এ মৌসুমে লা লিগায় অন্যতম সেরা আবিষ্কারের নাম সাভিও। গত জুলাইয়ে ধারে জিরোনায় আসার আগপর্যন্ত তাঁর নাম তেমন কেউ জানত না। ট্রয়েস নামে ফ্রান্সের দ্বিতীয় স্তরের ক্লাব থেকে এখানে-সেখানে ধারে খেলতে থাকা একজনকে চেনার তেমন কোনো কারণও নেই।
কিন্তু মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে বদলে গেছে সেই সাভিওর জগৎ। ইউরোপিয়ান পরাশক্তিদের কাঙ্ক্ষিত এক নাম হয়ে উঠেছেন এ ফরোয়ার্ড। ম্যানচেস্টার সিটির মতো ক্লাবের সঙ্গে আগামী মৌসুমে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে কথাও পাকা করে রেখেছেন। বৈপ্লবিক এক পরিবর্তনই বটে!
এত অল্প সময়ে কীভাবে নিজেকে বদলে ফেললেন সাভিও? উত্তরটা লা লিগায় তাঁর ক্লাব জিরোনার অবস্থানের দিকে তাকালেই পাওয়া যাবে। দুর্দান্ত এক মৌসুম কাটানো জিরোনা চলতি মৌসুমে লা লিগায় দুই নম্বরে আছে। শীর্ষে থাকা রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে পয়েন্টের পার্থক্য মাত্র ২। ২৩ ম্যাচে রিয়ালের পয়েন্ট ৫৮ আর সমান ম্যাচে জিরোনার ৫৬। আজ রাতে মুখোমুখি হবে দুদল। এই ম্যাচে রিয়ালকে হারালে ফের শীর্ষে উঠে আসবে জিরোনা।
মৌসুম শুরুর আগে এমন উত্থানের গল্প হয়তো খোদ জিরোনা–সমর্থকেরাও কল্পনা করেনি। আর এই অসম্ভবকে সম্ভব করার গল্পটা লেখার অন্যতম রূপকার সাভিও। তাঁকে নিয়ে জিরোনা কোচ মিশেল বলেছেন, ‘গত বছরের অনূর্ধ্ব ২০ বিশ্বকাপ থেকে ম্যানেজমেন্ট সাভিনিওর ওপর নজর রেখেছে। তাকে আমাদের দারুণ মনে হয়েছিল। মনে হয়েছিল সে আমাদের জন্য যোগ্য খেলোয়াড়।’
মিশেলের পরের কথাটির ওজন অবশ্য আরও বেশি, ‘আমি আরেকটি বড় কথা বলব: ভিনিসিয়ুস জুনিয়র স্পেনে আসার পর আমি ওয়ান অন ওয়ানে সাভিওর মতো এমন প্রতিভা আর দেখিনি।’
চলতি মৌসুমে লা লিগায় জিরোনার হয়ে ২৩ ম্যাচে ৫ গোল ও ৭টি অ্যাসিস্ট করেছেন সাভিও। তবে এ পরিসংখ্যান দিয়ে তাঁর পারফরম্যান্সের ধার বোঝা কঠিন।
সামগ্রিকভাবে জিরোনাকে দারুণ দৃঢ়তা দিয়েছেন সাভিও, যা তাঁকে নিয়ে এসেছে ম্যান সিটির রাডারেও। আর এই সুযোগ লুফে নিতে প্রস্তুত সাভিও নিজেও। কয় দিন আগেই তিনি বলেছিলেন, ‘আমি সিটিতে খেলতে চাই।’ এখন অপেক্ষা শুধুই দুয়ে দুয়ে চার মেলার।
প্রশ্ন হচ্ছে, তারকাবহুল সিটিতে কীভাবে নিজেকে মেলে ধরবেন সাভিও? পেপ গার্দিওলাই–বা কীভাবে কাজে লাগাবেন তাঁকে? ঝলমলে, সাহসী এবং রোমাঞ্চ ছড়ানো এক উইঙ্গার এই সাভিও। মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা তাঁকে উইংয়ে খেলা বাকিদের চেয়ে একেবারে আলাদা করেছে। গড়ে ওঠার সময়টাতে তাঁকে আধুনিক ইনভার্টেড উইঙ্গার ছাঁচে ডান পাশে নিয়মিত ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু জিরোনাতে মিশেল তাঁর উইং বদলে দেন, যা সাভিওর সেরাটা বের করে আনে।
ডান প্রান্তে আলো ছড়ানো এবং ভেতরে ঢোকার দক্ষতার পাশাপাশি ওয়ান অন ওয়ানেও সাভিওর সামর্থ্য প্রশ্নাতীত। একই সঙ্গে দুর্দান্ত ক্রসিং দক্ষতাও তাঁকে এগিয়ে রেখেছে সমসাময়িকদের চেয়ে। এই ক্রসগুলো প্রতিপক্ষ রক্ষণে আতঙ্ক ছড়ানোর পাশাপাশি গোলরক্ষককেও বিভ্রান্ত করতে পারে। কিছুটা পুরোনো দিনের উইঙ্গার মতো করে খেলা সাভিও ওয়ান অন ওয়ান দ্বৈরথের পর ওপেন প্লে থেকে এখন পর্যন্ত ১৫টি ক্রস দিয়েছেন, যা কিনা লা লিগায় এ মৌসুমে অন্য যেকোনো খেলোয়াড়ের চেয়ে ৪টি বেশি।
জিরোনার আক্রমণে সৃষ্টিশীলতা নিয়ে আসার পাশাপাশি প্রতিপক্ষ রক্ষণে হুমকি ছড়াতেও বড় ভূমিকা রেখে চলেছেন সাভিও। যেখানে ওপেন প্লেতে এ মৌসুমে ২৮টি সুযোগ তৈরির পাশাপাশি লিগে সর্বোচ্চ ৭টি ওপেন প্লে সহায়তাও আছে তাঁর। উইংয়ে সাভিওর এমন নজরকাড়া পারফরম্যান্সের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী জিরোনার সেন্টার ফরোয়ার্ড আরতেম ডোভবিক।
যিনি ১৪ গোল করে লা লিগায় সর্বোচ্চ গোলদাতাও বটে। ডোভবিকের সামনে সাভিও এ মৌসুমে ৮টি সুযোগ তৈরি করেছে। এ দুজনের দারুণ বোঝাপড়ায় দারুণভাবে উপকৃত হয়েছে জিরোনা। সিটিতে আর্লিং হলান্ডের সঙ্গে তেমন একটি জুটি সাভিও গড়তে পারবেন বলে মনে করছেন অনেকে।