পেশাদার ফুটবলে টস কিংবা লটারিতে কোনো দলের ভাগ্য নির্ধারণ নতুন না হলেও বিরলই বলা যায়।
এ মাসে ঢাকাতেই যেমন নারী ফুটবল মহানাটক আর বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ৯ ফেব্রুয়ারি কমলাপুরে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নির্ধারিত সময়ের পর ২২ শটের টাইব্রেকারেও সমতায় থাকায় হুট করেই টস করার সিদ্ধান্ত নেন ম্যাচ কমিশনার ডি সিলভা জয়াসুরিয়া দিলান। ভারত টস জিতলে তাদের চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ দল এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানালে পরে দুই দলকেই যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন করার ঘোষণা আসে।
মাসের শেষ দিকে এসে নারী ফুটবলে দেখা গেল লটারি! কনক্যাকাফ নারী গোল্ড কাপে কাল রাতে পুয়ের্তো রিকোকে লটারিতে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গেল কোস্টারিকা।
উত্তর ও মধ্য আমেরিকা এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলের ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা কনক্যাকাফ এবারই প্রথম মেয়েদের গোল্ড কাপ আয়োজন করেছে। এ অঞ্চলের ৮ দলের সঙ্গে দক্ষিণ আমেরিকান অঞ্চলের (কনমেবল) ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়া ও প্যারাগুয়ে টুর্নামেন্টে অতিথি দল হিসেবে খেলছে। আসরের আয়োজক যুক্তরাষ্ট্র।
গতকাল রাতে শেষ হয়েছে আসরের গ্রুপ পর্ব। নিয়ম অনুযায়ী, তিন গ্রুপের শীর্ষ দুই দলের সঙ্গে তৃতীয় হওয়া দুটি দল নিয়ে হবে কোয়ার্টার ফাইনাল। স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, কানাডা ও প্যারাগুয়ে নিজেদের গ্রুপের শীর্ষ দুইয়ে থেকে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গেছে। শেষ আটের বাকি দুটি দলের একটি আর্জেন্টিনা। তারা ‘এ’ গ্রুপ থেকে ৪ পয়েন্ট পেয়ে তৃতীয় হয়েছে।
কিন্তু ঝামেলাটা বাধে ‘বি’ ও ‘সি’ গ্রুপে তৃতীয় হওয়া দল দুটিকে নিয়ে। ‘বি’ গ্রুপ থেকে পুয়ের্তো রিকো এবং ‘সি’ গ্রুপ থেকে কোস্টারিকা তৃতীয় হয়। বিস্ময়করভাবে পয়েন্ট, গোল পার্থক্য (গোল করা ও খাওয়া), জয়, হার, ড্র, এমনকি শৃঙ্খলাতেও (হলুদ ও লাল কার্ড দেখাতেও) দল দুটি ছিল সমানে সমান। পরশু পুয়ের্তো রিকো গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে কলম্বিয়ার কাছে ২-০ ব্যবধানে হেরে যায়। আর কাল কোস্টারিকা ৩-০ ব্যবধানে হেরে যায় কানাডার কাছে।
হিউস্টনের শেল এনার্জি স্টেডিয়ামে কাল কোস্টারিকার ম্যাচ শেষ হতেই কনক্যাকাফ কর্মকর্তারা দেখেন, পরের পর্বে ওঠার সব মানদণ্ডেই দলটি পুয়ের্তো রিকোর সমান!
তাই বাধ্য হয়েই লটারির আয়োজন করা হয়। কাগজে দুই দলের নাম লিখে তা একটি প্লাস্টিকের বলে ভরে বাটিতে রাখা হয়। কনক্যাকাফ কর্মকর্তারা সেখান থেকে একটি কাগজ বেছে নেন, যাতে লেখা ছিল কোস্টারিকার নাম। ‘ভাগ্যের জোরে’ কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা দলটি আগামী শনিবার লস অ্যাঞ্জেলেসের বিএমও স্টেডিয়ামে কানাডার মুখোমুখি হবে।
আন্তর্জাতিক ফুটবলে টস কিংবা লটারির ঘটনা একেবারেই বিরল। ছেলেদের ফুটবলে ১৯৯০ বিশ্বকাপে এমন ঘটনা দেখা গিয়েছিল। ৪ পয়েন্ট নিয়ে ‘এফ’ গ্রুপের সেরা দল হিসেবে নকআউট পর্বে উঠেছিল ইংল্যান্ড। আয়ারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসের পয়েন্ট ছিল সমান ৩ করে। অন্য মানদণ্ডেও দুই দল ছিল সমান। গ্রুপের দ্বিতীয় সেরা দল বেছে নিয়ে তাই লটারির আয়োজন করেছিল ফিফা। লটারিতে ডাচদের হারিয়ে পরের পর্বে পৌঁছে যায় আইরিশরা।
১৯৬৮ ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের একটি ফাইনালিস্ট বেছে নেওয়া হয়েছিল টসের মাধ্যমে। নাপোলির মাঠ সান পাওলোতে (বর্তমানে ডিয়েগো ম্যারাডোনা স্টেডিয়াম) নির্ধারিত ৯০ মিনিটের পর অতিরিক্ত সময়েও স্বাগতিক ইতালি ও সোভিয়েত ইউনিয়নের ম্যাচটি গোলবন্ধ্যত্বে কাটে। সে সময় টাইব্রেকার ছিল না। তাই টসের আয়োজন করা হয়। ইতালির অধিনায়ক জিয়াচিন্তো ফাচেত্তি টস জেতেন। পরে তো ইতালি শিরোপাই জিতে নেয়।