বিশ্বকাপের পর থেকে বেশ বাজে সময় পার করছে ব্রাজিলের ফুটবল। ব্রাজিলিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের (সিবিএফ) অভ্যন্তরীণ সংকট, কোচ নিয়ে তৈরি হওয়া জটিলতা এবং একের পর হার দেশটির ফুটবলকে একেবারে তলানিতে নিয়ে গেছে। এর মধ্যে ব্রাজিলের ফুটবলের একমাত্র ইতিবাচক দিক বলতে তাদের বর্ণবাদবিরোধী অবস্থান।
গত এক বছরে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে দারুণভাবে সোচ্চার ছিল দেশটি। এ সময়ে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে নানা কর্মসূচিও গ্রহণ করে তারা। ফলে ফিফা দ্য বেস্টের মঞ্চের ফিফা ফেয়ার প্লের পুরস্কারটা গেছে ব্রাজিলের কাছেই। দেশটির পক্ষ থেকে এ পুরস্কার গ্রহণ করেন বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক কাফু। তাঁর সঙ্গে এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন রোনালদো নাজারিও, রবার্তো কার্লোস, জুলিও সিজার, রকে জুনিয়র ও জুলিয়ানো বেলেত্তি। উপস্থিত এই ছয় ব্রাজিলিয়ান জাতীয় দলের হয়ে সম্মিলিতভাবে ম্যাচ খেলেছেন ৫২৩টি।
পুরস্কার হাতে নেওয়ার পর ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা রাইটব্যাক কাফু কথা বলেছেন বর্ণবাদ নিয়ে, ‘শিক্ষার কারণেই বর্ণবাদের উৎপত্তি। আসুন, আমরা মানুষকে শিক্ষিত করি, যেন একটি সমতার বিশ্বে বাস করতে পারি। আমাদের কাছে এর মাধ্যম আছে, যেটি হচ্ছে ফুটবল। আসুন, আমরা এটিকে সামাজিক ঐক্যের কাজে ব্যবহার করি।’
স্প্যানিশ ফুটবলে ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকে ঘিরে হওয়া বর্ণবাদী আচরণের বিরুদ্ধে গত বছর সরব হয়ে ওঠে ফুটবল–বিশ্ব। আর বর্ণবাদবিরোধী এ কার্যক্রমে অগ্রণী ভূমিকা নেয় ব্রাজিল। দেশটির কনফেডারেশন থেকে শুরু করে বর্তমান-সাবেক ফুটবলাররাও ঘৃণ্য এ আচরণের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেন। গত বছরের জুনে বার্সেলোনায় গিনির বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কালো জার্সি পরেও খেলতে নামে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
বর্ণবাদের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান ব্যক্ত করতেই এ উদ্যোগ নিয়েছিল দেশটি।
সেদিন ব্রাজিল ও গিনির ফুটবলাররা পর্তুগিজ ভাষায় ‘বর্ণবাদ সঙ্গে নিয়ে ফুটবল নয়’ লেখা ব্যানারের পেছনে গিয়ে দাঁড়ান এবং হাঁটু গেড়ে প্রতিবাদও জানান। এরপর একই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে লিসবনে সেনেগালের বিপক্ষে আরও একটি ম্যাচ খেলেন তাঁরা।
এ ছাড়া বছরজুড়েই নানা বিবৃতি ও বক্তব্যে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সরব ছিল দেশটি। সে সময় ‘বর্ণবাদ নিয়ে কোনো ম্যাচ নয়’ স্লোগানটা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার কথাও বলেন সিবিএফ সভাপতি এনদালদো রদ্রিগেস। তিনি বর্ণবাদসংক্রান্ত ফুটবলীয় আইনে আরও পরিবর্তন আনার দাবিও রাখেন।
পাশাপাশি ব্রাজিলের আদালত যেন স্টেডিয়ামে হওয়া বর্ণবাদী আচরণের আরও কঠোর শাস্তি দেন, সেই দাবিও তিনি উত্থাপন করেন। এর আগে গত বছরের মার্চে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বর্ণবাদ নিয়ে রদ্রিগেস বলেছেন, ‘আমরা চাই, ব্রাজিল যেন বিশ্বব্যাপী বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেয়।’
ফিফা ফেয়ার প্লে পুরস্কারটি সাধারণত মাঠে ও মাঠের বাইরে নিজেদের ইতিবাচক আচরণের কারণে খেলোয়াড়, কোচ, দল, ম্যাচ অফিশিয়াল, সমর্থক বা সমর্থকগোষ্ঠী পেতে পারেন। এবার ব্রাজিল জাতীয় দলের সঙ্গে মনোনয়ন পেয়েছিলেন ডাচ রেফারি পোল ফন বোয়েকেল। গত ফেব্রুয়ারিতে ডাচ লিগে আয়াক্স বনাম স্পার্টা রটারডামের ম্যাচে গোল করার পর আয়াক্স তারকা মোহাম্মদ কুদুস জার্সি খুলে তুরস্কে ভূমিকম্পে নিহত ঘানাইয়ান সতীর্থ ক্রিস্টিয়ান আতসুকে স্মরণ করেন।
ফুটবল মাঠে সাধারণত গোল উদ্যাপনে জার্সি খুললে হলুদ কার্ড দেখানোর নিয়ম রয়েছে। কিন্তু রেফারি ফন বোয়েকেল কুদুসের আবেগকে সম্মান জানিয়ে কার্ড দেখাননি। এ কারণেই মূলত মনোনয়ন পেয়েছিলেন বোয়েকেল। এ ছাড়া মনোনয়ন পেয়েছিল উরুগুইয়ান ক্লাব মন্টিভিডিও সিটি টর্ক। বোস্টন রিভার্সের বিপক্ষে ম্যাচে গোল করার পর তারা দেখে, প্রতিপক্ষের দুই খেলোয়াড় আঘাত পেয়ে মাঠে পড়ে আছেন। এরপর তারা বিনা বাধায় প্রতিপক্ষকে গোল করে দারুণ এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।