লা লিগায় টানা পাঁচ ম্যাচ জেতার আত্মবিশ্বাস নিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলতে এসেছিল বার্সেলোনা। কিন্তু ইউরোপ–সেরার মঞ্চের বাস্তবতা যে ভিন্ন, সেটা প্রমাণিত হলো প্রথম ম্যাচেই। মোনাকোর কাছে বার্সা হেরেছে ২–১ গোলে।
এ ম্যাচে অবশ্য শুরুতেই বার্সার আত্মবিশ্বাসের ভিত কাঁপিয়ে দেয় এরিক গার্সিয়ার লাল কার্ড। এরপর গোলও খেয়ে ফেলে তারা। পরে রেকর্ড গড়ে যা শোধ করেন লামিনে ইয়ামাল। তাতেও অবশ্য শেষ রক্ষা হয়নি। দ্বিতীয়ার্ধে করা গোলেই জয় পায় মোনাকো। চ্যাম্পিয়নস লিগের শুরুতেই এমন হারে খানিকটা যেন চাপেই পড়ে গেল বার্সা।
মোনাকোর মাঠে শুরু থেকে বলের দখল রেখে আক্রমণে মনোযোগ দেয় বার্সেলোনা। এ সময় মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ রাখাই ছিল কাতালান ক্লাবটির মূল লক্ষ্য। তবে বার্সা বড় ধাক্কা খায় ম্যাচের ১০ মিনিটে। বক্সের বাইরে বিপজ্জনকভাবে মোনাকোর তাকুমি মিনামিনোকে ফাউল করায় সরাসরি লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন বার্সা ডিফেন্ডার এরিক গার্সিয়া। ১০ জনের বার্সাকে পেয়ে মুহূর্তের মধ্যে পাশার দান উল্টে দেয় মোনাকো—একের পর এক আক্রমণে চাপে ফেলে দেয় বার্সাকে।
যে ধারাবাহিকতায় ম্যাচের ১৬ মিনিটে এগিয়েও যায় ফরাসি ক্লাবটি। দারুণ এক আক্রমণ থেকে মোনাকোর হয়ে গোল করেন মাগনেস আকলিওচে। শুরুতে গোল পেয়ে মোনাকো যেন আরও উজ্জ্বীবিত হয়ে ওঠে। প্রথম ২৫ মিনিটের মধ্যে ৫টি শট নিয়ে ৩টি লক্ষ্যে রাখে তারা। অন্যদিকে কোণঠাসা বার্সা লক্ষ্যে দূরে থাক, কোনো শটই নিতে পারেনি।
এমন পরিস্থিতিতে বার্সাকে ম্যাচে ফেরাতে প্রয়োজন ছিল বিশেষ কোনো জাদুর। খেলার ধারার বিপরীতে সেই জাদুতেই ম্যাচে রোমাঞ্চ ফেরান ইয়ামাল। ২৮ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে দারুণ এক শটে লক্ষ্যভেদ করে বার্সাকে সমতায় ফেরান এই স্প্যানিশ উইঙ্গার। এটি ছিল চ্যাম্পিয়নস লিগে ইয়ামালের প্রথম গোল। যা তাঁকে চ্যাম্পিয়নস লিগের দ্বিতীয় কনিষ্ঠ গোলদাতার খেতাবও এনে দিয়েছে। ইয়ামাল করেছেন ১৭ বছর ৬৮ দিনে। শীর্ষে থাকা সাবেক বার্সা থাকা আনসু ফাতি গোল করছিলেন ১৭ বছর ৪০ দিনে।
সমতায় ফিরে ম্যাচের লাগাম নেওয়ার চেষ্টা করে বার্সা। একটু পর অল্পের জন্য গোলবঞ্চিতও হয় তারা। তবে ৩২ মিনিটে টের স্টেগেন দেয়াল তুলে না দাঁড়ালে আবারও এগিয়ে যেতে পারত মোনাকো। মূলত একজন কম নিয়ে খেলার চাপ, সেটাকেই কাজে লাগানোর চেষ্টা করছিল তারা। ৩৫ মিনিটে গোল করেও ফেলে মোনাকো। কিন্তু অফসাইডের কারণে সে যাত্রায় বেঁচে যায় বার্সা। এরপর বিরতিতে যাওয়ার আগে আরও কয়েকবার গোলের কাছাকাছি গিয়েছিল মোনাকো। কিন্তু সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেনি তারা।
বিরতির পরও ১০ জনের বার্সাকে চেপে ধরার চেষ্টা করে মোনাকো। টানা কয়েকবার আক্রমণেও যায় তারা। কিন্তু গোল আদায় করতে পারেনি। এ সময় নিজেদের রক্ষণ সুদৃঢ় রেখে প্রতি–আক্রমণে যাওয়াতে বেশি মনোযোগ দেয় বার্সা। একজন খেলোয়াড় কম থাকার প্রভাব বার্সার খেলায় বেশ স্পষ্ট ছিল। তবে এরপরও কয়েকটি দারুণ আক্রমণ তৈরি করে তারা, যদিও সেগুলো গোলের জন্য যথেষ্ট ছিল না।
কয়েকবার কাছাকাছি গিয়ে বার্সা সুযোগ হাতছাড়া করলেও ৭১ মিনিটে ভুল করেননি মোনাকোর জর্জ লেনিকেনা। দারুণ এক আক্রমণে সতীর্থের কাছ থেকে বল পেয়ে দুর্দান্ত ফিনিশিংয়ে দলকে এগিয়ে দেন লেনিকেনা। এরপর অবশ্য পেনাল্টিও পেয়েছিল মোনাকো। কিন্তু ভিএআরের কারণে সে যাত্রায় বেঁচে যায় বার্সা। এরপরও শেষ রক্ষা হয়নি। শেষ পর্যন্ত আর কোনো গোল না হলে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে মোনাকো।