দিদিয়ের দেশমের বিব্রত হওয়ারই কথা। জিনেদিন জিদান তাঁর একসময়ের সতীর্থ, বন্ধুও। ১৯৯৮ সালে ফ্রান্সের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের তো জিদানের প্রতি অন্যরকম কৃতজ্ঞতাবোধই থাকবে। ফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে জিদানের জোড়া গোল ফ্রান্সের কে ভুলবে! ফ্রান্স ফুটবল ফেডারেশনের (এফএফএফ) সদ্য বিদায়ী সভাপতি নোয়েল গ্রায়েত যখন ফরাসি কিংবদন্তিকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন, তখন দেশম তো বিব্রত হতেই পারেন।
ফ্রান্স ফুটবল দলের কোচ হিসেবে ২০২৬ সাল পর্যন্ত চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে দেশমের। এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়েই জিদানকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন ফ্রান্স ফুটবলের সদ্য বিদায়ী প্রধান নোয়েল গ্রায়েত। জিদানের ফ্রান্স দলের কোচ হওয়া নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন, ‘জিদান যদি আমাকে ফোন করত, তাহলে কী হতো? নিশ্চিতভাবে কিছুই হতো না। আমি ওর ফোনই তুলতাম না।’
শুধু এটিই নয়, জিদানকে নিয়ে আরও কিছু মন্তব্য করেন নোয়েল গ্রায়েত। প্রতিটি মন্তব্যই ছিল ফ্রান্সের বিশ্বকাপজয়ী কিংবদন্তি তারকার প্রতি অসম্মানের। তোলপাড় শুরু হয় ফরাসি ফুটবলে। ক্রীড়ামন্ত্রী পর্যন্ত নোয়েল গ্রায়েতকে জিদানের কাছে সরাসরি ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দেন। ৮১ বছর বয়সী ফ্রান্স ফুটবল ফেডারেশনে প্রধান শুধু জিদানের কাছে ক্ষমা চেয়েই পার পাননি, তাঁকে ফেডারেশনের সভাপতির পদও হারাতে হয়েছে। কিলিয়ান এমবাপ্পের মতো তারকাও টুইট করে জিদানের প্রতি নোয়েল গ্রায়েতের বিরূপ মন্তব্যের সমালোচনা করেন।
গতকাল প্যারিসে এক অনুষ্ঠানে দেশমকে বিতর্কটি নিয়ে কথা বলতে হয়েছে। ফ্রান্সের এই কোচও নোয়েল গ্রায়েতের মন্তব্যকে ‘বেমানান’ বলেছেন, ‘সর্বশেষ ফ্রান্স ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতির মন্তব্য নিয়ে যেসব ঘটনা ঘটেছে, যেগুলো তিনি স্বীকার করেছেন, তা বেমানান। আমি মনে করি জিদানের কাছে ক্ষমা চেয়ে তিনি ভালো কাজ করেছেন।’
এই ঘটনায় নিজের সঙ্গে জিদানের একধরনের প্রতিযোগিতা তৈরি করবে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন দেশম, ‘আমি মনে করি, এই পরিস্থিতি আমাদের দুজনের মধ্যে একধরনের প্রতিযোগিতা তৈরি করবে। অনেকে তো তেমনই মনে করছেন। সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই, বহু বছর ধরেই জিদানের প্রতি আমার সম্মান ও শ্রদ্ধা অশেষ। সেটি অতীতেও ছিল, এখনো আছে। এর কারণ তো সবাই জানেন। আমরা অতীতে একসঙ্গে খেলেছি। তা ছাড়া ফরাসি ফুটবলে তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়। আমি এর বাইরে কিছু বলতে চাই না।’
জিদান বেশ আগেই ফ্রান্স জাতীয় দলের কোচ হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। কাতার বিশ্বকাপের পরই দেশমের ফ্রান্সের চুক্তির মেয়াদ ফুরিয়েছিল। তারপর ২০২৬ বিশ্বকাপ পর্যন্ত দেশমের সঙ্গে নতুন চুক্তি করে এফএফএফ। দেশমের পর জিদান ফ্রান্সের কোচ হবেন—এমন কানাঘুষা ছিল কাতার বিশ্বকাপের আগে। ২০১৮ সালে কোচ হিসেবে ফ্রান্সকে বিশ্বকাপ জেতানো দেশম এবার নিজের তৃতীয় (কোচ হিসেবে দ্বিতীয়) বিশ্বকাপ জয়ের দ্বারপ্রান্তে ছিলেন। গত ১৮ ডিসেম্বর শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনালে আর্জেন্টিনার কাছে টাইব্রেকারে হেরে ট্রফিটা আর জিততে পারেননি দেশম। ধারণা করা হচ্ছিল, দেশম হয়তো নিজেই ফ্রান্স জাতীয় দলের কোচের চাকরি থেকে সরে দাঁড়াবেন। কিন্তু বিশ্বকাপের পরপরই তাঁর সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করায় জিদানের ফ্রান্সের কোচ হওয়ার সম্ভাবনাটা শেষ হয়ে যায়।