কেমন হবে আর্জেন্টিনার অলিম্পিক দল—প্রশ্নটা ফুটবল–বিশ্বে অনেক দিন ধরেই শোনা যাচ্ছে। এমনিতে অলিম্পিকে যেকোনো দেশের অনূর্ধ্ব–২৩ দল খেলে। নির্দিষ্ট দলের সমর্থক ছাড়া বয়সভিত্তিক এ দল নিয়ে খুব বেশি একটা আগ্রহ থাকার কথা নয় ফুটবলপ্রেমীদের। সেটা নেইও, এরপরও আর্জেন্টিনা দল নিয়ে এত আগ্রহের কী কারণ? এটা আসলে অলিম্পিক দলে তিনজন বেশি বয়সী খেলোয়াড় খেলাতে পারার নিয়মের জন্যই।
অলিম্পিকে হাভিয়ের মাচেরানোর আর্জেন্টিনা দলের সেই তিন সিনিয়র খেলোয়াড় কারা হবেন—ফুটবলপ্রেমীদের আগ্রহ আসলে এটাকে ঘিরেই। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী দলের কয়েকজন খেলোয়াড় এরই মধ্যে অলিম্পিকে খেলার আগ্রহ জানিয়ে রেখেছে। আর আর্জেন্টিনার অলিম্পিক দলের কোচ মাচেরানো শুধু একজনকেই খেলার জন্য নিমন্ত্রণ জানিয়ে রেখেছেন—বিশ্বকাপজয়ী দলের অধিনায়ক লিওনেল মেসি।
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী দল থেকে সবার আগে অলিম্পিক ফুটবলে খেলার আগ্রহের কথা জানিয়ে রেখেছেন গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। ‘ডিরেকটিভি স্পোর্টস’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্তিনেজ বলেছেন, ‘জাতীয় দলের হয়ে কোনো (শিরোপা) যদি আমি মিস করে থাকি, সেটা অলিম্পিক গেমস।’ এটা বলার পর সঙ্গে এটিও যোগ করেছিলেন যে ‘তরুণ খেলোয়াড়দেরই সুযোগটা প্রাপ্য।’
লিওনেল স্কালোনির আর্জেন্টিনা দল থেকে মাচেরানোর দলের হয়ে অলিম্পিক খেলার ইচ্ছার কথা সর্বশেষ জানিয়েছেন আরেক মার্তিনেজ—লাওতারো মার্তিনেজ। ইন্টার মিলানের ফরোয়ার্ড বলেছেন, ‘আপনারা যদি আমাকে হিসাবে রাখেন, আমি খেলার জন্য তৈরি আছি। আমি শুধু এটুকু বলতে পারি, আমি খেলার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু নিশ্চিত করেই এটা আমাদের ওপর নির্ভর করে না। দলে ডাক পেলে আমি নিজের সেরাটা দিতে তৈরি।’
দুই মার্তিনেজ ছাড়াও আর্জেন্টিনার হয়ে অলিম্পিক খেলতে উন্মুখ স্কালোনির দলের তৃতীয় অধিনায়ক নিকোলাস ওতামেন্দি, নিকোলাস তালিয়াফিকো, কুতি রোমেরো ও মেসির ‘বডিগার্ড’ হিসেবে পরিচিত রদ্রিগো দি পল। ওতামেন্দি নিজের ইচ্ছার কথা জানাতে গিয়ে বলেছেন, ‘এটা হবে একটি স্বপ্নপূরণ। কিন্তু সিদ্ধান্ত হাভিয়ের মাচেরানোর।’ রোমেরো বলেছেন, ‘আমি কখনো অলিম্পিকে খেলিনি। আমি আমার দলকে সাহায্য করতে চাই। কিন্তু এটা আমার ওপর নির্ভর করে না, ক্লাবের ব্যাপার আছে। তবে মাচে (হাভিয়ের মাচেরানো) যদি আমাকে দলে ডাকে, আমি তৈরি।’
তালিয়াফিকো অলিম্পিক খেলতে চান ভিন্ন রোমাঞ্চের জন্য, ‘প্রতিদিনের জীবনের বাইরে ভিন্ন কিছু হবে এটা। (অলিম্পিকে খেলা) দারুণ একটা ব্যাপার হবে। আমার এই অভিজ্ঞতা নেই। অলিম্পিকে যেতে পারলে অসাধারণ এক ব্যাপার হবে।’ দি পল কোনো ভণিতা না করে সরাসরি নিজের ইচ্ছার কথা বলেছেন, ‘আমি প্রস্তুত।’ তবে ক্লাব তাঁকে ছাড়বে কি না, এ নিয়ে কিছুটা শঙ্কায় দি পল, ‘বিষয়টি আমার ওপর নির্ভর করে না। এটা ফিফার প্রতিযোগিতা নয় এবং ক্লাব আমাদের ছাড়তে বাধ্য নয়।’
দি মারিয়া এর আগে জানিয়েছিলেন, জুন–জুলাইয়ের কোপা আমেরিকাই হবে আর্জেন্টিনার হয়ে তাঁর শেষ টুর্নামেন্ট। সে হিসাবে কোপা আমেরিকার পর শুরু হতে যাওয়া প্যারিস অলিম্পিকের ফুটবলে খেলা হবে না তাঁর। কিন্তু কোস্টারিকার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচের আগে আর্জেন্টিনার কোচ স্কালোনি বলেছেন, তাঁর দল থেকে দুজনের অলিম্পিকে খেলা নিশ্চিত—একজন মেসি, অন্যজন দি মারিয়া।
মেসি আগে থেকেই অলিম্পিকে খেলার ইচ্ছার কথা বলেছিলেন। অলিম্পিক দলের কোচ মাচেরানোও তাঁকে খেলার অনুরোধ জানিয়েছেন। কিন্তু কোপা আমেরিকা আর তাঁর ক্লাব ইন্টার মায়ামির ঠাসা সূচির মধ্যে মেসি অলিম্পিকে খেলতে পারবেন কি না, নিশ্চিত নয়।
সব মিলিয়ে মেসিকে পাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে মাচেরানো বলেছেন, ‘লিওর বিষয়টিও আর সব বিদেশি ক্লাবে খেলা খেলোয়াড়দের মতো। আমাদের কথা বলতে হবে এবং দেখি কী হয়। আমরা তো জানিই, কোপা আমেরিকাও আছে। দেখতে হবে, সেটা কীভাবে শেষ হয়। কোপা আমেরিকায় খেলতে যাওয়া খেলোয়াড়দের ক্লাব থেকে লম্বা সময় বিচ্ছিন্ন থাকতে হবে। এটা সহজ নয়। কিন্তু আশা তো থাকেই।’