ভোচে রিয়েলমেন্তে আচা কোয়ে ই উমা বোয়া আইডিয়া?
মানে কী এর! পর্তুগিজ ভাষা জানলে ভিন্ন কথা, নইলে বুঝতে পারার কোনো কারণ নেই। এটা যে একটা প্রশ্ন, তা তো বোঝাই যাচ্ছে। এমন এক প্রশ্ন, পর্তুগালের ফুটবল ইতিহাসে যা সম্ভবত অমর হয়ে গেল। যে প্রশ্নে বিস্ময়-অবিশ্বাস-হতাশার সঙ্গে রাগ-ক্ষোভও মিলেমিশে একাকার। দল থেকে বাদ পড়ার পর কোচ ফার্নান্দো সান্তোসকে যা করেছিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।
বিশ্বকাপ ফুটবলের সংবাদ সম্মেলনে কোচ-খেলোয়াড়েরা যে যাঁর ভাষাতেই কথা বলেন। ফিফার অ্যাপের মাধ্যমে তা পছন্দের অনুবাদে শুনতে পারেন সাংবাদিকেরা। ফার্নান্দো সান্তোসও পর্তুগিজেই কথা বললেন। ইংরেজিতে অনূদিত হওয়ার পর যা শুনলাম, তা এ রকম: ডু ইউ রিয়েলি থিংক ইটস্ আ গুড আইডিয়া? পরে এক পর্তুগিজ সাংবাদিকের কাছ থেকে মূলটা উদ্ধার করা গেল। তারপরও বাংলায় ঠিকমতো লেখা হয়েছে কি না, কে জানে। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের দিন লাঞ্চের পর রোনালদোকে নিজের অফিসে ডেকে ফার্নান্দো সান্তোস তাঁকে প্রথম একাদশ থেকে বাদ পড়ার খবরটা দিয়েছেন, যা শোনার পর রোনালদোর ওই প্রশ্ন।
পরদিন মরক্কোর বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনাল। ফার্নান্দো সান্তোস জানতেন, সেই ম্যাচ নিয়ে যত প্রশ্ন হবে, তার চেয়ে অনেক বেশি হবে রোনালদোকে নিয়ে। এটাকে অবশ্য নতুন কিছু বলে মনে হচ্ছে না পর্তুগালের কোচের, ‘সংবাদ সম্মেলনে এলে ৯০ শতাংশ প্রশ্নই তো হয় রোনালদোকে নিয়ে।’
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো এমনিতেই সব সময় আলোচনায়। আর এখন যে পরিস্থিতি, তাতে পর্তুগালের সংবাদ সম্মেলনে রোনালদো ছাড়া অন্য কোনো বিষয়েও যে প্রশ্ন হলো, এটাই তো বেশি। তিনি সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের একজন, দলের অধিনায়কও, আর তাঁকেই কিনা বসিয়ে রাখা হচ্ছে বেঞ্চে! এ নিয়ে যখন তোলপাড়, তখনই পর্তুগিজ সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে, রাগ করে রোনালদো বিশ্বকাপ ছেড়ে চলে যেতে চেয়েছিলেন। বিশ্বকাপের দীর্ঘ ইতিহাস অনেক কিছু দেখেছে। শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য খেলোয়াড়দের দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে অনেকবারই, যা এই বিশ্বকাপেও হয়েছে। তবে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মতো এমন আবেগে উথালপাতাল গল্পের সঙ্গে এর আগে পরিচয় হয়েছে বলে মনে হয় না।
রাগ করে বিশ্বকাপ ছেড়ে যাওয়ার খবর ‘মিথ্যা’ বলে দাবি করেছে পর্তুগিজ ফুটবল ফেডারেশন। রোনালদো নিজেও তা অস্বীকার করে টুইট করেছেন। অনেকটা রাজনীতির ভাষায় পর্তুগালের একতায় চিড় ধরাতে বহিঃশত্রুর যড়যন্ত্রও দেখছেন এতে। যে সংবাদমাধ্যম এই খবরটা ‘ব্রেক’ করেছিল, তারা অবশ্য তাদের দাবিতে অটল। রোনালদো নাকি আসলেই অমন হুমকি দিয়েছিলেন।
ফার্নান্দো সান্তোস আবারও যেটিকে ‘মিথ্যা’ বলে দাবি করলেন। এই জাতীয় আলোচনা বন্ধের জন্য যেন অনুনয়ও করলেন। প্রথম একাদশ থেকে বাদ পড়ে রোনালদোর ভালো লাগেনি। কোনো খেলোয়াড়েরই তা লাগে না। আর তিনি তো রোনালদো! সান্তোস তাই রোনালদোর মন খারাপ করায় দোষের কিছু দেখছেন না। তাঁর কাছে ‘দোষ’ বলে মনে হচ্ছে, এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে তুমুল আলোচনা। এটা এখন বন্ধ করতে বলছেন। রোনালদোকে তাঁর মতো থাকতে দিতে বলছেন।
ফার্নান্দো সান্তোসের সঙ্গে এসেছিলেন নতুন পর্তুগালের উজ্জ্বল প্রতিনিধি জোয়াও ফেলিক্স। চেহারা আর খেলা মিলিয়ে সাবেক ব্রাজিলিয়ান গ্রেট কাকার সঙ্গে তুলনা হচ্ছে, যা নিয়ে সাগ্রহে কথা বললেন। কিন্তু রোনালদোর প্রসঙ্গ উঠতেই বললেন, ‘আমি এই প্রশ্নের উত্তর দেব না।’ সাংবাদিকদের মাধ্যমে পর্তুগিজদের উদ্দেশে বরং একটা বার্তা পাঠাতে চাইলেন। অনেক দিন পর পর্তুগাল বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে। বিতর্ক সৃষ্টি করে তা যেন নষ্ট করা না হয়।
সান্তোস-ফেলিক্স চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তবে এই বিতর্ক কি আর এখানেই শেষ হওয়ার জিনিস! বিশ্বকাপের পাশাপাশি এ যেন আরেকটা খেলা চলছে!