গত বছরের ১৮ ডিসেম্বরের পর লিওনেল মেসির নামের পাশে অষ্টম ব্যালন ডি’অর ট্রফিটি বসিয়ে দিয়েছিলেন অনেকে। ৩৬ বছর পর আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতানো মেসির এ ট্রফি জয় নিয়ে সে সময় সন্দেহের কোনো অবকাশও ছিল না। বিশ্বকাপ জয়ের মৌসুমে ব্যালন ডি’অরের দৌড়ে টুর্নামেন্ট মাতানো খেলোয়াড়টির এগিয়ে থাকাই তো স্বাভাবিক!
তার ওপর খেলোয়াড়টির নাম যদি মেসি হয়, তবে তো কথাই নেই। কিন্তু ডিসেম্বরের শেষ ভাগে মেসির পুরস্কার জেতা যতটা অনিবার্য মনে হচ্ছিল, এখন এসে সে পরিস্থিতি কিছুটা হলেও বদলেছে।
বিশ্বকাপ জিতে ব্যক্তিগত শ্রেষ্ঠত্বের দৌড়ে মেসি অনেকটা এগিয়ে থাকলেও একেবারে নিরঙ্কুশ ফেবারিট আর নন। অন্তত দুটি নাম মেসির অষ্টম ব্যালন ডি’অর জয়ের পথে বড় বাধা তৈরি করতে পারে। যেখানে একজন হলেন আর্লিং হলান্ড এবং অন্যজন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র।
ব্যালন ডি’অরে কেন মেসি এখন আর কেন শতভাগ ফেবারিট নন, তা লরিয়াস পুরস্কার অনুষ্ঠানে এসে স্পষ্ট করেছেন লুইস ফিগো। ব্যালন ডি’অর জয়ে কাকে ফেবারিট মানছেন জানতে চাইলে পর্তুগিজ কিংবদন্তি বলেছেন, ‘আমি মেসিকে বাছাই করব না; কারণ, সে আর চ্যাম্পিয়নস লিগে নেই। আমি মনে করি, যারা ভোট দেয় তাদের ওপর এই প্রতিযোগিতার দারুণ প্রভাব আছে।’
এরপর চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল পার্থক্য গড়ে দিতে পারে উল্লেখ করে ফিগো বলেছেন, ‘বাছাই করা সত্যিই অনেক কঠিন। এটা মৌসুমের বাকি সময়ের ওপর নির্ভর করছে। বিশেষ করে আমাদের চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে; যা অনেক পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। তবে আমি হলান্ডকেই বেছে নেব। সে এখনো প্রতিযোগিতায় আছে এবং অসাধারণ মৌসুম কাটিয়েছে।’
ফিগোর বক্তব্যই মূলত স্পষ্ট করে দিচ্ছে মেসি কেন এখন আর ব্যালন ডি’অরের দৌড়ে এককভাবে ফেবারিট নন। বিশ্বকাপজয়ী মেসি চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোতেই বাদ পড়েছেন। ফ্রেঞ্চ লিগ আঁ’র শিরোপাদৌড়ে তাঁর দল পিএসজি এগিয়ে থাকলেও ব্যালন ডি’অর পুরস্কার নির্ধারণে এই শিরোপার প্রভাব নেই বলেই চলে।
ক্লাবের হয়ে এখন পর্যন্ত সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৩৭ ম্যাচে ২০ গোল করেছেন মেসি, সহায়তা করেছেন আরও ১৯ গোলে। ক্লাব পারফরম্যান্স বিবেচনায় নিলে মেসি গত মৌসুমের চেয়ে ভালো করলেও এবার মেসির পারফরম্যান্স মোটেই ব্যালন ডি’অর জয়ের মতো ছিল না। তবে বিশ্বকাপ জেতাকে যদি চূড়ান্ত মানদণ্ড ধরা হয়, তবে মেসির ব্যালন ডি’অর জেতাটা সময়ের ব্যাপারই বলা যায়।
চলতি মৌসুমে হলান্ড অতিমানবীয় পারফরম্যান্স না করলে মেসির ব্যালন ডি’অর জয় নিয়ে তৈরি হওয়া শঙ্কার মেঘটা হয়তো থাকত না। এ মৌসুমে অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স করেছেন নরওয়েজীয় স্ট্রাইকার। ভেঙেছেন অসংখ্য রেকর্ড।
সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে হলান্ড গোল করেছেন ৪৭ ম্যাচে ৫১টি। প্রিমিয়ার লিগে করেছেন ৩২ ম্যাচে রেকর্ড ৩৫ গোল। হাতে থাকা বাকি ম্যাচগুলোতেও হলান্ড ভেঙে দিতে পারেন আরও একাধিক রেকর্ড; যা হলান্ডকে ব্যালন ডি’অর জয়ের পথে আরও কিছু দূর এগিয়ে দেবে।
শুধু ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের দৌড়েই নয়, দলীয় পর্যায়ে হলান্ডের সামনে সুযোগ আছে অনন্য অর্জনের। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ, এফএ কাপ এবং চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার সুযোগ আছে হলান্ডের সামনে। ট্রেবল জয়ের মিশনে হলান্ডের সিটি সফলভাবে যদি উতরে যেতে পারে, তবে মেসিকে ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হবে।
এমনকি তাতে মেসির হাত থেকে অষ্টম ব্যালন ডি’অর ট্রফিটা ফসকেও যেতে পারে। তবে হলান্ড যদি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে না পারেন, তবে ব্যালন ডি’অরের সম্ভাবনায় অনেকটাই পিছিয়ে পড়বেন গার্দিওলার এই ‘গোলমেশিন’।
গত মৌসুমে ভিনিসিয়ুসকে ব্যালন ডি’অর তালিকায় অষ্টম হতে দেখে নেইমার টুইটারে লিখেছিলেন, ‘বেনজেমা সেরা হওয়ার যোগ্য। তবে ভিনির অষ্টম হওয়াটা তামাশা। তার অন্তত সেরা তিনে থাকা উচিত ছিল।’
এবারও ব্যালন ডি’অরের দৌড়ে আছেন ভিনি। তাঁর জন্যও ব্যালন ডি’অরের দৌড়ে থাকার বড় শর্ত চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা। চলতি মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৫১ ম্যাচে ২৩ গোলের পাশাপাশি ২১টি অ্যাসিস্ট করেছেন এই রিয়াল মাদ্রিদ উইঙ্গার। তবে পরিসংখ্যানের চেয়ে ভিনি এগিয়ে থাকবেন ম্যাচে তাঁর প্রভাব বিবেচনায়। এরপরও মেসি-হলান্ডকে টপকে ব্রাজিলিয়ান তারকা ব্যালন ডি’অর জেতা একটু কঠিনই হতে পারে।