‘আমরা অভিনব। তারা কখনো আমাদের মতো হতে পারবে না। লা মাসিয়ার তরুণদের নিয়ে আমরা দারুণ এক দল। কী দারুণ ছন্দ! দারুণ গর্বের বিষয়’—এল ক্লাসিকোয় রিয়াল মাদ্রিদকে ৪–০ গোলে উড়িয়ে দেওয়ার পর পোস্টটি করেন বার্সেলোনার সাবেক ডিফেন্ডার জেরার্দ পিকে। নিজের সাবেক দলের প্রশংসায় পিকে এই পোস্ট দিলেও বার্সায় তারুণ্যের জয়জয়কার নিয়ে বলা কথাগুলো একেবারেই মিথ্যা নয়।
হান্সি ফ্লিকের অধীনে বার্সার বদলে যাওয়ার পেছনে যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কাজ করছে, তারুণ্যের ছোঁয়া তার অন্যতম। গত কয়েক মৌসুম ধরেই অবশ্য বার্সায় তারুণ্যের আধিপত্য দেখা যাচ্ছিল, বেশ কজন সম্ভাবনাময় তরুণকে তারা তুলে আনে নিজেদের খেলোয়াড় তৈরির আঁতুড়ঘর লা মাসিয়া থেকেই।
যাঁদের বেশ কজন এখন বিভিন্ন পজিশনে বার্সাকে দারুণ দৃঢ়তা এনে দিয়েছেন। এই মুহূর্তে যে তরুণেরা বার্সাকে নতুন ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন, তাঁরা হলেন লামিনে ইয়ামাল, পাউ কুবরেসি, আলেহান্দ্রো বালদে, মার্ক কাসাদো, পেদ্রি ও ফেরমিন লোপেজ।
লামিনে ইয়ামাল
উইঙ্গার, ১৭ বছর
বয়স এখনো ১৭ পেরোয়নি, এরই মধ্যে নিজেকে বিশ্বসেরা তারকাদের একজন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন লামিনে ইয়ামাল। অভিষেকের পর থেকে মাঠে নেমে প্রায় প্রতিনিয়ত নিজের জাদু দেখিয়ে চলেছেন এই উইঙ্গার। সর্বশেষ এল ক্লাসিকোতে রিয়াল মাদ্রিদকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পথেও খেলেছেন দুর্দান্ত ফুটবল। গোল করে ভেঙেছেন ক্লাসিকোয় সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতার রেকর্ডও।
খেলার ধরন এবং ম্যাচের ওপর প্রভাবের কারণে অনেকে তাঁকে লিওনেল মেসির সঙ্গেও তুলনা করতে শুরু করেছেন। এমনকি ক্লাসিকোর পর রিয়ালের এক সমর্থককে আক্ষেপ করে বলতে শোনা যায়, ‘ইশ, সে যদি রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে খেলত।’ এমন একজন ফুটবলারকে খেলানোর স্বপ্ন তো অবশ্য যেকোনো ক্লাবই দেখে। যদিও বাস্তবতা বলছে ভবিষ্যতে বার্সার দিনবদলের অন্যতম সারথি হতে যাচ্ছেন লা মাসিয়া থেকে উঠে আসা এই স্প্যানিয়ার্ড।
পাউ কুবারসি
সেন্টার ব্যাক, ১৭ বছর
বার্নাব্যুতে রিয়ালকে অফসাইডের ফাঁদে আটকে দেওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন বার্সা সেন্টারব্যাক পাউ কুবারসি। বয়স মাত্র ১৭ বছর হলেও রক্ষণে এরই মধ্যে দারুণ পরিপক্বতা দেখাচ্ছেন কুবারসি। বিশেষত ফরাসি তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পেকে অফসাইডে বোতলবন্দী করে রাখার ক্ষেত্রে কুবারসি দারুণ বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন। শুধু এই ম্যাচেই নয়, গত মৌসুমে পেশাদার ফুটবলে যাত্রা শুরুর পর থেকেই কুবারসি নিজের জাত চেনাচ্ছেন। সামনের দিনেও বার্সার রক্ষণে অতন্দ্র হিসেবে বড় দায়িত্ব থাকবে তাঁর কাঁধে।
আলেহান্দ্রো বালদে
লেফট ব্যাক, ২১ বছর
ইয়ামাল ও কুবারসির তুলনায় বয়সটা একটু বেশিই। অথচ এরপরও আলেহান্দ্রো বালদের বয়স মাত্র ২১। বার্সার হয়ে যখনই দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়েছেন নিজের সেরাটা উজাড় করে দিয়েছেন। এল ক্লাসিকোতেও নিজের কাজটা ঠিকঠাক সম্পন্ন করেছে এই লেফটব্যাক।
রক্ষণ সামলানোর পাশাপাশি আক্রমণেও দারুণভাবে ভূমিকা রাখতে পারেন এই বালদে। রিয়ালের বিপক্ষে লেভানডফস্কির দ্বিতীয় গোলটিতেও ছিল তাঁর সহায়তা। গত মৌসুমে চোটের কারণে অনেকটাই মিস করেছেন এই ডিফেন্ডার। তবে পূর্ণ ফিট বালদে কী করতে পারেন, সে প্রমাণ এরই মধ্যে দিয়েছেন। সামনের দিনেও চোখ থাকবে তাঁর ওপর।
মার্ক কাসাদো
মিডফিল্ডার, ২১ বছর
নতুন দিনের বার্সা যাদের নিয়ে স্বপ্ন দেখছে, মার্ক কাসাদো তার অন্যতম। অথচ একপর্যায়ে আস্থার অভাবে ক্লাব ছাড়তে চেয়েছিলেন এই মিডফিল্ডার। জাভি হার্নান্দেজের অধীনে সেভাবে মূল্যায়িত না হলেও ফ্লিক এসেই কাসাদোকে সামনে নিয়ে আসেন। প্রাক্–মৌসুমে ভালো করার পর চলতি মৌসুমেও প্রতিনিয়ত মুগ্ধতা ছড়াচ্ছেন কাসাদো। ক্লাসিকোয় রাফিনিয়ার গোলে সহায়তাও করেছিলেন কাসাদো। তবে মাত্র যাত্রা শুরুটা হলো বলে, এখনো যেতে হবে বহুদূর।
পেদ্রি
মিডফিল্ডার, ২১ বছর
জাভির অধীনেই নিজেকে মেলে ধরতে শুরু করেছিলেন পেদ্রি। কিন্তু এখন পেদ্রিকে ছাড়া বার্সাকে যেন কল্পনাই করা যায় না। বার্সার মিডফিল্ডে সুর বেঁধে দেওয়ার কাজটা তিনিই করেন। ২১ বছর হলেও বল পায়ে গেলে পেদ্রি যেন অনেক দিনের অভিজ্ঞ এক ফুটবলার। অভিষেকের পর থেকে দলের প্রয়োজনে অসংখ্য ম্যাচে অবদান রেখেছেন তিনি। শুরুতে অবশ্য তাঁকে নিয়ে শঙ্কা ছিল অনেক। কত দূর ভালো করতে পারবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন অনেকেই। পারফরম্যান্স দিয়েই অবশ্য সেসবের জবাব দিয়েছেন পেদ্রি। রিয়ালের বিপক্ষে ম্যাচটিই ধরা যাক, সেদিন তাঁর চেয়ে বেশি পাস আর কোনো খেলোয়াড় সম্পন্ন করতে পারেননি। ৫৮ পাসের ৫৩টিই সম্পন্ন করেছিলেন পেদ্রি।
ফেরমিন লোপেজ
মিডফিল্ডার, ২১ বছর
এল ক্লাসিকোয় ফেরমিন লোপেজকে একাদশে রাখা নিয়ে শঙ্কা ছিল, শেষ পর্যন্ত তাঁর ওপর ভরসা রেখেছিলেন ফ্লিক। সেদিন প্রথমার্ধে পেদ্রি ও কাসাদোকে ভালোই সঙ্গে দেন লোপেজ। এরপর অবশ্য তাঁর বদলে কৌশলগত কারণে ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ংকে নামান বার্সা কোচ। সামনেও অবশ্য লোপেজকে দলে জায়গা পেতে লড়াই করতে হবে। দানি ওলমোর কাছ থেকেও মিডফিল্ডে জায়গা পাওয়া নিয়ে পেতে পারেন চ্যালেঞ্জ। তবে এরই মধ্যে যেকোনো চ্যালেঞ্জ নেওয়ার সক্ষমতা যে তাঁর আছে, সেটা বুঝিয়ে দিয়েছেন লোপেজ। পাশাপাশি আস্থাও অর্জন করেছেন ফ্লিকের। এখন শুধু ধারাবাহিকতা ধরে রেখে এগিয়ে যাওয়ার অপেক্ষা।