গত বছর কাতার বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া প্রায় অর্ধেক খেলোয়াড় সূচি-জটের কারণে মানসিক অবসাদে ভুগেছেন বলে জানিয়েছে পেশাদার ফুটবলারদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ফিফপ্রো। সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, আগের ফুটবলারদের তুলনায় বর্তমান ফুটবলারদের অনেক বেশি সময় খেলতে হচ্ছে। যা তাঁদের শারীরিক ও মানসিকভাবে ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে।
গতকাল প্রকাশিত ফিফপ্রোর প্রতিবেদনে বেশ কয়েকজন বর্তমান ও সাবেক তারকা ফুটবলারের ম্যাচ–সময়ের তুলনা তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে দেখা যায়, রিয়াল মাদ্রিদে খেলা ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার ভিনিসিয়ুস জুনিয়র ২২ বছর বয়সে ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে মোট ১৮ হাজার ৮৭৬ মিনিট খেলেছেন। সাবেক ব্রাজিলিয়ান প্লেমেকার রোনালদিনিওর একই সময়ের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি। পিএসজিতে খেলা ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপ্পে ২৪ বছরের মধ্যে খেলেছেন ২৬ হাজার ৯৫২ মিনিট, যা তাঁর স্বদেশি থিয়েরি অঁরির একই বয়সের তুলনায় ৪৮ শতাংশ বেশি।
এমবাপ্পে ও ভিনিসিয়ুসের পাশাপাশি স্পেনের পেদ্রি এবং ইংল্যান্ডের জুড বেলিংহামের মতো তরুণদেরও খেলার চাপ বেশি। বার্সেলোনায় খেলায় স্প্যানিশ মিডফিল্ডার পেদ্রির বয়স এখন ২০, এরই মধ্যে তিনি ১২ হাজার মিনিটের বেশি খেলেছেন। অথচ একই বয়সে বার্সেলোনার বর্তমান কোচ ও সাবেক মিডফিল্ডার জাভি হার্নান্দেজ খেলেছিলেন ২৫ শতাংশ কম। বরুসিয়া ডর্টমুন্ড থেকে রিয়াল মাদ্রিদে নাম লেখানো বেলিংহামের খেলার পরিমাণও কাছাকাছি। এখনো ২০তম জন্মদিন পালন না করা এই মিডফিল্ডার সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক ওয়েইন রুনির একই বয়সের তুলনায় ৩০ শতাংশের বেশি খেলেছেন।
১ হাজার ৮০০ পেশাদার ফুটবলারের ডেটা ব্যবহার করে ফিফপ্রোর প্লেয়ার ওয়ার্কলোড মনিটরিং (পিডব্লিউএম) প্ল্যাটফর্ম বলছে, অনেক বেশি খেলা থাকায় ক্লাব ও প্রতিযোগিতার ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। কাতার বিশ্বকাপের আগে-পরে ‘বিপজ্জনক মাত্রার সূচি-জট’ তৈরি হওয়ায় খেলোয়াড়দের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২২-২৩ মৌসুমে ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগে ৩ হাজারের বেশি চোটের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬৮৬টি চোট দেখা গেছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে, ইতালির সিরি ‘আ’তে ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬৭৯টি চোট। ক্লাবের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি ভুগেছে স্পেনের সেভিয়া। ইউরোপা লিগজয়ী ক্লাবটির তিনজন ফুটবলার পাপু গোমেজ, অ্যালেক্স তেলেস ও থমাস ডিলানি কমপক্ষে ৪০ দিনের জন্য মাঠের বাইরে ছিটকে গেছেন।
ফিফপ্রোর প্রেসিডেন্ট ডেভিড আগানজো লিখেছেন, ‘খেলোয়াড়দের কাজের চাপ ও শরীরের সুরক্ষায় এবং পারফরম্যান্সের জন্য অনুকূল একটি দায়িত্বশীল সূচি তৈরিতে ফুটবল–বিশ্বের সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার।’