৯০ মিনিট গোলশূন্য। যোগ হওয়া সময় দেওয়া হলো ৮ মিনিট। এই সময়টুকু কাটিয়ে দিতে পারলে অন্তত ড্রয়ের তৃপ্তি নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারত বাংলাদেশ। কিন্তু তা আর হলো না। ৯৪ মিনিটে গোল করে নাটকীয়ভাবে ১-০ ব্যবধানে ম্যাচ জিতে নিয়েছে ফিলিস্তিন।
২১ মার্চ কুয়েতের মাঠে ফিলিস্তিনের কাছে প্রথম লেগে উড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। দেশে ফিরতে হয়েছে ৫-০ গোলের ভারী বোঝা নিয়ে। পাঁচ দিনের মধ্যে আজ ড্রয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েই শেষ রক্ষা হলো না।
গত ২১ নভেম্বর কিংস অ্যারেনাতেই বিশ্বকাপ বাছাইয়ে লেবাননের সঙ্গে ড্রয়ের তৃপ্তি নিয়ে মাঠ ছেড়েছিল স্বাগতিকেরা। এবার ড্রয়ের তৃপ্তি পেতে পেতেও পাওয়া হলো না। কিংস অ্যারেনায় ৫ম ম্যাচে এসে এই প্রথম হেরেছে বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশ পয়েন্ট পেতেই পারত এই ম্যাচ থেকে। কিন্তু গোলের সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি।
চোট নিয়ে ৮৩ মিনিটে মাঠ ছাড়ার আগপর্যন্ত গোলকিপার মিতুল মারমা পোস্টের নিচে ছিলেন আস্থার প্রতীক। কোনোভাবেই তাঁকে পরাস্ত করতে পারেনি ফিলিস্তিন। তাঁর বদলি হিসেবে আসেন মেহেদী হাসান। তবে একমাত্র গোলটির জন্য মেহেদীর চেয়ে দায় বেশি ডিফেন্ডারদেরই। গোল পাওয়ার আগপর্যন্ত চেষ্টা করে গেছে ফিলিস্তিন। বাংলাদেশের বিপক্ষে আগের ম্যাচে হ্যাটট্রিক করা ফরোয়ার্ড ওদে দাবাঘের হেড ৫৭ মিনিটে দারুণভাবে ফিরিয়েছেন মিতুল।
এই দাবাঘই ৪৮ মিনিট নিশ্চিত গোলের সুযোগ হারিয়েছেন। সেন্টার ব্যাক শাকিল বল দেন গোলকিপার মিতুল মারমাকে। সেই বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে চলে যায় ওদে দাবাঘের পায়ে। শাকিল ও মিতুলকে কাটিয়ে দাবাঘ পোস্টে শট নেওয়ার জায়গা বানানোর চেষ্টা করছিলেন। একটু ঘুরে জায়গা তৈরিও করে ফেলেন। বাঁ পায়ে আলতো করে বল প্লেসিংও করেন। কিন্তু বলটা পোস্টে বাতাস লাগিয়ে যায় বাইরে। বেঁচে যায় বাংলাদেশ।
কিন্তু অতিরিক্ত সময়ে শেষ রক্ষা হলো না। ফিলিস্তিন ডিফেন্ডার মুসাবের ক্রসে বদলি নামা ইসলাম বারতানের হেড থেকে বল পান ডিফেন্ডার মিচেল তারমানিনি। তাঁর প্লেসিংয়ে সহজেই ১-০।
ফিলিস্তিন দল প্রথমার্ধে সেভাবে সহজ সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। তবে চেষ্টা করেছে তারা। বাংলাদেশের ডিফেন্সিভ থার্ডে বেশ কিছু পাস খেলে গোলে শট নেওয়ার রাস্তার তৈরি করেছে। দু-একবার শটও নিয়েছে। কিন্তু মিতুল মারমা ছিলেন প্রস্তুত। এই অর্ধে মিতুল দুটি ভালো সেভ করেছেন।
৪৪ মিনিট জামাল ভূঁইয়ার থ্রু থেকে গোল করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু তা কাজে লাগাতে পারেননি ফয়সাল আহমেদ ফাহিম। তাঁর শট লাগে আগুয়ান গোলকিপারের গায়ে। এই আক্রমণ ছাড়াও বাংলাদেশ আরও অন্তত চার-পাঁচবার বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। কিন্তু তা থেকে গোল আদায় করা যায়নি। একবার ফয়সাল আহমেদের প্লেসিং যায় বাইরে। ফয়সাল আরেকটু বিচক্ষণ হতে পারলে গোল আসা অসম্ভব ছিল না। এ ছাড়া অধিনায়ক জামালের দুটি ফ্রি-কিক গেছে বাইরে। দ্বিতীয়ার্ধেও একইভাবে আক্রমণে এসেছে বাংলাদেশ। কিন্তু তাতে কী, গোল তো করতে হবে। সেই গোলের দেখা আর পাওয়া হয়নি।
২১ মার্চ ফিলিস্তিনের বিপক্ষে কুয়েতের ম্যাচে হাভিয়ের কাবরেরার একাদশ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। সেদিন তপু বর্মণের সঙ্গে প্রথাগত সেন্টার ব্যাক ছিলেন না। রাইট ব্যাক বিশ্বনাথ ঘোষকে রাখা হয় সেন্টার ব্যাক হিসেবে। ওই ম্যাচে বাংলাদেশ ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছে। এবার আর ভুল করেননি বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। ফিলিস্তিনের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ফিরতি ম্যাচের একাদশে দুটি পরিবর্তন এনেছেন। সেন্টারব্যাকে তপু বর্মণের সঙ্গে রেখেছেন প্রথাগত আরেক সেন্টার ব্যাক শাকিল হোসেনকে।
মাঝমাঠে আনা হয় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন। কার্ডের নিষেধাজ্ঞায় আগের ম্যাচে সিনিয়র সোহেল রানা ছিলেন না। আজ তিনি ফিরেছেন জুনিয়র সোহেল রানার জায়গায়। কুয়েতের ম্যাচে বাংলাদেশের সেরা গোলের সুযোগটা নষ্ট করেন জুনিয়র সোহেল রানাই। আজ তাঁকে বাইরে রেখে অভিজ্ঞ সোহেল রানাকে বেছে নিয়েছেন কোচ। সবই ঠিক ছিল, কিন্তু শেষটা ভালো হলো না বাংলাদেশর। ফিলিস্তিনের কাছে টানা সপ্তম ম্যাচ হারতে হয়েছে। দুই দলের প্রথম ম্যাচটাই শুধু ড্র হয়েছিল, সেটিও সেই ২০০৬ সালে।