বিশ্বকাপ ফাইনালের ১২৩ মিনিটে মার্তিনেজের সেই অবিশ্বাস্য সেভ
বিশ্বকাপ ফাইনালের ১২৩ মিনিটে মার্তিনেজের সেই অবিশ্বাস্য সেভ

ফাইনালের সেই ‘সেভ’ মার্তিনেজের স্মৃতিতে থাকবে আজীবন

বিশ্বকাপ ফাইনালের ওই মুহূর্তটির কথা কারও পক্ষেই ভোলা সম্ভব নয়। এমিলিয়ানো মার্তিনেজ, কোলো মুয়ানি কিংবা আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্স দলের কারও পক্ষে তো নয়ই। ওই মুহূর্তটি আর্জেন্টাইন কিংবা ফরাসি সমর্থকদের হৃদয়ে দুই রকমের আবেগের ঢেউ তোলে। আর্জেন্টিনার সমর্থকদের হৃৎস্পন্দন হয়তো মুহূর্তের জন্য থেমে যায়, ফরাসি সমর্থকেরা আক্ষেপে পোড়েন। মার্তিনেজের কাছে হয়তো মুহূর্তটি স্বপ্ন মনে হয়, ফ্রান্স স্ট্রাইকার মুয়ানির হয়তো বুক ফেটে কান্না আসে।

গত বছরের ডিসেম্বরে কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালটা অনেকের চোখেই হয়তো সর্বকালের সেরা বিশ্বকাপ ফাইনাল। যদিও ম্যাচের ৮১ মিনিট পর্যন্ত সেটিকে খুবই একপেশে এক ম্যাচ মনে হচ্ছিল। আর্জেন্টিনা খুব দ্রুতই ২-০ গোলে লিড নিয়ে ফেলায় কেউ ভাবতে পারেননি ফ্রান্স ঘুরে দাঁড়িয়ে ম্যাচটা এমন শ্বাসরুদ্ধকর করে তুলবে। কিলিয়ান এমবাপ্পের দুই গোলে স্কোরলাইন ২-২ হয়ে যাওয়ার পর অতিরিক্ত সময়ে মঞ্চস্থ হয়েছে আরও নাটক। মেসি গোল করে ৩-২ করেছেন, এমবাপ্পে হ্যাটট্রিক করে ইতিহাস গড়ে ৩-৩ করে ফেলেছেন। কিন্তু সবচেয়ে বড় নাটকটি বোধ হয় হয়েছে ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে, ১২৩ মিনিটে।

মেয়েকে কোলে নিয়ে বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে এমিলিয়ানো মার্তিনেজ

রোমাঞ্চকর ফাইনালের স্কোরলাইন তখন ৩-৩। নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ের হাড্ডাহাড্ডি ও শ্বাসরুদ্ধকর লড়াই শেষে বিশ্বকাপ ফাইনাল তখন টাইব্রেকারের অপেক্ষায়। ঠিক ওই সময় নিকোলাস ওতামেন্দির ভুলে হঠাৎই আর্জেন্টাইন বক্সের সামনে আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক মার্তিনেজকে একা পেয়ে যান মুয়ানি। মার্তিনেজের পাশ দিয়ে বল জালে ঠেলে দিলেই ফ্রান্স জিতে যাবে, এমন পরিস্থিতিতে মুয়ানির শট অবিশ্বাস্যভাবে বাঁ পা বাড়িয়ে ঠেকিয়ে দেন মার্তিনেজ। সেটিকে প্রায় সবাই বলছেন কাতার বিশ্বকাপের সেরা সেভ, কেউ কেউ বলছেন বিশ্বকাপ ইতিহাসেরই সেরা সেভ। মুয়ানি গোলটা করেই ফেলেছেন ভেবে ডাগআউট থেকে ফ্রান্স দলের সদস্যরা উত্তেজনায় মাঠেই ঢুকে পড়েছিলেন। কিন্তু তাদের হতাশই হতে হয়। এর পরের ইতিহাস আর্জেন্টিনা আর মার্তিনেজের পক্ষেই। টাইব্রেকারে একটি শট ঠেকিয়ে মার্তিনেজ হয়ে যান বিশ্বকাপ ফাইনালের হিরো।

আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম নায়ক এমিলিয়ানো মার্তিনেজ

আর্জেন্টিনার একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিশ্বকাপ ফাইনালে সেই নাটকীয় মুহূর্তটির স্মৃতি তুলে ধরেছেন তিনি। বলেছেন, মুয়ানির ওই শটটি ঠেকানোর স্মৃতি তাঁর স্মৃতিপটে থেকে যাবে আজীবন, ‘আমি আমার ফুটবল জীবনে হয়তো কমবেশি ভালো সেভ করেছি। কিন্তু বিশ্বকাপ ফাইনালের ওই সেভ আমার স্মৃতিতে খোদাই করা থাকবে।’

মুয়ানি যদি ওই মুহূর্তে গোলটি করে ফেলতেন, বিশ্বকাপ ফাইনাল তো ওখানেই শেষ। এমন একটা সময় মার্তিনেজ সেভটি করেছিলেন, সেটি আসলেই আর্জেন্টিনার আশাকে, আর্জেন্টিনার স্বপ্নকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল, ‘আমি এরপর ২০০টি দুর্দান্ত সেভ করে দেখাতে পারি। কিন্তু আমার কাছে বিশ্বকাপ ফাইনালের ওই সেভ ছিল, আমার জীবনের সেরা।’

মার্তিনেজ এখন আর্জেন্টিনার বড় তারকা

বিশ্বকাপ ফাইনাল অতিরিক্ত সময়ে গড়ানোর পর সেই স্নায়ুর চাপ, সেই উৎকণ্ঠা এখনো অনুভব করেন মার্তিনেজ। কিন্তু প্রচণ্ড চাপের মধ্যেও তিনি নিজেকে শান্ত রাখতে পেরেছিলেন বলেই ওই সেভটি করতে পেরেছিলেন বলে তাঁর ধারণা, ‘আমি ওই মুহূর্তে নিজেকে শান্ত রেখেছিলাম, আমি সেদিন ওই মুহূর্তে হতাশায় অস্থির হয়ে যাইনি, ভেঙে পড়িনি, আমার যেখানে থাকার কথা সেখানেই ছিলাম। আমি মানসিকভাবে খুব চাঙা ছিলাম।’

টাইব্রেকারের সময় প্রতিপক্ষের সঙ্গে ‘মনস্তাত্ত্বিক লড়াই’ করতে পটু মার্তিনেজ

বিশ্বকাপের আগেই তারকা হয়েছিলেন। ২০২১ সালের কোপা আমেরিকার সময়ই ফুটবল দুনিয়ার সামনে নিজেকে চিনিয়েছিলেন। পেনাল্টি শুট আউটের সময় তিনি কতটা নির্ভরযোগ্য, সেটিও জেনেছিল সবাই। কোপার সেমিফাইনালে তিনি কলম্বিয়ার বিপক্ষে টাইব্রেকারের সময় প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের সঙ্গে মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ে বাজিমাত করেছিলেন। বিশ্বকাপ ফাইনালেও ফরাসি ফুটবলারদের সঙ্গে সেই একই মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ে তিনি নিজেকে অন্যতম সেরা এক গোলরক্ষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

অ্যাস্টন ভিলায় খেলা মার্তিনেজের প্রতি মৌসুম শেষে বেশ কিছু শীর্ষ ইংলিশ ক্লাব আগ্রহ দেখিয়েছে। এদের মধ্যে আছে টটেনহাম, চেলসি ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। তবে ৩২ বছর বয়সী এই গোলরক্ষকের সঙ্গে অ্যাস্টন ভিলার চুক্তিটা যে ২০২৭ পর্যন্ত।