প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে মরক্কো! তাও আবার সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে হারিয়ে। মরক্কোর ফুটবল ইতিহাসে এখন পর্যন্ত এর চেয়ে বড় দিন আর আসেনি।
আল রাইয়ানে বিশ্বকাপের শেষ ষোলোর ম্যাচে নির্ধারিত সময় ও অতিরিক্ত সময় মিলিয়ে গোল করার দারুণ সুযোগ পেয়েছিল দুই দলই। কিন্তু পুরোটা সময় গোল নষ্ট করার মহড়া দিয়ে গেছে দুই দল।
স্পেন তো ১০১৯টা পাস খেলেছে নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময় মিলিয়ে। কিন্তু আসল কাজটিই করতে পারেনি। মরক্কোও প্রায় নিশ্চিত গোলের সুযোগ নষ্ট করেছে গোটাতিনেক। ফলে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। স্নায়ুচাপের এই পরীক্ষায় স্পেনকে ৩–০ ব্যবধানে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে মরক্কো।
মরক্কোর সাবিরি টাইব্রেকারে প্রথম শটেই লক্ষ্যভেদ করেন। স্পেনের পাবলো সারাবিয়া প্রথম শটেই হতাশ করেন। বল লাগে পোস্টে। মরক্কোর দ্বিতীয় শটে হাকিম জিয়েশও লক্ষ্যভেদ করেন। মরক্কোর গোলকিপার ইয়াসিন বুনু স্পেনের কার্লোস সোলেরের পরের শটও রুখে দিয়ে দেশকে নতুন ইতিহাসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যান।
কিন্তু মরক্কোর তৃতীয় শটটা মিস করেন বুনু। এরপর আবারও তাদের গোলরক্ষক বুনুর চমক। সের্হিও বুসকেটসের শটও রুখে দেন! নিজেদের চতুর্থ শটটি জালে পাঠিয়ে মরক্কোকে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে তোলেন আশরাফ হাকিমি।
এর আগে অতিরিক্ত সময়ের ৫ মিনিটের মাথায় সফেয়ান আমরাবাতারে থ্রু পাস থেকে স্প্যানিশ গোলকিপার সিমোনকে একা পেয়ে গিয়েছিলেন মরক্কোর ফরোয়ার্ড আবদেল হামিদ সাবিরি। অফসাইড হলেও বলটা তাঁর জালে পাঠানো উচিত ছিল। গোলের সন্ধানে মরিয়া স্পেন কোচ এনরিকে ৯৮ মিনিটে ওলমোকে তুলে আনসু ফাতিকে নামান। কিন্তু ১০৪ মিনিটের মাথায় ম্যাচের সেরা সুযোগটা মরক্কোই পেয়েছিল। মিডফিল্ডার আজ্জেদিন ওউনাহি স্প্যানিশ রক্ষণ চিরে থ্রু বল দেন ফরোয়ার্ড ওয়ালিদ চেদ্দিরাকে।
সিমোনকে সামনে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি। উল্টো পা দিয়ে দারুণ সেভ করেন স্প্যানিশ গোলকিপার। অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে স্পেন ও মরক্কো দুটি করে গোলের সুযোগ পেলেও হতাশ করেছে দুই দলই। বিশেষ করে অতিরিক্ত সময়ের শেষ শটটি পাবলো সারাবিয়া পোস্টে মেরে স্পেনের হতাশা বাড়ান।
নির্ধারিত সময়ের প্রথমার্ধে দুই দলই খেলেছে একঘেয়ে ফুটবল। এর মধ্যেই ৪২ মিনিটে হাকিমির পাস থেকে জোরাল শটে স্প্যানিশ গোলকিপার উনাই সিমোনের পরীক্ষা নেন মরক্কোর সেন্টারব্যাক নায়েফ আগুয়ার্দ। পরে জিয়েশও গোলের আরেকটা সুযোগ নষ্ট করেন।
বিরতির পর দুই দলের খেলায়ই গতি বেড়েছে। দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম ১৫ মিনিটের মধ্যে গোলমুখ খুলতে না পারার হতাশায় আসেনসিওকে তুলে আলভারো মোরাতাকে (৬৩ মিনিট) মাঠে নামান এনরিকে। বদলি হিয়ে মাঠে নেমে গোল এনে দিতে দক্ষ এই স্ট্রাইকারকে বক্সে কড়া পাহাড়ায় রাখে মরক্কোর রক্ষণ। তবে ৮১ মিনিটে কার্লোসে সোলেরের থ্রু বল থেকে ভালো সুযোগ পেয়েও শট পোস্টে রাখতে পারেননি মোরাতা।
নির্ধারিত সময়ের শেষদিকে মরক্কোর রক্ষণভাগকে বেশ চাপে রাখেন স্প্যানিশ খেলোয়াড়েরা। কিন্তু রোমেইন সাইস ও নায়েফ আগুয়ার্দদের গড়া সেই রক্ষণভাগ কোনো বিপদ হতে দেয়নি। মনে হচ্ছিল, ম্যাচটা টাইব্রেকারে নিয়ে যেতে পারলেই তারা খুশি। শেষ পর্যন্ত সেটা তারা করতে পেরেছেন এবং জয়ের হাসি নিয়েই মাঠ ছেড়েছেন।