কাতার বিশ্বকাপে ‘গোল্ডেন বুট’ ও ‘গোল্ডেন বল’ দুটোই জিতে নিতে পারেন লিওনেল মেসি। কিলিয়ান এমবাপ্পের সমান সর্বোচ্চ ৫ গোল করেছেন। গোল বানিয়েছেন ৩টি। সব মিলিয়ে আর্জেন্টিনার ফাইনালে ওঠার পথে দারুণ ভূমিকা রেখেছেন মেসি। এর মধ্যে ফিফার জিপিএস রিপোর্ট মজার এক তথ্য জানিয়েছে।
৩৫ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে কম দৌড়ানো খেলোয়াড়দের একজন। তারকা ফুটবলারদের দৌড়ের সর্বোচ্চ গতির হিসেবেও সবার পেছনে মেসি। বেশির ভাগ সময়ই হেঁটেছেন।
ফিফার এই জিপিএস রিপোর্ট নিয়ে প্রতিবেদন করেছে ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম ‘গ্লোবো।’ তথ্যগুলো মেসির পারফরম্যান্সের প্রতি নেতিবাচক মনে হলেও আসলে তা নয়। এমনকি ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে সেমিফাইনালে মেসির দৌড়ের সর্বোচ্চ গতি নাকি আর্জেন্টিনার গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজের চেয়েও কম ছিল!
আসলে প্রতিভার পাশাপাশি মাথা খাঁটিয়েও খেলছেন মেসি। এই বয়সে অযথা না দৌড়ে আক্রমণের সময় নিজের সর্বস্ব ঢেলে দিচ্ছেন। আর তাই গোল করা ও করানোয় এমবাপ্পের সঙ্গে সমানে সমান লড়ছেন মেসি। আর ফিফার জিপিএস রিপোর্ট দেখে বোঝা যাবে না যে আর্জেন্টিনার ফাইনালে ওঠার পথে মূল ভূমিকাটা মেসিরই।
বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠার পথে ৬ ম্যাচে ২৪টি আক্রমণে নেতৃত্ব দিয়েছেন মেসি। ১৪টি আক্রমণ ছিল পোস্টে। ২৯৫টি পাসের মধ্যে ২৫০টি পাস ছিল নিখুঁত। ২৫ বার ড্রিবলিং করার পাশাপাশি ২০ বার ফাউলের শিকারও হয়েছেন আর্জেন্টাইন তারকা। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে সেমিফাইনালে দৌড়েছেন মোট ৮,২৪৭ মিটার। এর মধ্যে ৪,৭৮৩ মিটারে মেসির সর্বনিম্ন গতি ছিল ঘণ্টায় ০ কিলোমিটার থেকে ৭ কিলোমিটার।
আসলে কৌশলগত কারণেই মেসি নিজের গতিটা শুধু আক্রমণের সময় ব্যবহার করছেন। বল প্রতিপক্ষের পায়ে থাকতে মেসিকে সেভাবে বল কেড়ে নিতে দেখা যায় না। ‘গ্লোবো’ জানিয়েছে, পা দুটোকে বিশ্রাম দিতেই দল থেকে এমন নির্দেশ দেওয়া আছে মেসিকে। বল দখলে এলে তখন শক্তির পুরোটা ব্যবহার করতে হবে। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে আর্জেন্টিনার তৃতীয় গোলটি এর দারুণ উদাহরণ। ডানের প্রান্তে বল পায়ে আসার আগে হাঁটছিলেন মেসি। বল দখলে আসার পর এক দৌড়ে ঢুকে পড়েন বক্সে এবং গোল করান হুলিয়ান আলভারেজকে দিয়ে।
মেসির মতো নেইমারের ক্ষেত্রেও একই কৌশল অবলম্বন করেছেন ব্রাজিলের সাবেক কোচ তিতে। কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ১২.৯ কিলোমিটার (৫০৪৪ মিটার) দৌড়েছেন নেইমার। কিন্তু এর মধ্যে ৩৯ শতাংশ মিটারে তাঁর দৌড়ের গতি ছিল ঘণ্টায় ০ কিলোমিটার থেকে ৭ কিলোমিটার। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে সেমিফাইনালে লুকা মদরিচ ৮৪৬৯ মিটার দৌড়েছেন। এর মধ্যে ৩৬ শতাংশ (৩০৭৩) মিটারে তাঁর গতি ছিল ঘণ্টায় ০ কিলোমিটার থেকে ৭ কিলোমিটারের মধ্যে।
বিশ্বকাপে তারকা ফুটবলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ গতিতেও পিছিয়ে মেসি। আর্জেন্টিনার শেষ ম্যাচে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৮.৯ কিলোমিটার গতি তুলেছেন সাতবারের এই বর্ষসেরা ফুটবলার। এমবাপ্পে ফ্রান্সের শেষ ম্যাচে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩৫.২ কিলোমিটার গতিতে দৌড়েছেন। কোয়ার্টার ফাইনালে ঘণ্টায় ৩২.৮ কিলোমিটার গতিতে দৌড়েছেন নেইমার। নেদারল্যান্ডসের মেম্ফিস ডিপাই ঘণ্টায় ৩১.৪ কিলোমিটার ও বেলজিয়ামের কেভিন ডি ব্রুইনা নিজেদের শেষ ম্যাচে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩১.৯ কিলোমিটার গতিতে দৌড়েছেন। মরক্কোর বিপক্ষে সেমিফাইনালে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩০.৭ কিলোমিটার গতিতে দৌড়েছেন ফ্রান্সের আঁতোয়ান গ্রিজমান। ৩৭ বছর বয়সী মদরিচ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৯.৯ কিলোমিটার গতিতে দৌড়েছেন আর্জেন্টিনার বিপক্ষে।
বোঝাই যাচ্ছে, বয়সের কারণে দৌড়ে আর আগের মতো গতি পাচ্ছেন না মেসি। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনার তৃতীয় গোলটি মনে করে দেখুন। ডিফেন্ডার গাভারদিওল কিন্তু দৌড়ে মেসিকে ধরে ফেলেছিলেন। কিন্তু গোল ঠেকাতে পারেননি মেসির প্রতিভা ও উপস্থিত বুদ্ধির কারণে। যখনই বুঝেছেন গতিতে পারবেন না তখনই হাজির করেছেন ড্রিবলিং। এরপর দৌড়ের বাঁক বদল করে ডজ দিয়েছেন গাভারদিওলকে।
এই বিশ্বকাপে সৌদি আরবের বিপক্ষে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩১.৪ কিলোমিটার গতিতে দৌড়েছেন মেসি। ৬ ম্যাচের মধ্যে শুধু এই ম্যাচেই তাঁর গতি ৩০ কিলোমিটারের ওপাশে গিয়েছে। কাতার বিশ্বকাপে মেসির দৌড়ের গড় গতি ঘণ্টায় ২৯.৫ কিলোমিটার। ফিফার জিপিএস ডেটা জানাচ্ছে, আর্জেন্টিনা-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচে মাঠে নামা মোট ৩০ খেলোয়াড়ের মধ্যে ২২জনের গতি মেসির চেয়ে বেশি ছিল। এমনকি আর্জেন্টিনার গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজকে সে ম্যাচে যে তিনবার দৌড়াতে দেখা গেছে, তার মধ্যে একটিতে তাঁর গতি ছিল ঘণ্টায় ৩০.৯ কিলোমিটার।
সাত বছর আগে বার্সেলোনায় ২০১৪-১৫ মৌসুমেও ঘণ্টায় ৩৪.৫ কিলোমিটার গতিতে দৌড়েছেন মেসি। কিন্তু সে সময়ের সঙ্গে এখনকার তুলনা অবান্তর। বিশ্বকাপ জিততে যেভাবে খেলা দরকার ঠিক সেভাবেই খেলছেন মেসি।