ইংল্যান্ডকে বড় স্বপ্ন দেখাচ্ছেন সারিনা ভাইগমান
ইংল্যান্ডকে বড় স্বপ্ন দেখাচ্ছেন সারিনা ভাইগমান

নারী বিশ্বকাপে টিকে আছেন শুধু একজন নারী কোচ

অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে চলছে নারী বিশ্বকাপের নবম আসর। এবারের নারী বিশ্বকাপকে ‘সর্বকালের সেরা’ বলেছেন জিয়ান্নি ইনফান্তিনো। অন্য যেকোনোবারের তুলনায় এবার অনেক জমজমাট ম্যাচ আর মাঠে দর্শক উপস্থিতির রেকর্ড ফিফা সভাপতির কথাকে যথার্থ করে তুলেছে।

ফিফার প্রযুক্তিগত গবেষণা গ্রুপ বলছে, ২০২৩ নারী বিশ্বকাপে দলগুলোর মধ্যে শক্তিমত্তার ব্যবধান কমে এসেছে। এখন ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন। বিশ্বকাপে অভিষেক হওয়া খেলোয়াড়ের মানও উচ্চপর্যায়ের, যা দর্শকদের অনুপ্রাণিত করছে।

এবার গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছে নারী ফুটবলের পরাশক্তি জার্মানি, ব্রাজিল, ইতালি ও চীন। শেষ ষোলো থেকে আজ ছিটকে গেছে বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ও মেয়েদের বিশ্বকাপ ইতিহাসের সফলতম দল যুক্তরাষ্ট্র

বিপরীতে চমক দেখিয়ে দ্বিতীয় পর্বে উঠেছে দক্ষিণ আফ্রিকা, জ্যামাইকা, মরক্কোর মতো দলগুলো। প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে এসেই গোল পেয়েছেন ক্যানসারকে হারানো কলম্বিয়ার লিন্দা কাইসেদো। সবচেয়ে কম বয়সে (১৬ বছর ২৬ দিন) অভিষেক হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার কাসি ফেইরের। আর প্রতি ম্যাচে গড়ে ৩০ হাজার দর্শক উপস্থিতি আগের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে।

শেষ ষোলোয় আজ নেদারল্যান্ডসের কাছে ২-০ ব্যবধানে হেরে চমক দেখানো দক্ষিণ আফ্রিকার স্বপ্নযাত্রাও থেমে গেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিদায় নতুন এক ঘটনার জন্ম দিয়েছে।

নারী বিশ্বকাপে একমাত্র নারী কোচ হিসেবে টিকে আছেন ইংল্যান্ডের সারিনা ভাইগমান। ৫৩ বছর বয়সী ডাচ কোচ ভাইগমানের অধীনেই গত বছর ইউরো এবং এ বছর ফিনালিসিমা জিতেছেন ইংলিশ মেয়েরা। এবার তাঁর সামনে বিশ্বকাপ জয়ের সুযোগ।

এবারই প্রথম ৩২ দল নিয়ে নারী বিশ্বকাপ হচ্ছে। এর মধ্যে ১২ দলের প্রধান কোচ নারী। সারিনা ভাইগমান ছাড়া বাকিরা হলেন জার্মানির মার্টিনা ভস-টেকলেনবুর্গ, ইতালির মিলেনা বের্তোলিনি, ব্রাজিলের পিয়া সুন্ধাগে, কানাডার বেভ প্রিস্টম্যান, চীনের শুই কিনজিয়া, সহ-আয়োজক নিউজিল্যান্ডের ইকতা কিমকোভা , নরওয়ের হেগে রিসে, সুইজারল্যান্ডের ইঙ্কা গ্রিঙ্গস, আয়ারল্যান্ডের ভো পাউ, কোস্টারিকার আমেলিয়া ভালভের্দে ও দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি ডিজায়ার এলিস।

এই ১২ জনের মধ্যে ৬ জন বিদেশি—সুন্ধাগে, প্রিস্টম্যান, কিমকোভা, গ্রিঙ্গস, পাউ ও ভাইগমান। আর গ্রুপ পর্বের বাধা টপকে নকআউট পর্বে উঠেছে চারজনের দল—ভাইগমানের ইংল্যান্ড, রিসের নরওয়ে, গ্রিঙ্গসের সুইজারল্যান্ড ও এলিসের দক্ষিণ আফ্রিকা।

শেষ ষোলোয় কাল নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ড নিজেদের ম্যাচে হেরে ছিটকে গেছে। আজ বাদ পড়েছে এলিসের দক্ষিণ আফ্রিকাও। এলিসা দক্ষিণ আফ্রিকা নারী দলের বর্তমান কোচই নন; দলটির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্যও। তাঁর দলের ছিটকে পড়ার মধ্য দিয়ে এবারের বিশ্বকাপে নারী কোচ হিসেবে টিকে রইলেন শুধু ভাইগমান।

যদিও এই শতাব্দীতে মেয়েদের বিশ্বকাপ, ইউরো ও অলিম্পিক ফুটবলে সাফল্যের দিক থেকে নারী কোচরা ঢের এগিয়েও। নারী কোচ ও ক্রীড়াঙ্গনের নারী নেতৃত্বদের নিয়ে গড়া বিশ্বের শীর্ষ প্ল্যাটফর্ম ‘ফিমেল কোচিং নেটওয়ার্ক’-এর তথ্যমতে, ২০০০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত শুধু একটি বাদে বাকি সব বিশ্বকাপ, ইউরো ও অলিম্পিকে সোনা জিতেছে নারী কোচের দল। এখানে আশ্চর্য ব্যতিক্রম কেবল নোরিও সাসাকি। ২০১১ সালে এই পুরুষ কোচের অধীনে মেয়েদের বিশ্বকাপ জিতেছিল জাপান।

গত দুই যুগে বিশ্বমঞ্চে সাফল্য বিবেচনা করলে একমাত্র নারী কোচ হিসেবে টিকে থাকা ভাইগমানের ইংল্যান্ডেরই এবার বিশ্বকাপ জেতার কথা। ভাইগমানেরও তথ্যটা জেনে খুশিই হওয়ার কথা। তবে তিনি দেখিয়েছেন উল্টো প্রতিক্রিয়া। তাঁর আশা ছিল, বিশ্বকাপে আরও বেশি নারী কোচের উপস্থিতি।

সংবাদ সম্মেলনে ইংল্যান্ড নারী দলের কোচ সারিনা ভাইগমান

আগামীকাল কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে নাইজেরিয়ার মুখোমুখি হবে ভাইগমানের ইংল্যান্ড। ম্যাচ–পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে তাঁকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বলেছেন, ‘এটা নারীদের বিশ্বকাপ; নারী কোচদের প্রতিযোগিতা নয়। তবে আমি অবশ্যই আশা করেছিলাম টুর্নামেন্টে আরও নারী কোচ থাকুক। আশা করি, ভবিষ্যতে এখানেও (নারী-পুরুষ) সমতা আসবে। আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। ইংল্যান্ড ও অন্য দেশগুলো যাতে আরও নারী কোচ পায়।’