এই মুহূর্তে কে সেরা, লেভানডফস্কিকেও কি মেসির পর্যায়ে রাখা যায়—কাল সংবাদ সম্মেলনেও যেমন দুই কোচকেই দিতে হলো এই প্রশ্নের উত্তর।
এই ম্যাচের আগে লিওনেল মেসির সঙ্গে হাত মিলিয়ে ঝামেলাটা কি মিটিয়ে নেবেন রবার্ট লেভানডফস্কি?
প্রশ্নটা শুনে চটেই গিয়েছিলেন পোলিশ স্ট্রাইকার। বিশ্বকাপের ড্র আর্জেন্টিনা আর পোল্যান্ডকে একই গ্রুপে ফেলে দেওয়ার পর এক সাংবাদিক প্রশ্নটা করেছিলেন লেভাকে। কোন প্রেক্ষাপটে, তা সম্ভবত আপনার অজানা নয়।
২০২১ সালের ব্যালন ডি’অরটা লিওনেল মেসির হাতে ওঠার পর থেকেই তো তীব্র বিতর্ক। পুরস্কারটা নামধামের কারণেই পেয়েছেন মেসি, পারফরম্যান্সের কারণে নয়। পারফরম্যান্স বিবেচনা হলে আগের মৌসুমের সেরা খেলোয়াড় তো আসলে লেভানডফস্কি। বায়ার্নের হয়ে যিনি মুড়িমুড়কির মতো গোল করেছেন।
২০২০ সালে আরও দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন। যেবার কোভিডের কারণে ব্যালন ডি’অর দেওয়াই হয়নি। মেসি তাই পুরস্কার হাতে নিয়ে বলেছিলেন, আগের বছরের পুরস্কারটা ফ্রান্স ফুটবলের কর্তাব্যক্তিদের লেভানডফস্কির বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসা উচিত। খুশি হওয়ার বদলে লেভার কাছে যা মনে হয়েছিল লোকদেখানো কথা। পরে অবশ্য সুর বদলে ফেলেন। সাংবাদিকের ওই প্রশ্নে রেগে গিয়েছিলেন সে কারণেই।
ভদ্রতার খাতিরে অনেক সময় অনেক কথা বলতে হয়। মনের কথা সব সময় অকপটে বলাও যায় না। লেভানডফস্কির সুর বদলে ফেলাও হয়তো ও কারণেই। তবে আজ যখন বিশ্বকাপের মঞ্চে লিওনেল মেসির মুখোমুখি, একটা জবাব দেওয়ার বাড়তি তাড়না তাঁর মধ্যে কাজ না করে পারেই না।
ব্যালন ডি’অর বিতর্ক বা লেভার জবাব দেওয়াটেওয়ার প্রসঙ্গ আসেনি, তবে আর্জেন্টিনা-পোল্যান্ড ম্যাচের আগে আবহ সংগীত হিসেবে ‘মেসি বনাম লেভা’ই বেজে যাচ্ছে ম্যাচপূর্ব সব আলোচনায়। এই মুহূর্তে কে সেরা, লেভানডফস্কিকেও কি মেসির পর্যায়ে রাখা যায়—কাল সংবাদ সম্মেলনেও যেমন দুই কোচকেই দিতে হলো এই প্রশ্নের উত্তর। আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি তা-ও একটা প্রশ্নেই পার পেলেন, পোল্যান্ডের কোচ সেসওয়াফ মিখনিয়েভিৎসের দিকে ছুটে গেল একের পর এক প্রশ্ন।
পোলিশ কোচের সংবাদ সম্মেলনে প্রথম প্রশ্নটাই হলো এ নিয়ে এবং একদম সরাসরি। মেসি না লেভাডনফস্কি—কে বেশি ভালো? প্রশ্নকর্তা সাংবাদিকও জানতেন, মিখনিয়েভিৎসের কাছ থেকে এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর পাওয়া যাবে না। গেলও না। পোলিশ কোচ বললেন, ‘বিশ্বকাপ ড্র হওয়ার দিন থেকেই পুরো বিশ্ব এর অপেক্ষায় ছিল। তবে আমি একটা কথা বলতে চাই, এই ম্যাচটা আর্জেন্টিনা বনাম পোল্যান্ড, মেসি বনাম লেভা নয়। মেসি অসাধারণ এক খেলোয়াড়। তবে দুজনের কে ভালো, আমি তা বলব না।’
বলতে না চাইলে কী হবে, ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে প্রশ্নটা আরও কয়েকবার হলো। যার একটি এমন, মেসি বনাম লেভা লড়াইয়ে কে জিতবেন? আবারও মিখনিয়েভিৎস শিক্ষামূলক কথাবার্তার আশ্রয় নিলেন, ‘এটা কি টেনিস খেলা নাকি! ফুটবল তো টেনিসের মতো একের বিপক্ষে একের খেলা নয়। ফুটবলে এমন কিছু হয় না। রবার্ট একা কিছু করতে পারবে না, সতীর্থদের সাহায্য লাগবে। মেসিও একা কিছু করতে পারবে না।’
মেসিকে আটকানোর পথ কী, এটা তো বলা যায়। মিখনিয়েভিৎস যা বললেন, সেটিও সবার জানা কথাই, ‘এই প্রশ্নের উত্তর তো অনেক বছর ধরেই খুঁজে মরছে সবাই। কেউ কি পেয়েছে? আসলে এই প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই। মেসি গোলের পর গোল করে গেছে, অ্যাসিস্টের পর অ্যাসিস্ট। এটা ওর শেষ বিশ্বকাপ বলে আরও বেশি উদ্দীপ্ত। ওকে আটকানোটা একজনের কাজ নয়। কয়েকজন মিলে আমরা চেষ্টা করব।’
এমনিতে মেসির খেলার খুব ভক্ত। নিজে থেকেই জানিয়ে দিলেন, মেসি যখন বার্সেলোনায় খেলেন, শুধু তাঁর খেলা দেখতেই অনেকবার ন্যু ক্যাম্পে গিয়েছেন। বিশেষ করে এই বিশ্বকাপে মেক্সিকোর কোচ টাটা মার্টিনো যখন বার্সার কোচ ছিলেন। মার্টিনোর সঙ্গে খুব খাতির মিখনিয়েভিৎসের। তাঁর কথা একাধিকবার বললেন পোলিশ কোচ। মেসিকে নিয়ে মজা করে বললেন, ‘এই ম্যাচে তো মেসিকে আরও কাছে থেকে দেখতে পাব। এটা ভেবে আমি খুব রোমাঞ্চিত।’ বলেই যোগ করলেন, ‘তবে কতটা শান্তিতে মেসিকে দেখতে পারব, তা জানি না। ম্যাচটা কঠিন। আর্জেন্টিনা প্রথম ম্যাচে হেরে গেছে, তাতে কিছু আসে যায় না। ওরা এখনো ফেবারিট। আর্জেন্টিনা ওয়েম্বলিতে ইতালিকে হারিয়ে যেভাবে ফিনালিসিমা জিতেছে, যেভাবে হাই প্রেসিং করে খেলেছে, তা দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। আমার ধারণা, এই ম্যাচেও ওরা এভাবেই খেলব। তবে আমরাও জেতার জন্য সব চেষ্টাই করব।’
এটা তো সবারই জানা। মেসি বনাম লেভা তর্কটার তো কোনো মীমাংসা হলো না। মীমাংসা আসলে স্কালোনির কথাটাই, ‘লেভা টপ প্লেয়ার। ওকে কাছ থেকে দেখাটা একই সঙ্গে আনন্দের ও চাপের। মেসির একই পর্যায়ে কি না? এই তুলনা আপনারা কেন করতে চান? এসব বাদ দিয়ে এমন খেলোয়াড়দের খেলাটা প্রাণভরে উপভোগ করুন না!’