সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম ম্যাচে ২০ অক্টোবর পাকিস্তানের বিপক্ষে একের পর এক ক্রস করেছেন বক্সে। কিন্তু কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালায় শামসুন্নাহার জুনিয়র বা তহুরা খাতুনরা কাজে লাগাতে পারেননি একটিও।
এ নিয়ে বাংলাদেশ দলের লেফট উইঙ্গার ঋতুপর্ণা চাকমার খানিক আক্ষেপ থাকতেই পারে। তবে মুখে এর প্রকাশ নেই। বরং লাজুক হেসে বলেন, ‘চেষ্টা তো করছি। কেউ গোল করতে না পারলে কী করার আছে।’
এ আক্ষেপটা অবশ্য আর থাকেনি রাঙামাটির কাউখালীর মেয়ের। গ্রুপসেরা হয়ে সপ্তম নারী সাফের সেমিফাইনালে ওঠার পথে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ৩-১ গোলের দারুণ জয়ে ঋতু অবদান রেখেছেন। তহুরার প্রথম ও দলের দ্বিতীয় গোলটি এসেছে তাঁর ক্রসেই।
ঋতু মূলত বাঁ পায়ের খেলোয়াড়। দারুণ সব ক্রস করেন। কিন্তু মাঠে বল পায়ে যতটা সাবলীল, কথা বলায় ততটাই লাজুক। কাঠমান্ডুর পাশের শহর ললিতপুরে আনফা কমপ্লেক্স মাঠে আজ সকালে বাংলাদেশ দলের অনুশীলন শেষে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে প্রথমে বলতে চাননি। শেষে টিম ম্যানেজমেন্টের অনুরোধে কথা বলেন। তাঁকে প্রশ্ন করা করা হয়েছিল, পাকিস্তানের বিপক্ষে গোল করাতে পারেননি। কিন্তু ভারতের বিপক্ষে পেরেছেন। কেমন লাগছে?
উত্তরে ঋতু বলেন, ‘আমি অ্যাসিস্ট করতে বেশি পছন্দ করি। ভারতের বিপক্ষে সুযোগ কাজে লাগাতে পেরেছে, এটা খুবই ভালো লেগেছে।’ কিন্তু নিজের গোল করতে ইচ্ছে হয় না? ‘আমি চেষ্টা করি গোল করার। কিন্তু আমার কপালে গোল জোটে না,’ বলেই হো হো করে হাসেন। হাসি চেপে রাখতে পারেননি উপস্থিত অন্যরাও।
পরক্ষণে দাঁড়াতে হয় গম্ভীর প্রশ্নের সামনে। ২৭ অক্টোবর সেমিফাইনালে বাংলাদেশের সামনে ভুটান, যারা এই সাফে গ্রুপ পর্বে ৩ ম্যাচে ১৭ গোল করেছে। বাংলাদেশ করেছে ২ ম্যাচে ৪টি। গোলের বন্যা বইয়ে দেওয়া এই ভুটান কি একটু চাপ হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের জন্য? ঋতুর কথায়, ‘চাপ বলতে সবাই ভালো দল। কাউকে ছোট করে দেখছি না। ভুটান অনেক উন্নতি করেছে। আমাদের খেলার ধরন সম্পর্কে জানে।’
কাঠমান্ডুতেই ২০২২ সালে সর্বশেষ সাফের সেমিতে ভুটানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ৮-০ ব্যবধানের জয়ে ঋতু করেছিলেন চতুর্থ গোলটি। সেই ভুটানের জালে এবারও গোলের চেষ্টা করবেন তিনি। তবে গোল না পেলেও তাঁর অতৃপ্তি থাকবে না দল জিতলে, ‘দেখুন, গোলের ব্যাপারটা মাঠের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। আমি গোল পাব কী, পাব না—এটা কোনো বিষয় নয়। দলের জয়টাই আসল আমার কাছে। আমরা কেচের পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলার চেষ্টা করব।’
গত আগস্টে ভুটানের রয়্যাল থিম্পু কলেজ এফসিতে খেলেছেন বাংলাদেশের চার মেয়ে। সাবিনা খাতুন, মারিয়া মান্দা ও মনিকা চাকমার সঙ্গে ছিলেন ঋতুপর্ণাও। এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে ক্লাবটির জার্সিতে সাবিনা ছাড়া বাকি তিনজন খেলেছেন এবং নজর কেড়েছেন।
ভুটানে বেশ পরিচিতি পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের ছাত্রী ঋতু। এতে বেশ খুশিই তিনি, ‘ভুটানিরা বলতে গেলে সবাই আমাকে চেনে, আমিও চিনি।’ ভুটানিদের সঙ্গে তাঁর একরকম বন্ধুত্বও হয়ে গেছে। তবে মাঠে সেই বন্ধুত্ব যে থাকবে না, বলে দিয়েছেন ঋতুপর্ণা, ‘শত্রু তো শত্রুই। মাঠের মধ্যে আবার কিসের বন্ধুত্ব।’