প্রথমার্ধে ৫ মিনিট যোগ করা সময় দিয়েছেন রেফারি স্লাভকো ভিনচিচ। ভাগ্যিস, অফসাইড থেকে আর গোল হয়নি। নইলে অফসাইড থেকে বাতিল হওয়া গোলের সংখ্যা হয়তো যোগ করা সময়কেও ছাপিয়ে যেত!
লুসাইল স্টেডিয়ামে চোখ রেখে থাকলে নিশ্চয়ই এতক্ষণে বুঝে ফেলেছেন কোন ম্যাচের কথা বলা হচ্ছে। কাতার বিশ্বকাপে আজ এই স্টেডিয়ামে সৌদি আরবের মুখোমুখি হয়েছে আর্জেন্টিনা। লিওনেল মেসির গোলে প্রথমার্ধে ১-০ গোলে এগিয়ে গেলেও এই অর্ধে আরও তিনটি গোল পেতে পারত স্কালোনির দল। কিন্তু অফসাইডের কারণে তিনটি গোলই বাতিল হয়।
বিশ্বকাপের কোনো ম্যাচে অফসাইডের কারণে একটি গোল বাতিল হলেই আলোচনা শুরু হয়। সেখানে তিন-তিনটি গোল বাতিল! সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার ঝড় ওঠাই স্বাভাবিক। অনেকে জানতে চাইছেন, বিশ্বকাপে এক ম্যাচে অফসাইডের কারণে সর্বোচ্চ কতটি গোল বাতিল হয়েছে? কিংবা এক অর্ধে অফসাইডের কারণে এটাই সর্বোচ্চসংখ্যক গোল বাতিলের রেকর্ড কি না?
পরিসংখ্যান খুঁজে এই তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে সৌদি আরবের হাই-লাইন ডিফেন্সের কারণে প্রথমার্ধেই একটি নজির গড়েছে আর্জেন্টিনা। প্রথমার্ধে মোট ৭ বার অফসাইড হয়েছেন আর্জেন্টিনা দলের খেলোয়াড়েরা। ২০০২ বিশ্বকাপের পর এমন নজির এই প্রথম। ২০ বছর আগের বিশ্বকাপে স্পেন-আয়ারল্যান্ড ম্যাচে ৯ বার অফসাইড হয়েছিলেন স্প্যানিশ খেলোয়াড়েরা। এরপর প্রথমার্ধে ৭টি অফসাইড হওয়ার নজির এই প্রথম।
ম্যাচে যেভাবে আর্জেন্টিনার তিনটি গোল বাতিল হয়েছে, তা জানিয়ে রাখা ভালো। ২২ মিনিটে পাপু গোমেজের পাস ধরে গোলকিপারকে একা পেয়ে গিয়েছিলেন মেসি। বল জালে জড়ালেও পরিষ্কার অফসাইড ছিলেন। ৬ মিনিট পর সৌদি হাই-লাইন ডিফেন্সের সুযোগ নিয়ে রদ্রিগো দি পলের পাস পেয়ে গোল করেন মার্তিনেজ। কিন্তু সৌদি ডিফেন্ডারা অনেকটা এগিয়ে রক্ষণ সামলানোয় একটা সুবিধাও পেয়েছে আরব দেশটি। মুভ করতে গিয়ে অফসাইডের কথা আর মাথায় রাখেনি আর্জেন্টাইন আক্রমণভাগ। মার্তিনেজ (২৮ মিনিট) এ যাত্রায়ও সেভাবেই অফসাইড হন। সেকেন্ডখানেক সময় পরে দৌড় দিলেই গোলটা বৈধ হয়ে যেত।
৩৪ মিনিটে সৌদি আরব গোলকিপারকে আবারও একা পেয়ে যান লাওতারো মার্তিনেজ। স্টেপ ওভার করে গোল করলেও আবারও অফসাইড হন। আবারও আগেভাগে দৌড় শুরুর খেসারত দিতে হয় আর্জেন্টিনা স্ট্রাইকারকে।
বিশ্বকাপে কোনো অর্ধে এটাই সর্বোচ্চ অফসাইড হওয়ার নজির আর্জেন্টিনার। ১৯৭৮ বিশ্বকাপে ফ্রান্সের বিপক্ষে প্রথমার্ধে, ১৯৮২ বিশ্বকাপে হাঙ্গেরির বিপক্ষে দ্বিতীয়ার্ধে এবং ১৯৮৬ বিশ্বকাপে উরুগুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয়ার্ধে ছয়বার অফসাইড হয়েছেন আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়েরা। অফসাইডের এই নথিপত্র দেখে প্রশ্ন উঠতে পারে, বিশ্বকাপে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ অফসাইড হয়েছে কোন দেশ? উত্তর হলো ১৯৮২ বিশ্বকাপে কুয়েতের বিপক্ষে ম্যাচে রেকর্ড ২০ বার অফসাইড হয়েছিলেন ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়েরা।
এই ম্যাচে দুই অর্ধ মিলিয়ে মোট ১০ বার অফসাইড হয়েছেন আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়েরা। সৌদি আরব শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলের জয়ে ম্যাচটি জিতে বিশ্বকাপের ইতিহাসে অন্যতম সেরা অঘটনের জন্ম দিয়েছে। তবে একটি বিষয় না বললেই নয়, সৌদি হাই-ডিফেন্সের ছলচাতুরী বুঝে মুভগুলো সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময় দেরিতে করলেই অফসাইডে বাতিল হওয়া তিনটি গোলই পেত আর্জেন্টিনা। তখন আর এই অঘটনের জন্ম হতো না।
সে ক্ষেত্রে একটি স্মৃতি মনে করিয়ে দেওয়া যায়। ১৯৮২ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই ম্যাচে কুয়েতের খেলোয়াড়দের হাই-লাইন ডিফেন্সে খেলিয়েছিলেন কোচ কার্লোস আলবার্তো পারেইরা। এই জাল পেতেই তিনি ইংলিশ খেলোয়াড়দের ২০ বার ফাঁদে ফেলেছিলেন। সৌদি আরবের কোচ হার্ভি রেনাদও ঠিক একই জাল পেতে আর্জেন্টাইন আক্রমণভাগকে ফাঁদে ফেলেছেন।