কিছুদিন ধরেই বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে আলোচনায় ম্যানচেস্টার সিটির ইংলিশ ডিফেন্ডার কাইল ওয়াকার। স্ত্রীর সঙ্গে প্রতারণার এ ঘটনা নিয়ে এবার বিস্তারিত কথা বলেছেন গত মৌসুমে সিটির হয়ে ট্রেবল জেতা ওয়াকার। ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড ডেইলি সানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইংলিশ তারকা বলেছেন, তিনি আহাম্মকের মতো কাজ করেছেন এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
মূলত স্ত্রী অ্যানি কিলনারের সঙ্গে প্রতারণা, মডেল লরিন গুডম্যানের সঙ্গে সম্পর্ক, গোপন সন্তান নিয়ে সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন ওয়াকার। ৩৩ বছর বয়সী এই সিটি ডিফেন্ডার বলেছেন পরিবার হারানোর যন্ত্রণার কথা। পাশাপাশি সবকিছুর জন্য দায় নিজের কাঁধেই নিয়েছেন। যার ফলস্বরূপ বর্তমানে নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করতে হচ্ছে ওয়াকারকে।
ওয়াকারের বয়স যখন ১৭, তখন থেকে তাঁর সঙ্গে অ্যানির পরিচয়। দুজন প্রায় এক যুগ প্রেম করেছেন। বিয়ে করেছেন ২০২২ সালে। এখন পর্যন্ত এই দম্পতির তিন সন্তান। কিন্তু এরই মধ্যে মডেল লরিন গুডম্যানের সঙ্গে পরিচয় হয় ওয়াকারের। দুজনের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠতায় রূপ নেয়। বলে রাখা ভালো, ওয়াকার লরিনের সঙ্গে দুবার পরকীয়ায় জড়িয়েছেন। একবার অ্যানির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বিয়ের আগে এবং এবার পরে। ২০২০ সালের এপ্রিলে লরিন প্রথম সন্তানের জন্ম দেন এবং সবাইকে জানিয়ে দেন, তাঁর ওই সন্তানের বাবা ওয়াকার।
খবরটি ছড়িয়ে পড়ার আগেই অবশ্য ওয়াকার সেটি সিটির অনুশীলন মাঠ থেকে ফোন করে অ্যানিকে জানান। তিনি অ্যানিকে সে সময় কী বলেছিলেন তা তুলে ধরেন এভাবে, ‘আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই। আমি একজনের সঙ্গে রাত কাটিয়েছি।’ স্ত্রীর চিৎকারের মধ্যেই ওয়াকার বলেন এবং যোগ করেন, ‘আমি তোমাকে আরও কিছু বলতে চাই।’ অ্যানি তখন চিৎকার বলেন, ‘কাইল, নাহ্, আমি হাতজোড় করছি, এখানে আর কিছু থাকতে পারে না। দয়া করে এটা বলবে না যে ওর সঙ্গে তোমার বাচ্চাও আছে।’
ওয়াকার অ্যানিকে জানান যে সত্যি সত্যিই লরিনের গর্ভে তাঁর সন্তান। এ ঘটনার পর ওয়াকার পরিবার থেকে বেরিয়ে মাসে ৮ হাজার পাউন্ড ভাড়ার একটি বাসায় ওঠেন। পরে অবশ্য অ্যানি তাঁকে ফিরিয়ে নেন এবং বলেন, ‘কীভাবে আমি মানুষটাকে ঘৃণা করতে পারি, যাকে আমার সন্তানেরা এত ভালোবাসে।’ সে সময় ওয়াকার প্রতিজ্ঞা করেন, লরিনের গর্ভে জন্ম নেওয়া সন্তানের ভরণপোষণের বাইরে তিনি আর ওদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখবেন না।
কিন্তু ২০২২ সালে লরিন জানান, তিনি ওয়াকারের কাছাকাছি বাড়ি নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। ওয়াকার সে সময় আইনজীবীর অফিসে লরিনের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে থামানোর চেষ্টা করেন। এরপর অবশ্য ওয়াকার তাঁর ছেলে কাইরোর সঙ্গে প্রথমবারের মতো দেখা করতে যান এবং ফের একে অপরের সংস্পর্শে আসেন। ২০২২ সালের অক্টোবরে ওয়াকার কুঁচকির অস্ত্রোপচারের জন্য লন্ডন যান এবং সেখানে লরিনের সঙ্গে দেখা করেন।
এ নিয়ে সিটি ডিফেন্ডার বলেছেন, ‘এটা ইচ্ছাকৃত বা পূর্বপরিকল্পিত কিছু ছিল না। কিন্তু আমরা যৌন সম্পর্কে জড়িত হই।’ আর এ ঘটনার কদিন পরেই বোমা ফাটানোর মতো খবরটি পান ওয়াকার। তিনি জানতে পারেন লরিন আবার সন্তানসম্ভবা। খবরটা শোনার পর ওয়াকারের নাকি প্রায় অজ্ঞান হওয়ার মতো দশা হয়।
এর মধ্যে লরিন দ্বিতীয় সন্তানের মা হন। লরিনের কাছ থেকে অ্যানিও খবররটি জানেন। সে সময় অ্যানি নিজেও সন্তানসম্ভবা ছিলেন। সেই খবরটি পান লরিন, ওয়াকার বুঝতে পারেন সর্বনাশ যা হওয়ার হয়ে গেছে। এরপর ওয়াকারকে চেশিয়ারের বাসা ছাড়তে হয় এবং অ্যানি তাঁর বিয়ের আংটিও খুলে ফেলেন। ওয়াকার বলেন, ‘আমি জানি না ভবিষ্যতে কী অপেক্ষা করছে। কিন্তু আমার ব্যাখ্যা দেওয়া উচিত। আমার পরিবার, সন্তানেরা অনেক কিছুর মধ্য দিয়ে গেছে। যে জন্য কেবল আমিই দায়ী।’
ওয়াকার তাঁর তিন সন্তানের মা অ্যানির কাছে এমন কাণ্ডের জন্য ক্ষমাও চেয়েছেন, যাঁর গর্ভে এই মুহূর্তে বড় হচ্ছে ওয়াকারের চতুর্থ সন্তান। দ্য সানকে ওয়াকার বলেছেন, ‘আমি যা করেছি, সেটা ভয়াবহ। আমি এর পুরো দায় নিচ্ছি। আমি আহাম্মকি করেছি, আহাম্মকের মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি ভাবতেও পারছি না অ্যানি কিসের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করার চেষ্টা করেছি কিন্তু সেখানে যন্ত্রণা ও আঘাত ছাড়া কিছু নেই। যে মানুষটির তাকে ভালোবাসার, যত্ন নেওয়ার এবং পাশে থাকার কথা ছিল, সে কিনা এমন কাজ করেছে!’
অগ্নিপরীক্ষার এই সময়টা ভুলে যেতে চেয়েছেন জানিয়ে ওয়াকার আরও বলেছেন, ‘এই ঘটনার জন্য একমাত্র আমিই দায়ী। আমার যে দায়িত্ব এবং ভূমিকা আছে, সে সম্পর্কে আমি সচেতন। কিন্তু আমি বোকার মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাকে নিজের ভুলগুলো মেনে নিতে হবে এবং আমি সবার কাছে ঋণী। আমার কাজ অনেকের কষ্টের কারণ হয়েছে। আমি দুঃখিত, কারণ একটি পরিবারে এমনটা ঘটা উচিত হয়নি।’
সন্তানদের মিস করার কথা বলতে গিয়ে ওয়াকার বলেছেন, ‘আমার ছোট ছেলেটি প্রতিদিন আমার সঙ্গে ঘুমাত। আমি ইংল্যান্ড দলের সঙ্গে লম্বা সময়ের জন্য দূরে থাকতে অভ্যস্ত। ফেসটাইমে আমরা শুভরাত বলে ঘুমাতে যেতাম। কিন্তু এখন নিজের ভুলের জন্য আমি তার সঙ্গে নেই। ভুল সম্ভবত সঠিক শব্দ নয়। আমিই এটা বেছে নিয়েছি—এটাই আমাকে কষ্ট দেয়।’