এবারের প্রিমিয়ার লিগে যে কজন তরুণ নজর কেড়েছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ব্রাদার্স ইউনিয়নের রাব্বি হোসেন রাহুল। লিগে করেছেন ৫ গোল। এর মধ্যে শেষ ৪ ম্যাচে টানা ৪ গোল। লিগে প্রথম ম্যাচেই বসুন্ধরা কিংসের বিপক্ষে ব্রাদার্সের হারে আলাদা করে নিজেকে চিনিয়েছিলেন দারুণ একটা গোল করে।
শনিবার শেষ হওয়া প্রিমিয়ার লিগের প্রথম পর্বে ব্রাদার্সের পারফরম্যান্স হতাশাজনক হলেও রাব্বি নিজেকে সম্ভাবনাময় ফুটবলার হিসেবে প্রমাণ করেছেন। কড়া নাড়ছেন জাতীয় দলেও। ফিলিস্তিনের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের দুটি ম্যাচের আগে সৌদি আরবে অনুশীলন ক্যাম্প করতে যাবে বাংলাদেশ ফুটবল দল। জাতীয় দলের প্রাথমিক স্কোয়াডে রাব্বির ডাক পাওয়া মোটামুটি নিশ্চিতই।
যশোরের বেনাপোলের ছেলে রাব্বি অবশ্য দেশের জার্সি গায়ে চাপিয়েছেন এরই আগেই। গত বছর নেপালে সাফ অনূর্ধ্ব–১৯ ফুটবলে তিনি খেলেছেন বাংলাদেশ দলে। মূল জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপে দাঁড়িয়ে রাব্বি নিজেকে ভাগ্যবান ভাবতেই পারেন।
রাব্বি মূলত বসুন্ধরা কিংসের ফুটবলার। এ মৌসুমের শুরুতে বসুন্ধরা তাঁকে ধারে খেলতে পাঠিয়েছে ব্রাদার্সে। কিংসে থাকলে তিনি আদৌ কোনো ম্যাচে মাঠে নামতে পারতেন কি না সন্দেহ। তারকাখচিত কিংসের মূল একাদশে জায়গা করে নেওয়া যে কত কঠিন, সেটি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছেন জাতীয় দলের হয়ে হালে দারুণ ফুটবল খেলা শেখ মোরছালিন। জাতীয় দলে মূল একাদশের খেলোয়াড় হলেও নিজের ক্লাব কিংসের সেরা ১১–তে জায়গা নেই মোরছালিনের। লিগের প্রথম পর্বে তিনি প্রায় খেলারই সুযোগ পাননি। জাতীয় দলের স্প্যানিশ কোচ কাবরেরা যেটি নিয়ে আগেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তবে মোরছালিনের কিংসের প্রথম একাদশে জায়গা পাওয়াটা ভীষণ কঠিন, সেটি স্বীকার করেছেন কাবরেরাও। তাঁকে একাদশে জায়গা করে নিতে হলে পেছনে ফেলতে হবে কিংসের দুর্দান্ত সব বিদেশি ফুটবলারকে। ব্রাজিলের রবসন দা সিলভা কিংবা মিগুয়েল ফেরেইরার জায়গাতেই শুধু সুযোগ হতে পারে মোরছালিনের।
ব্রাদার্সে খেলতে আসাটা রাব্বির জন্য শাপে বরই বলা চলে। কিংসে থাকলে খেলারই সুযোগ পেতেন না, সেই তিনিই ব্রাদার্সে এসে নিজেকে মেলে ধরেছেন। কখনো রাইট উইং, কখনো মূল স্ট্রাইকার হিসেবে ব্রাদার্সের কমলা জার্সিতে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। রাব্বির ভাষায়, ‘বসুন্ধরা কিংসে খেললে হয়তো সেভাবে সুযোগ পেতাম না। সেখানে আমার খেলার সুযোগটা হবে কীভাবে! দারুণ দল বসুন্ধরার। ওই দলে প্রথম একাদশে জায়গা পেতে হলে অসাধারণ কিছুই করতে হবে। কিন্তু আমি কিংসের প্রতি কৃতজ্ঞ। তাঁরা আমাকে খেলার সুযোগ দিতেই ব্রাদার্সে ধারে পাঠিয়েছে। আমি ভাগ্যবান যে লিগে ব্রাদার্সের জার্সিতে ভালো খেলতে পেরেছি। তবে আরও ভালো লাগত ব্রাদার্স যদি পয়েন্ট তালিকার ওপরের দিকে থাকতে পারত।’
লিগে ব্রাদার্সের অবস্থা শোচনীয়। ৯ ম্যাচে একটিও জয় নেই একসময়ের দেশের ফুটবলের তৃতীয় শক্তির। ৩ ড্র আর ৬ হারে মাত্র ৩ পয়েন্ট নিয়ে তাদের অবস্থান পয়েন্ট তালিকার একেবারে শেষে। ২০২০–২১ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দ্বিতীয় স্তরে নেমে যাওয়া ব্রাদার্স এবারও অবনমনের শঙ্কায়।
২০২২ সালে জাতীয় স্কুল ফুটবল টুর্নামেন্ট নিয়ে উত্থান রাব্বি হোসেনের। এরপর তৃতীয় বিভাগে খেলেন বিক্রমপুর কিংসের হয়ে। সেখান থেকেই নজর কাড়েন বসুন্ধরা কিংসের। এরপর তাঁর ঠিকানা হয় চারবারের প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়নদের দল। কিংস থেকেই এরপর অবশ্য দেশের ফুটবলে দ্বিতীয় স্তর বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে খেলেন ওয়ারীর হয়ে। ব্রাদার্সে খেলতে এসে গোল করেছেন ফর্টিস এফসি, ঢাকা আবাহনী লিমিটেড, শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র ও বাংলাদেশ পুলিশ এফসির বিপক্ষে।
রাব্বির এখন শুধু সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা।