ইউরোর সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছেন রদ্রি
ইউরোর সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছেন রদ্রি

ব্যালন ডি’অরও কি তবে রদ্রিরই

ইউরোর ফাইনাল, গোলশূন্য ড্রয়ে শেষ হয়েছে প্রথমার্ধ। বিরতির পর স্প্যানিশ সমর্থকেরা যখন গোলের স্বপ্ন দেখছেন, তখনই আসে বড় ধাক্কা। চোটের কারণে ৪৬ মিনিটে তুলে নেওয়া হলো স্প্যানিশ মিডফিল্ডের অন্যতম ভরসা রদ্রিকে। ফাইনালের মঞ্চে দলের সেরা তারকাকে হারানো মানে মনোবলও হারিয়ে ফেলা!

এই ম্যাচে অবশ্য তেমন কিছুই হয়নি। রদ্রিকে তুলে নেওয়ার পর এক মিনিটের মধ্যে লামিনে ইয়ামালের সহায়তায় গোল করেন নিকো উইলিয়ামস। পরে ম্যাচটি ২-১ গোলে জিতে ইউরোর চতুর্থ শিরোপাও নিশ্চিত করে স্পেন।

একটু গভীরভাবে দেখলে, বার্লিনের ফাইনালে একাদশে রদ্রির নাম ঘোষণার পরই তো স্পেনের জয় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। কারণ, রদ্রি মাঠে নামলে যে তাঁর দল হারে না! সে জন্য বলাও হয়, ট্রফি কিংবা ম্যাচ জিততে চাইলে কোনোভাবে রদ্রিকে দলে নিয়ে আসুন।

দলে রদ্রি থাকা মানেই জয় সুনিশ্চিত! নাহ, এটি মোটেই অতিশয়োক্তি নয়। অন্তত পরিসংখ্যান তেমনটাই বলছে। রদ্রির খেলা শেষ ৮০ ম্যাচের ৭৯টিতেই যে অপরাজিত ছিল তাঁর দল। যাঁর নামের পাশে এমন পরিসংখ্যান, তাঁর মাঠে নামাই তো দলের জয়ের জন্য যথেষ্ট। গতকালও ব্যতিক্রম কিছু হয়নি।

ইউরোর ট্রফি হাতে রদ্রি

কেউ চাইলে অবশ্য ওপরের কথাগুলোকে নিছক কাকতাল বলেও উড়িয়ে দিতে পারেন। কিন্তু মাঝমাঠে হিমালয়ের মতো দৃঢ়তা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা রদ্রিকে উড়িয়ে দেওয়ার বিলাসিতা বোধ হয় কেউ দেখাবেন না। পেপ গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে ম্যাচের পর ম্যাচে দলের রক্ষণ ও আক্রমণভাগের মধ্যে সূত্রধরের কাজ করে গেছেন রদ্রি। ইউরোতে স্পেনের হয়েও সেই দায়িত্ব পালন নিষ্ঠার সঙ্গে। যতক্ষণ মাঠে ছিলেন, রীতিমতো মেশিনের মতো নিজের কাজ করে গেছেন। মাঠে কখনো নিচে নেমে রক্ষণ সামলেছেন, আবার কখনো আক্রমণে গিয়ে দলকে সহায়তা করেছেন।

দলের ব্যাকলাইন থেকে স্পেনের আক্রমণ তৈরিতেও রদ্রির ভূমিকা ছিল অনন্য। ৬ ম্যাচে রদ্রি সব মিলিয়ে মাঠে ছিলেন ৫২১ মিনিট। দলের হয়ে গোলও করেছেন একটি। এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারকে অবশ্য গোল বা গোলে সহায়তা দিয়ে মাপার সুযোগ নেই। ম্যাচের পর ম্যাচে দলের হয়ে অর্কেস্ট্রার কন্ডাক্টরের মতো পায়ের ইশারায় দলকে খেলিয়েছেন তিনি। যেখানে ৪৩৯টি পাসের মধ্যে ৪১১ট পাসই সম্পন্ন করেছেন রদ্রি। তাঁর সঠিক পাস দেওয়ার হার রীতিমতো বিস্ময়কর, ৯২.৮৪ শতাংশ। এমন পারফরম্যান্সে হয়েছেন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ও।

ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে টানা চার লিগ শিরোপা জেতা রদ্রি অনেকের কাছেই বর্তমানের সময়ের সেরা মিডফিল্ডার। স্পেনকে ইউরো জেতানোর পর সময়ের সেরা খেলোয়াড় হিসেবেও উচ্চারিত হচ্ছে তাঁর নাম। এমনকি ইউরো জয়ের পর স্পেনের কোচ দে লা ফুয়েন্তে তো রদ্রির হাতেই ব্যালন ডি’অরটা তুলে দিতে বলেছেন, ‘আমার চোখে রদ্রিই বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়। তাঁকে এখনই ব্যালন ডি’অরটা দিয়ে দিন, প্লিজ।’

শুনতে আবেগপ্রবণ মনে হলেও ফুয়েন্তের এ দাবি একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার মতোও নয়। ক্লাব ও দলীয় পর্যায়ে ব্যক্তিগত নৈপুণ্য দেখানোর পাশাপাশি মৌসুমের দুটি বড় শিরোপাও এখন রদ্রির দখলে। সিটির হয়ে জিতেছেন প্রিমিয়ার লিগ আর স্পেনের হয়ে ইউরোপ শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা ইউরো। শিরোপা জয়ের পর ব্যালন ডি’অর নিয়ে কথা বলেছেন রদ্রি নিজেও। নিজের জন্য সরাসরি দাবি না করলেও স্পেনের কারোরই এটি জেতা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন রদ্রি, ‘সত্যি কথা বলতে আমি চাই কোনো স্প্যানিয়ার্ড এটি (ব্যালন ডি’অর) জিতুক। সে যেই জিতুক। ব্যাপারটা দারুণ হবে।’

শেষ পর্যন্ত রদ্রি বা স্পেনের কেউ ব্যালন ডি’অর জিতবেন কি না, সে উত্তর সময়ই দেবে। তবে ভিনিসিয়ুস জুনিয়র-জুড বেলিংহামদের পরিবর্তে রদ্রির হাতে পুরস্কারটি উঠলে, সেটা খুব বেশি বেমানানও নিশ্চয় হবে না!