এক যুগ আগে যখন বিশ্বকাপের আয়োজন–স্বত্ব পেল কাতার, গোটা বিশ্বে শোরগোল পড়ে গেল। মধ্যপ্রাচ্যের তীব্র দাবদাহে ফুটবল মহাযজ্ঞ হতে পারে নাকি! তার ওপর এমন এক দেশে বিশ্বকাপ, যার না আছে ফুটবলীয় ঐতিহ্য, না আছে বিশ্বকাপ আয়োজনের মতো অবকাঠামো।
সব চড়াই-উতরাই পেরিয়ে স্বপ্নের বিশ্বকাপ আয়োজনকে আজ বাস্তবে রূপ দিতে চলেছে কাতার। বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় আল খোর শহরের আল বায়ত স্টেডিয়ামে ‘এ’ গ্রুপের ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে স্বাগতিক কাতার ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ইকুয়েডর।
আগের সূচি অনুযায়ী, আসর শুরু হওয়ার কথা ছিল ২১ নভেম্বর। উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হওয়ার কথা ছিল নেদারল্যান্ডস-সেনেগালের। কিন্তু উদ্বোধনী ম্যাচে স্বাগতিকদের খেলানোর রীতি ধরে রাখতে বিশ্বকাপ এক দিন এগিয়ে এনে কাতারকে সুযোগ করে দিয়েছে ফিফা।
সব ভুলে কাতার অবশ্য এখন শুধু খেলায় মনোযোগ দিতে চায়। ইকুয়েডরের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আজ ৮০তম দল হিসেবে বিশ্বকাপে অভিষেক হতে যাচ্ছে তাদের। র্যাঙ্কিংয়ে লাতিন আমেরিকার দেশটির চেয়ে ৬ ধাপ পিছিয়ে থাকলেও আল বায়ত স্টেডিয়ামের ৬০ হাজার দর্শকের সমর্থন সেটাকে বরাবর করে দিতে বাধ্য।
বিশ্বকাপের ইতিহাস ঘাঁটলে কাতারকেই বরং এগিয়ে রাখা যায়। আগের ২১ আসরে যে শুধু একবারই স্বাগতিক দেশ দ্বিতীয় পর্বে উঠতে ব্যর্থ হয়েছে—২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা। বোঝাই যাচ্ছে, বিশ্বকাপের আয়োজকদের সহজে বিদায় করে দেওয়া যায় না। কাতারের কোচ ফেলিক্স সানচেজও প্রত্যাশার চাপ কাটিয়ে প্রতিপক্ষদের কঠিন পরীক্ষায় ফেলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে ৪৬ বছর বয়সী কোচ বলেছেন, ‘বলছি না, আমরা বিশ্বকাপ জিতব। তবে আমরা বিশ্বমানের খেলা উপহার দেব, এটুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি।’
‘এ’ গ্রুপের অন্য দুই দল শক্তিশালী নেদারল্যান্ডস ও সেনেগাল। কাগজ-কলমের বিচারে ওই দুই ম্যাচে কাতারের জয়ের সম্ভাবনা কম। স্বাগতিকদের তাই যা করার আজই করতে হবে। বাস্তবতাও বুঝছেন সানচেজ, ‘সবাই আমাদের বিপক্ষে পূর্ণ পয়েন্ট তুলে নিতে চাইবে। তবে নিজ সমর্থকদের পাশে নিয়ে দেখাতে চাই, আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারি।’
এশিয়ার বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কাতার। সর্বশেষ ফিফা আরব কাপে হয়েছে তৃতীয়। দলে কোনো চোট–সমস্যা নেই। কাতারের শক্তির জায়গা আছে আরও। দলের ১৫ জনই খেলেন স্বদেশি ক্লাব আল-সাদে। একই ক্লাবে খেলার কারণে নিজেদের মধ্যকার বোঝাপড়াটা বেশ ভালো।
ইকুয়েডরকেও কঠিন পরীক্ষা দিয়ে আসতে হয়েছে। চিলি, কলম্বিয়া, পেরুর মতো দলগুলোকে টপকে বিশ্বকাপে জায়গা করে নিয়েছে তারা। অথচ সপ্তাহ দুয়েক আগেও বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ নিয়ে শঙ্কায় ছিল ইকুয়েডরিয়ানরা।
জন্মতারিখ ও নাগরিকত্ব সনদ জালিয়াতি করে রাইট-ব্যাক বায়রন কাস্তিয়োকে বাছাইপর্বে খেলানোর অভিযোগ এনেছিল চিলি। অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা হারাত ইকুয়েডর। তবে তদন্তের পর চিলির অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালত।
দলটির আর্জেন্টাইন কোচ গুস্তাফো আলফারো সাধারণত ৪-৪-২ ছকে খেলিয়ে থাকেন। গোল করার কাজটা করতে হবে প্রাণভোমরা এনার ভ্যালেন্সিয়াকেই। তাঁকে পেছন থেকে সহায়তা করতে আছেন মোইসেস কাইসেদো। তরুণ এই প্রতিভাকেই কাল সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের প্রতিনিধি হিসেবে পাঠিয়েছিল ইকুয়েডর।
ইংলিশ ক্লাব ব্রাইটনের ২১ বছর বয়সী মিডফিল্ডার বলেছেন, ‘ওরা নিজেদের মাঠে সবার সমর্থন পাবে। আমাদের কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। তবে জানি, ওরা কোন কৌশলে খেলে। ওদের মতো আমাদেরও সমান সুযোগ আছে।’