‘গত বছর সে যা করেছে, তা তুলনা করলে এমবাপ্পে ব্যালন ডি’অর পাওয়ার যোগ্য। সে একজন অসাধারণ খেলোয়াড় এবং আমি আশা করি সে এ বছর পুরস্কারটা জিতবে’—চ্যাম্পিয়নস লিগে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে পিএসজির জয়ের পর কথাগুলো বলেছেন কিলিয়ান এমবাপ্পের বন্ধু ও সতীর্থ আশরাফ হাকিমি। পিএসজির ২–০ গোলের জয়ে গোল দুটি ভাগাভাগি করেছেন এ দুজন। প্রশ্ন হচ্ছে, আশরাফ হাকিমির এমন দাবি আসলে কতটা যৌক্তিক। গত বছর এমবাপ্পের সামগ্রিক পারফরম্যান্স ও অর্জনই–বা কী!
শুরুতে আসা যাক ক্লাব ফুটবলে। গত মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে পিএসজির হয়ে ৪৩ ম্যাচে ৪১ গোল করার পাশাপাশি ১০টি অ্যাসিস্ট করেছেন এমবাপ্পে। পিএসজির হয়ে এমবাপ্পে এ মৌসুমে শিরোপা জিতেছেন দুটি—লিগ আঁ এবং ফরাসি সুপার কাপ। শুধু এই দুটি ট্রফি ব্যালন ডি’অরের জন্য কখনোই যথেষ্ট নয়। যেখানে গত মৌসুমে ট্রেবল জয় আছে ম্যানচেস্টার সিটির আর্লিং হলান্ডের।
ব্যালন ডি’অরের জন্য যে ট্রফিকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়, সেটি হচ্ছে চ্যাম্পিয়নস লিগ। সেই চ্যাম্পিয়নস লিগে এমবাপ্পের দল পিএসজি বিদায় নিয়েছে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে। যেখানে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে হলান্ডের ম্যান সিটি। এরপর ক্লাব ফুটবলে সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লিগ বিবেচিত হওয়া ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শিরোপাও জিতেছে হলান্ডের সিটি। এ ছাড়া হলান্ড জিতেছেন এফএ কাপের শিরোপাও।
এবার এমবাপ্পে ও হলান্ডের মধ্যকার ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স কেমন ছিল, তা দেখা যাক। দলীয় পারফরম্যান্সের মতো এখানেও দাপট হলান্ডের। সিটির হয়ে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৫৩ ম্যাচে হলান্ড গোল করেছেন ৫২টি। যেখানে শুধু প্রিমিয়ার লিগেই রেকর্ড ৩৬ গোল করেছেন ২২ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকার। প্রতিযোগিতার মান বিবেচনা করলেও এমবাপ্পের চেয়ে এগিয়ে থাকবেন হলান্ড। ক্লাব লড়াইয়ে ব্যক্তিগত ও দলীয় পরিসংখ্যান উভয় বিবেচনাতেই এমবাপ্পের চেয়ে এগিয়ে থাকবেন নরওয়েজীয় তারকা। এ ছাড়া এরই মধ্যে উয়েফা বর্ষসেরা পুরস্কার জিতে এমবাপ্পের ওপর নিজের শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতিও আদায় করে নিয়েছেন হলান্ড।
তবে জাতীয় দলের পারফরম্যান্স তথা বিশ্বকাপ পারফরম্যান্স বিবেচনা করলে সেখানে হলান্ডের চেয়ে এমবাপ্পেই এগিয়েই থাকবেন। হলান্ডের দল যেখানে বিশ্বকাপে খেলার সুযোগই পায়নি, এমবাপ্পে সেখানে বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছেন। শুধু এটুকুই নয়, ফাইনালে হ্যাটট্রিক করেছেন এই ফরাসি তারকা। তাই ক্লাব পারফরম্যান্সে পিছিয়ে থাকলেও জাতীয় দল বিবেচনায় এগিয়ে থাকবেন ফরাসি স্ট্রাইকারই।
তবে জাতীয় দলের পারফরম্যান্স বিবেচনায় নিলে সেখানে কিন্তু সবার আগে এমবাপ্পে নন, লড়াইয়ে চলে আসেন মেসি। ৩৬ বছর পর আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জিতিয়ে সাফল্যের চূড়ায় উঠেছেন সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী। বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও উঠেছে তাঁর হাতে। জাতীয় দলের অর্জনে এবং জাতীয় দলের হয়ে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে বাকিদের থেকে যোজন দূরত্বে এগিয়ে আছেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক।
আর ক্লাব বিবেচনায় ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে পিছিয়ে থাকলেও (পিএসজির হয়ে ৫২ ম্যাচে ৩২ গোল এবং ২৫ অ্যাসিস্ট) দলীয় অর্জনে কিন্তু এমবাপ্পের কাতারেই থাকবেন মেসি। কারণ, দুজনই খেলেছেন একই ক্লাবের হয়ে। তাই সব মিলিয়ে জাতীয় দল ও ক্লাব মেলালে এমবাপ্পেকে ছাড়িয়েই যাবেন মেসি। পরিসংখ্যান ও অর্জনের হিসাব–নিকাশ বলছে, লড়াইটা আসলে শেষ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকতে পারে মেসি ও হলান্ডের মধ্যেই। বাকিটা সময়ের হাতেই তোলা।