর ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হওয়ার রেকর্ড গড়েছেন ১৭ বছর বয়সী এই বার্সেলোনা ফরোয়ার্ড। এবারের ইউরোর বিস্ময়বালক তিনি, গোল করছেন, করাচ্ছেন। বার্সেলোনা কেন তাঁকে ক্লাবের ভবিষ্যৎ মনে করছে, সেটা প্রমাণ করতে গিয়ে এবারের ইউরোতে ইয়ামাল বুঝিয়েছেন, তিনি আসলে স্পেনেরও ভবিষ্যৎ।
১৭ বছর বয়সী ইয়ামালের সঙ্গে ২১ বছর বয়সী নিকো উইলিয়ামস, স্পেনের আক্রমণভাগের এই তরুণ দুই তুর্কির সঙ্গে ফরাসি রক্ষণভাগের লড়াইটা দেখার মতোই হওয়ার কথা। স্পেনের এই তারুণ্যের জবাব ফ্রান্স দেবে অভিজ্ঞতা দিয়ে।
বয়স মাত্র ২৫ হলেও এরই মধ্যে ফ্রান্সের হয়ে দুটি বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছেন এমবাপ্পে, চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন একবার। একই রকম অর্জন তাঁর ৩৩ বছর বয়সী সতীর্থ আঁতোয়ান গ্রিজমানেরও। ২০১৬ ইউরোর ফাইনাল খেলা ফ্রান্স ২০১৮ বিশ্বকাপে হয়েছে চ্যাম্পিয়ন, ২০২২ বিশ্বকাপে রানার্সআপ হওয়ার পর এবার আবার ইউরোর সেমিফাইনালে। মাঝে ২০২১ সালে জিতেছে উয়েফা নেশনস লিগের শিরোপাও। বড় মঞ্চে এই অভিজ্ঞতাই আজ স্পেনের বিপক্ষে এগিয়ে রাখতে পারে ফ্রান্সকে। স্পেনের তারুণ্য কীভাবে সেটার জবাব দেয়, আজ সেটাই দেখার অপেক্ষা।