কোপাকাবানা সৈকতে রেনাতো কস্তার (বাঁয়ে) সঙ্গে তাঁর স্ত্রী এবং সন্তানেরা
কোপাকাবানা সৈকতে রেনাতো কস্তার (বাঁয়ে) সঙ্গে তাঁর স্ত্রী এবং সন্তানেরা

বাবার সঙ্গে ব্রাজিল–আর্জেন্টিনা ম্যাচ দেখবেন ম্যারাডোনা, রিকেলমে, মেসি

মারাকানা ব্রাজিলের ‘ফুটবল থিয়েটার’। বাংলাদেশ সময় আগামীকাল সকাল সাড়ে ছয়টায় সেখানে শুরু হবে ধুন্ধুমার এক লড়াই। ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনা! ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে মুখোমুখি হবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। এ ম্যাচ দেখতে গত রোববারই নাটালের সাও গনকালো দো আমারান্তে থেকে পরিবার নিয়ে রিও ডি জেনিরোয় এসেছেন রেনাতো কস্তা। ৫৮ বছর বয়সী এই ব্রাজিলিয়ান পেশায় ব্যবসায়ী হলেও ফুটবলের পাঁড় ভক্ত। কতটা, তার একটা উদাহরণ দেওয়া যায়।

মারাকানার গ্যালারিতে আগামীকাল সন্তানদের মধ্যে তিন ছেলেকে নিয়ে এই ম্যাচ দেখতে যাবেন রেনাতো কস্তা। সেখানে তাঁর ছেলেদের নাম জানাজানি হলে, কে জানে, বিপদ হলেও হতে পারে! ব্রাজিলিয়ান হয়েও ব্রাজিলের ফুটবল থিয়েটারে বসে যদি আর্জেন্টিনার হয়ে কেউ গলা ফাটায়, তাহলে গ্যালারিতে তো ঝামেলা লাগার সম্ভাবনাই বেশি। ব্যাপারটা আরও গোলমেলে ঠেকবে, যদি কস্তার ছেলেদের নাম কেউ জানতে পারে—ডিয়েগো ম্যারাডোনা, রিকেলমে ক্রেসপো ও লিওনেল মেসি!

কস্তার ছেলে ডিয়েগো ম্যারাডোনার কোলে ৩ বছর বয়সী লিওনেল মেসি

আসলে রেনাতো কস্তা ব্রাজিলিয়ান হলেও ফুটবলে আর্জেন্টিনার সমর্থক। ব্রাজিলিয়ান আইনে এসব নাম রাখায় কোনো প্রতিবন্ধকতা না থাকায় ছেলেদের নাম রেখেছেন আর্জেন্টিনার কিংবদন্তিদের নামে। রিওতে কস্তার শৈশব কেটেছে। এবার সেখানে পরিবার নিয়ে ফিরেছেন পছন্দের দলের খেলা দেখতে। আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম ‘ক্লারিন’ জানিয়েছে, কস্তার পরিবার প্রথমবারের মতো স্বচক্ষে আর্জেন্টিনার খেলা দেখবে।

ক্লারিন ছাড়াও ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম ‘গ্লোবো’কে কস্তা জানিয়েছেন তাঁর আর্জেন্টিনাকে সমর্থন দেওয়ার উৎস, ‘আমার বাবা আর্জেন্টিনার পাঁড় ভক্ত ছিলেন। ১৯৭৮ সালে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জেতায় বাবা খুব কেঁদেছিলেন, তার সঙ্গে আমিও কেঁদেছিলাম। তখন থেকেই আর্জেন্টিনাকে পছন্দ করি। কারণ, তারা ভালোবাসা নিয়ে খেলে। এটা আমার খুব পছন্দ। তাই সমর্থন প্রকাশে আমি আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের নামে নিজের সন্তানদের নাম রেখেছি।’

বড় ছেলে ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা প্যালসিও ডি কস্তার বয়স ২১ বছর। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি ফুটবলারও। নাটালে একটি ক্লাবে খেলছেন, যদিও পেশাদার হতে পারেননি।

অবশ্য ক্লারিনের কাছে তিনি দাবি করেছেন, পড়াশোনার পাশাপাশি ফুটবল—দুটোই একসঙ্গে চালিয়ে নিতে তাঁর কোনো অসুবিধা হয় না। কোপাকাবানার সৈকতে হাঁটতে হাঁটতে সংবাদমাধ্যমটিকে এই ম্যারাডোনা বলেছেন, ‘আমার নামের মাহাত্ম্যটা যখন বুঝতে পেরেছিলাম, খুব ভালো লেগেছিল। আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি—ভাবতেই ভালো লেগেছিল।’ আর্জেন্টাইন ফুটবল নিয়ে ম্যারাডোনাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার দরকার নেই সম্ভবত। প্রয়াত কিংবদন্তি সর্বকালেরই অন্যতম সেরা।

পরিচয়পত্র হাতে রিকেলমে ক্রেসপো

রিকেলমে ক্রেসপো প্যালসিও ডি কস্তার জন্ম ২০০৬ সালে। আর্জেন্টিনার সাবেক দুই ফুটবলারের নামে এ নাম। আর্জেন্টিনার সাবেক মিডফিল্ডার ও বোকা জুনিয়র্স কিংবদন্তি হুয়ান রোমান রিকেলমে এবং আর্জেন্টিনার সাবেক স্ট্রাইকার, ইন্টার মিলানের হয়ে সিরি ‘আ’ ও চেলসির হয়ে প্রিমিয়ার লিগজয়ী হেরনান ক্রেসপো—দুজনের নাম মিলিয়ে রাখা হয়েছে তাঁরটি। ক্লারিনকে এই ক্রেসপো বলেছেন, ‘ক্রেসপো ও রিকেলমের খেলোয়াড় হিসেবে অর্জন আমার জানা ছিল। বন্ধুদের তাই খুব বেশি বোঝাতে হয়নি।’

রেনাতো কস্তার মোট ১৫ সন্তান। তাঁর বর্তমান জীবনসঙ্গী জুলিয়া ২০২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর করোনাভাইরাস মহামারির মাঝে এক সন্তানের জন্ম দেন। তার নাম রাখা নিয়ে কস্তা ভাবতে এক মিনিটও দেরি করেননি—লিওনেল আন্দ্রেস মেসি কুচিত্তিনি দা কস্তা।

বংশপদবি হিসেবে নামের শেষে কস্তা। আর বড় দুজনের নামের সঙ্গে ‘প্যালসিও’ যোগ করা হয়েছে মায়ের ডাকনাম হিসেবে, এমন দাবি করেছে ‘গ্লোবো’। সংবাদমাধ্যমটি এটাও মনে করিয়ে দিয়েছে, আর্জেন্টিনার এক সাবেক স্ট্রাইকারের নামও কিন্তু রদ্রিগো প্যালসিও!

ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনার পরিচয়পত্র

ক্লারিন জানিয়েছে, আর্জেন্টিনার জার্সি পরে রিওর রাস্তায় হাঁটার সময় বাপ-ছেলেদের দিকে অনেকেই তির্যক দৃষ্টি হেনেছেন। খোঁচাও মেরেছেন কেউ কেউ। রিকেলমে তো এমন এক খোঁচার জবাবে ম্যাচের স্কোরলাইনটাই ভবিষ্যদ্বাণী করে বসলেন, ‘২-০।’

এদিকে ডিয়েগো ম্যারাডোনার ইচ্ছা, আগামীকাল ব্রাজিলের বিপক্ষে মেসি গোল করুন। কোন ম্যারাডোনার ইচ্ছা আর কোন মেসির গোল করার কথা বলা হচ্ছে, সেটি এতক্ষণে বুঝে যাওয়ার কথা আপনার। ২০২১ কোপা আমেরিকা ফাইনালের মতো আনহেল দি মারিয়ার কাছ থেকেও গোল দেখতে চান এই ম্যারাডোনা। পরিকল্পনা আছে আরও। ৩ বছর বয়সী মেসির ছবি এবং তার পরিচয়পত্র দিয়ে একটি ব্যানার বানিয়েছেন রেনাতো কস্তা। মারাকানায় এই ব্যানার প্রদর্শন করে আর্জেন্টাইন মেসির দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করবেন, যেন তাঁদের ভালোবাসাটুকু কিংবদন্তি গ্রহণ করেন!

রেনাতো কস্তাও কোনো রাখঢাক রাখেননি। ‘গ্লোবো’কে বলেছেন, ‘আমরা টিকিট পেয়েছি। পূর্ব দিকের গ্যালারিতে বসব এবং আর্জেন্টিনাকে সমর্থন দেব। ১৯৭৮ সাল থেকে আমি আর্জেন্টিনার সমর্থক। নাটালের এলক্রিমে সবাই আমাকে চেনে এবং জানে যে আমি আর্জেন্টিনাকে সমর্থন করি। বাজি ধরতে হলে আমি ব্রাজিলের বিপক্ষেই ধরব।’

বাবার পথ অনুসরণ করে ম্যারাডোনাও আর্জেন্টিনার সমর্থক। আর্জেন্টিনা হারলে স্কুলে বন্ধুবান্ধবের খোঁচা হজম করতে হতো। জিতলে পাল্টা জবাব দিতেন ম্যারাডোনা। তিনি বলেছেন, ‘আর্জেন্টিনার জন্য আমার বাবার ভালোবাসা দেখেছি। আমিও দলটির প্রেমে পড়ে যাই, বিশেষ করে ২০২২ সালে বিশ্বকাপ জয়ের পর।’

মায়ের কোলে লিওনেল মেসি

রিকেলমে ক্রেসপোই–বা বাদ যাবেন কেন। তবে তাঁর জীবনটা একটু অশান্তির, ‘আমিও আর্জেন্টিনার সমর্থক। বাবার সঙ্গে কোনো ম্যাচ মিস করি না। বন্ধুদের সঙ্গে থাকলে সবাই খোঁচায়। আমিই একমাত্র আর্জেন্টিনা সমর্থক। তাই ব্রাজিল জিতলে ঠাট্টা করে আমাকে নিয়ে।’

তবে রেনাতো কস্তার এসব নিয়ে ভাবনা নেই। পরের শিশুটি জন্ম নিলে কী নাম রাখবেন, সেটা আগেই ঠিক করা আছে, ‘সে হবে দি মারিয়া। দি মারিয়া খুব ভালো খেলে।’