‘বোকার মতো পেনাল্টি’ নিয়ে ক্ষোভ জামাল ভূঁইয়ার। সাদের পাশেই থাকছেন কোচ কাবরেরা
‘বোকার মতো পেনাল্টি’ নিয়ে ক্ষোভ জামাল ভূঁইয়ার। সাদের পাশেই থাকছেন কোচ কাবরেরা

‘বোকার মতো পেনাল্টি’তে জামালের ক্ষোভ, সাদের পাশে কোচ

একদিকে সেশেলসের আনন্দ। অন্যদিকে বাংলাদেশের হতাশা। আজ সন্ধ্যায় সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে দেখা গেল এমনই বিপরীত ছবি।

সেশেলসের সঙ্গে প্রথম ফিফা প্রীতি ম্যাচে বাংলাদেশ ১-০ জিতলেও আজ দ্বিতীয় ম্যাচে একই ব্যবধানে হেরেছে। ডিফেন্ডার সাদ উদ্দিনের বক্সের মধ্যে বিপজ্জনক এক ফাউলে পাওয়া পেনাল্টি কাজে লাগিয়েছে সেশেলস।

নিজেদের চেয়ে ৭ ধাপ পিছিয়ে থাকা দলের সঙ্গে এমন হার মানতে পারছেন না বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। গোল নষ্ট আর প্রতিপক্ষকে পেনাল্টি উপহার দেওয়াই হারের কারণ বলছেন তিনি, ‘ম্যাচে কিছু ভুল ছিল আমাদের। আমরা বারবার ভুল করেছি, পেনাল্টি দিয়েছি বোকার মতো।’

নিজেদের চেয়ে ৭ ধাপ পিছিয়ে থাকা দল সেশেলসকে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ

ম্যাচের ৬০ মিনিটের সময় নিজেদের বক্সে সেশেলসের ফরোয়ার্ডের মাথা বরাবর পা তুলে পেনাল্টি দেন সাদ উদ্দিন। আন্তর্জাতিক ফুটবলে এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো সাদের কারণে পেনাল্টি হজম করতে হলো বাংলাদেশকে।

কোচ আজ দলে কিছু বদল এনেছিলেন। নতুন খেলোয়াড় দেখেছেন। তাই ট্যাকটিক্যাল কিছু বদল আসে তাঁর পরিকল্পনায়। কিন্তু প্রথমার্ধটা একেবারেই ভালো যায়নি বাংলাদেশের। সেশেলসের মতো দলের সঙ্গে প্রথমার্ধে আরও ভালো খেলা উচিত ছিল মন্তব্য করে জামাল বলেন, ‘আমি আর কী বলব, ওদের দেখে পুরো ব্যাপারটি কৌতুককর মনে হয়েছে আমার কাছে। আমাদের জেতা উচিত ছিল।’

জুনে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ভারতে। সেটির প্রস্তুতি হিসেবেই সেশেলসের সঙ্গে ম্যাচ দুটি খেলেছে বাংলাদেশ। সৌদি আরবে ক্যাম্প হয়েছে। সেখানে দুটি ম্যাচও খেলেছেন ফুটবলাররা। এত কিছু করে আসলে কী উন্নতি হলো?

বাংলাদেশকে হারানোর প্রতিজ্ঞা রেখেছে সেশেলস

মাঠের পুরস্কার বিতরণীর ফাঁকে সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে জামালের উত্তর, ‘না, না, অনুশীলনের দরকার আছে। অনেক দিন পর জাতীয় দল প্রীতি ম্যাচ খেলেছে। ম্যাচের দরকার ছিল। অবশ্যই আজ ফলটা ভালো না হওয়ায় আমরা সবাই হতাশ।’ এরপর বললেন সামনে তাকানোর কথাও, ‘আমাদের আরও পরিশ্রম করতে হবে।’

তবে হারের জন্য সাদের ফাউল জামাল দায়ী করলেও কোচ হাভিয়ের কাবরেরা সাদের পাশেই থাকছেন, ‘এটা হতেই পারে। পেনাল্টির জন্য আমি ওকে দোষ দেব না।’

কিন্তু এত ক্যাম্প, অনুশীলন করে দলে বলার মতো উন্নতি বা ধারাবাহিকতা কি ছিল? বলতেই হয় ছিল না। বাংলাদেশের খেলায় কোনো ধারাবাহিকতা নেই। তবে কোচ বলেছেন ভিন্ন কথা, ‘আমি বলব ধারাবাহিকতা আছে। কিন্তু ফলে ধারাবাহিকতা নেই। আজ আমরা ফল পাইনি। এটাই বাস্তবতা। আমাদের আরও উন্নতি করতে হবে।’

বাংলাদেশের খেলা নিয়ে ক্ষোভ জামালের

দুটি ম্যাচের একটিতে দল জিতেছে, অন্যটিতে হেরেছে। এতে নিজের অসন্তোষ জানিয়ে বাংলাদেশ কোচ বলেছেন, ‘আমি খুশি নিই। দুটি ম্যাচেই আমাদের জেতা উচিত ছিল। দুটি ম্যাচই জিতলে সাফের জন্য সেটা অনেক বড় উজ্জ্বীবনী শক্তি হতো। সেটি না হওয়ায় আমি হতাশ।’

বাংলাদেশ কোচ আজ অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়াকে বাদ দিয়ে একাদশে রাখেন পথ হারিয়ে দলের বাইরে গিয়ে আবার ফিরে আসা তরুণ মিডফিল্ডার রবিউল হাসানকে। সেই রবিউল সবার শেষে মাঠ ছাড়ার সময় বললেন, ‘আমরা সবাই যখন মাঠে নামি, জাতীয় পতাকা আমরা বহন করি। ২২-২৩ কোটি (আসলে ১৭ কোটি) মানুষের ইজ্জত থাকে আমাদের ওপর। সবাই চায় মাঠে নিজের সেরাটা দিতে। ফুটবল এমন একটা খেলা, পারফরম্যান্সে ভালো-মন্দ থাকেই। সবাই চেষ্টা করেছে সেরাটা দেওয়ার জন্য।’

প্রথমার্ধে খেলাটা তুলনামূলক খারাপ হয়েছে জানিয়ে রবিউলের কথা, ‘ঘরের মাঠে ফল পাওয়া উচিত ছিল আমাদের। দেশের মানুষ আশা করেছিল দুটি ম্যাচই আমরা জিতব। দুটি ম্যাচ জিতলে র‍্যাঙ্কিংয়ে এগোতে পারতাম। আজ জিতলে আরও বেশি আত্মবিশ্বাস নিয়ে সাফে যেতে পারতাম আমরা।’

সাফের আগে সেশেলসের কাছে হার একটা ধাক্কাই

ম্যাচ শেষে কোচ কী বলেছেন রবিউল জানিয়েছেন সেটাও , ‘কোচ বলেছেন, সমস্যা নাই। খেলায় হার–জিত থাকেই। তোমাদের আরও উন্নতি করতে হবে। লিগের দ্বিতীয় পর্বের ৩ ম্যাচ পরই উনি আমাদের ডাকবেন বলেছেন। দুর্বলতাগুলো নিয়ে কাজ করবেন। সাফে যে এর প্রভাব না পড়ে, সেই চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন।’

সেশেলস কোচ নেভিল বোথ ছিলেন খুশি। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে হারের পর নিজের ফুটবলারদের বলেছিলেন বাংলাদেশকে হারানো সম্ভব, ‘আমি আমার কোচিং বোর্ডে ফুটবলারদের দেখিয়েছি, বাংলাদেশের দুর্বলতা কোথায়। সেই অনুযায়ী আমি কাজ করেছি। আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। যদিও এটি আমাদের সেরা ম্যাচ নয়। কিন্তু আমরা জিততে মরিয়া ছিলাম। শেষ মিনিটে গোল নষ্ট না হলে তো আমরা ২-০ ব্যবধানে জিতি। তার আগে অবশ্য বাংলাদেশও গোল করতে পারত। নাম্বার ২১ (এলিটা কিংসলি) মিস করছে দুটি সুযোগ। অন্যদের চেয়ে নিশ্চিতভাবে সে ভালো।’ বলছিলেন নেভিল।